শিরোনাম
ইউক্রেন ইস্যুতে কথিত ‘নিরপেক্ষ’ অবস্থান বজায় রেখেছে ভারত। সহিংসতা না বাড়িয়ে উভয় পক্ষকেই আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপ্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়েছে দেশটি।
তথ্যসূত্র বলছে, জাতিসংঘে রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিন্দাপ্রস্তাবেও ভোট দেয়নি ভারত। বরং পশ্চিমা হুমকি উপেক্ষা করে কম দামে রুশ তেল কেনার ঘোষণা দিয়েছে নয়াদিল্লি। কেন্দ্রীয় সরকারের মতো ভারতের ডানপন্থি দলগুলোর মধ্যেও মস্কোর প্রতি সমর্থন ক্রমেই বাড়ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে ক্ষণে ক্ষণে ট্রেন্ডিং হয়ে উঠছে পুতিন-বন্দনা।
ডয়েচে ভেলের খবর অনুসারে, ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনকে সমর্থন জানিয়ে সম্প্রতি সমাবেশের আয়োজন করেছিল ডানপন্থি সংগঠন হিন্দু সেনা। চলতি মাসের শুরুতে নয়াদিল্লিতে ঘণ্টাখানেক মিছিল করে তারা। সেখানে অনেকের পোস্টারে লেখা ছিল, ‘রাশিয়া লড়ে যাও, আমরা পাশে আছি’, ‘রুশ-ভারতীয় ঐক্য দীর্ঘজীবী হোক’ কিংবা ‘অবিভক্ত রাশিয়া’।
হিন্দু সেনা ছোট একটি রাজনৈতিক দল হলেও ভারতের ১৬টি রাজ্যে তাদের শাখা রয়েছে। তারা দাবি করেছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দলটির অনুসারী রয়েছে প্রায় ১০ লাখ।
হিন্দুসেনার সভাপতি বিষ্ণু গুপ্তা বলেন, রাশিয়া ভারতের প্রকৃত বন্ধু। ইউক্রেন সবসময় পাকিস্তানকে সমর্থন করে। আমাদের পরমাণু প্রকল্পের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছিল ইউক্রেন। এখন ভারতের উচিত রাশিয়ার পাশে থাকা।
কিছু ভারতীয় রাশিয়ার পক্ষে কেন
ইউক্রেনের সাধারণ মানুষের প্রতি সহানুভূতি রয়েছে কলেজছাত্রী রিচা কাপুরের। কিন্তু তিনি মনে করেন, পশ্চিমা শক্তিগুলোর কোনো অধিকার নেই রাশিয়ার সমালোচনা করার। এ প্রসঙ্গে আফগানিস্তানের কথা উল্লেখ করেন তিনি। রিচার মতে, এগুলো পশ্চিমাদের দ্বিচারিতা মাত্র।
মহেশ কুমার আগারওয়াল নামে এক আইনজীবী বলেন, একসময় যেগুলো সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ ছিল, তার সব অংশের নিয়ন্ত্রণ রাশিয়ার কাছেই থাকা উচিত।
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কয়েকজন ভারতীয় সমর্থক রাশিয়ার সঙ্গে ঐতিহাসিক চুক্তির কথাও স্মরণ করিয়ে দেন। বিশেষ করে, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মু্ক্তিযুদ্ধের সময় তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন ভারতকে সমর্থন দিয়েছিল বলে উল্লেখ করেছেন তারা।
জাগরণ ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড মাস কমিউনিকেশনের অধিকর্তা নলিনীরঞ্জন মোহান্তির মতে, সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে ঐতিহাসিক সম্পর্ক এবং রুশ-চীনা ঘনিষ্ঠতার আশঙ্কাও ভারতে রাশিয়ার প্রতি সমর্থন গড়ে ওঠার অন্যতম কারণ।
স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (সিপ্রি) তথ্যমতে, রাশিয়া ভারতের প্রধান অস্ত্র সরবরাহকারী। যদিও সাম্প্রতিক সময়ে তাদের রুশ অস্ত্র আমদানি কিছুটা কমেছে।
তাছাড়া, পুতিন ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর জনপ্রিয় রাজনৈতিক ভাবমূর্তির মধ্যে মিল রয়েছে। গণমাধ্যম গবেষক রাকেশ বটব্যালেল মতে, দু’জনেরই একটা মাচো-ম্যান ভাবমূর্তি রয়েছে।
ভারতে রাশিয়ার বিপক্ষে কারা
ভারতে সবাই যে রুশ আগ্রাসনের পক্ষে, তা নয়। কেউ কেউ এর প্রতিবাদেও সরব হয়েছেন। তাদের দাবি, ইউক্রেনের মতো সার্বভৌম দেশে হামলা চালানোয় রাশিয়ার সমালোচনা করুক নয়াদিল্লি।
ভারতীয় সংসদ সদস্য শশী থারুরের বক্তব্য, রাশিয়া বন্ধু রাষ্ট্র। নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ থাকতেই পারে। তাই বলে ভারতের এই নীরবতা ইউক্রেন ও তার বন্ধুরাষ্ট্রগুলোর জন্য হতাশাজনক।
এই কংগ্রেস নেতার কথায়, ভারত একদিকে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে আসনের জন্য উচ্চাকাঙ্ক্ষা পোষণ করে, অন্যদিকে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত নীতি নিয়ে পুরোপুরি নীরব। এটি ভালো দেখায় না।
কংগ্রেসের আরেক নেতা মনীশ তিওয়ারি টুইটারে লিখেছেন, ভারতের উচিত ইউক্রেনীয়দের পাশে থাকা। এই আগ্রাসন নজিরবিহীন ও অযৌক্তিক। বন্ধু ভুল করলে তা ধরিয়ে দেওয়া উচিত।