শিরোনাম
লাদাখে সংঘর্ষের পর থেকে ভারত-চীনের সম্পর্ক এখন খুবই খারাপ অবস্থায় রয়েছে। গত দুই বছরের বেশি সময় ধরে চীনের কোনো বড় নেতা ভারত সফর করেননি। এমন পরিস্থিতিতে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই হুট করেই ভারতে এলেন। তিনি ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর এবং নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের সঙ্গে বৈঠক করবেন।
চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরের সময়টাও খুব তাৎপর্যপূর্ণ। রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ব এখন কার্যত দুই ভাগে বিভক্ত। আমেরিকা, ইউরোপের অধিকাংশ দেশ ইউক্রেনের পক্ষে। এশিয়ার অনেক দেশও ইউক্রেনের দিকেই ঝুঁকে। কিন্তু ভারত ও চীন এখনো প্রকাশ্যে রাশিয়ার বিরোধিতা করেনি। জাতিসংঘে রাশিয়া নিয়ে যতবার ভোটাভুটি হয়েছে, ততবারই ভারত ও চীন ভোটদানে বিরত থেকেছে। এমন পরিস্থিতিতে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ভারত সফর খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
ভারতীয় সংবাদসংস্থা পিটিআই জানাচ্ছে, ওয়াং-এর সফরের দুইটি উদ্দেশ্য আছে। প্রথমত, লাদাখ-পরবর্তী সময়ে আবার দুই দেশের নেতৃত্বের মধ্যে আলোচনা শুরু করা এবং দ্বিতীয় উদ্দেশ্য হলো, এই বছরের শেষে ব্রিকস-এর বৈঠক হবে বেইজিংয়ে। সেখানে যাওয়ার জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদীকে আমন্ত্রণ জানানো।
চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই সফর নিয়ে আগাগোড়া গোপনীয়তা বজায় ছিল। গত সপ্তাহে সাপ্তাহিক সাংবাদিক সম্মেলনে এই বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচী জানিয়েছিলেন, তার কাছে কোনো খবর নেই।
বৃহস্পতিবারও একইরকম গোপনীয়তা বজায় রাখা হয়েছিল। চীনের পররষ্ট্রমন্ত্রী দিল্লিতে নামার পর জানা যায়, তিনি ভারতে এসেছেন।
বেইজিং থেকেও জানানো হয়নি যে ওয়াং ভারতে আসবেন। দিল্লিও কখনো বলেনি, চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভারতে আসছেন।
জয়শঙ্করের বক্তব্য
বৃহস্পতিবার দিল্লির সেন্ট স্টিফেন্স কলেজে একটি অনুষ্ঠানে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর বলেছেন, ‘খুব কম মানুষই ভাবতে পেরেছিলেন, গত দুই বছরে ভারত ও চীনের সম্পর্ক এই জায়গায় পৌঁছাবে। এমন পরিস্থিতিতে ভারতের কূটনীতিকদের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ হলো, সম্ভাব্য সব বিকল্পের কথা ভেবে তৈরি হওয়া’। জয়শঙ্করের মতে, ‘এর মধ্যে সামরিক শক্তি বাড়ানোর বিকল্প আছে, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে আমাদের নীতিকে বোঝাবার দায়িত্ব আছে। সংঘাত মেটানোর জন্য পদক্ষেপও আছে’।
জয়শঙ্কর বলেছেন, ‘চীনের ক্ষেত্রে ২০২০ সালের মে মাস থেকে সামরিক ক্ষেত্রে দূরত্ব যেমন আছে, তেমনই কূটনৈতিক পর্যায়ে আলোচনাও চলছে। এক্ষেত্রেও বিশ্বের বাকি দেশগুলোর সমর্থন এবং আমাদের নীতি যাতে তারা বোঝে সেই বিষয়টা গুরুত্বপূর্ণ’।
কাশ্মীর নিয়ে বিরোধ
পাকিস্তানে অর্গানাইজেশন অফ ইসলামিক কোঅপারেশনের বৈঠকে প্রধান বক্তা ছিলেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই। সেখানে তিনি বলেছেন, ‘কাশ্মীর নিয়ে ইসলামিক দেশের বন্ধুদের আশঙ্কার কথা আমরা শুনতে পাচ্ছি’।
এরপরই ভারত ওয়াংয়ের মন্তব্যের বিরোধিতা করে দুইটি বিবৃতি দেয়। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচী জানিয়েছেন, কাশ্মীর ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ। কাশ্মীর নিয়ে আলোচনা হলো ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ। অন্য কোনো দেশের এ বিষয়ে কথা বলার বা আলোচনা করার সুযোগ নেই। অধিকারও নেই। পাকিস্তানে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী যেভাবে কাশ্মীরের প্রসঙ্গ তুলেছেন, তার তীব্র বিরোধিতা করেছে ভারত।
সূত্র: দেশ রূপান্তর