শিরোনাম
চলমান যুদ্ধে রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়তে ইউক্রেনকে অস্ত্র সহায়তা দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো। এসব অস্ত্র ব্যবহার করে ইউক্রেনের সেনাবাহিনী দেশটির বিভিন্ন স্থানে রাশিয়ার সেনাদের অগ্রযাত্রা রুখে দিচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে দেশটিতে পশ্চিমা অস্ত্র ও অস্ত্র সরবরাহের বহরকে হামলার লক্ষ্যবস্তু বানানো হতে পারে বলে জানিয়েছে রাশিয়া। রাশিয়ার উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই রায়াবকোভ এ ঘোষণা দিয়েছেন। খবর বিবিসি ও আল-জাজিরার।
স্থানীয় সময় গতকাল শনিবার রুশ রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেওয়া ভাষণে দেশটির উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বিভিন্ন দেশ থেকে ইউক্রেনে অস্ত্র পাঠানোর প্রক্রিয়াটি খুবই বিপদজনক। এটা আমরা ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রকে জানিয়েছি। সতর্ক করা হয়েছে, অস্ত্র সরবরাহের এসব বহর রুশ হামলার বৈধ লক্ষ্যবস্তু হতে পারে।’
রুশ উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ‘ইউক্রেনের সেনাদের কাঁধে বহনযোগ্য আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, ট্যাংক ধ্বংস করার ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করছে পশ্চিমারা। এসব ছোট ছোট অস্ত্রের স্থানান্তরের পরিণতি সম্পর্কে তাদের সতর্ক করা হয়েছে। তবে ওয়াশিংটন এ সতর্কতা খুব একটা আমলে নেয়নি বলেই মনে হচ্ছে।’
এ সময় সের্গেই রায়াবকোভ জানান, ইউক্রেনের পরিস্থিতি নিয়ে মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করছে না রাশিয়া।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সর্বাত্মক হামলা শুরু করেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। রাশিয়ার দাবি, ইউক্রেন দখল করার ইচ্ছা ক্রেমলিনের নেই। দেশটিকে নিরস্ত্রীকরণ করতে ও নাৎসিবাদের বিস্তার রুখতে হামলা চালানো হয়েছে। ইতিমধ্যে ইউক্রেনের কয়েকটি শহরের দখল নিয়েছে রাশিয়ার সেনারা।
ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের খুব কাছে পৌঁছে গেছে রাশিয়ার বিশাল সেনাবহর। রুশ সেনারা কিয়েভে সর্বাত্মক হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে সতর্ক করেছেন ইউক্রেনের কর্মকর্তারা। তাঁরা বলছেন, কিয়েভে হামলার জন্য প্রয়োজনীয় যুদ্ধসরঞ্জাম জড়ো করা শুরু করেছে রুশ বাহিনী। এ বহরে ট্যাংক ও সাঁজোয়া যান রয়েছে। তাদের বেলারুশ থেকে চেরনোবিল হয়ে জ্বালানিসহ প্রয়োজনীয় রসদ সরবরাহ করা হচ্ছে।
রুশ সেনাদের প্রতিহত করতে পশ্চিমাদের কাছে অস্ত্র সহায়তা চেয়ে বারবার আবেদন করছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। এতে সাড়া দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানিসহ বিভিন্ন দেশ ইউক্রেনকে অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম জোগান দিচ্ছে। রাশিয়াকে বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন করতে দেশটির বিরুদ্ধে একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে চলেছে পশ্চিমারা। হামলা শুরুর ১৩ দিনে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ২ হাজার ৭৭৮টি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এ নিয়ে রাশিয়ার বিরুদ্ধে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার সংখ্যা সাড়ে ৫ হাজার ছাড়িয়েছে।
এদিকে রাশিয়ার হামলায় ইউক্রেনের প্রায় ১ হাজার ৩০০ সেনা নিহত হয়েছেন বলে গতকাল শনিবার জানিয়েছেন জেলেনস্কি। হামলায় ইউক্রেনের সেনা সদস্যদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষেরও প্রাণহানি হচ্ছে। জাতিসংঘের তথ্যমতে এখন পর্যন্ত ইউক্রেনে অন্তত ১ হাজার ৫৪৬ জন বেসামরিক নাগরিক হতাহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে প্রাণ হারিয়েছেন ৫৬৪ জন। হতাহতের এই সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে বলে মনে করছে জাতিসংঘ।
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) গত শুক্রবার জানিয়েছে, ইউক্রেনে হামলা শুরুর পর এ পর্যন্ত ২৫ লাখের বেশি মানুষ ইউক্রেন ছেড়েছেন। ৮ মার্চ জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্রান্ডি জানিয়েছিলেন, ওই দিন পর্যন্ত ২০ লাখ মানুষ ইউক্রেন ছেড়েছেন।