শিরোনাম
আন্তর্জাতিক বিশ্বে এখন আলোচনার কেন্দ্রে ইউক্রেন-রাশিয়া চলমান যুদ্ধ পরিস্থিতি। প্রতি মুহূর্তের খবরে চোখ বিশ্ববাসীর। ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার সামরিক অভিযানের ১৬ দিন পার হলো। কিন্তু এখনো ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ দখলে নিতে পারেনি রুশ সেনারা। এতে ভাবনার সঙ্গে বাস্তবতার বেশ অমিল পাচ্ছেন বিশ্লেষকেরা। উল্টো এখন বলা হচ্ছে, দিন যত গড়াচ্ছে ইউক্রেনীয়দের মনোবল নাকি আরও চাঙ্গা হচ্ছে।
যুদ্ধ শুরুর দিনগুলোতে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র ও শক্তিশালী বোমা হামলায় ইউক্রেনে বসবাসরত সাধারণ মানুষসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের মধ্যে মারাত্মক ভীতি ছড়িয়ে পড়ে। অনেকে হতাহতও হন। ভয়াবহ যুদ্ধে প্রাণহানির শঙ্কায় ইউক্রেনে অবস্থানরত ভিনদেশি নাগরিকরা পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর সীমান্ত দিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছুটতে থাকেন। তবে রুশ আগ্রাসনের শুরু থেকেই প্রতিরোধী মনোভাব দেখায় ইউক্রেনীয়রা। মাতৃভূমিকে ভালবেসে নিজ দেশ আঁকড়ে পড়ে থাকে তারা। একইসঙ্গে যতটা সম্ভব রুশ সেনাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে দেশটির সাধারণ নাগরিকেরা।
রাশিয়ার সেনাদের হামলার মুখে অনেকে প্রাণ দিয়েছেন, কিন্তু দেশ ছেড়ে যাননি। ১৮ বছরের যুবক থেকে ৬০ বছর বয়সী পর্যন্ত অনেকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ নিতে ইউক্রেন সেনাবাহিনীতে নাম লিখিয়েছে। অপেক্ষাকৃত তরুণরা অনেকে বাবা-মায়ের নিষেধ সত্ত্বেও ছুটে গেছে যুদ্ধ ময়দানে। অনেকের ধারণা ছিল রাশিয়া খুব অল্প সময়েই কিয়েভসহ অন্যান্য শহর দখলে নেবে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আরও প্রতিরোধী হয়ে উঠছে ইউক্রেনীয়রা। জন্মভূমির হয়ে যুদ্ধে শামিল হতে বিভিন্ন দেশে বসবাসকারী ইউক্রেনীয় ও অন্যান্য আরও অনেক দেশের নাগারিকরা ইউক্রেনে আসছেন।
বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত প্রবাসী ইউক্রেনের নাগরিক হাবিবুর রহমান হাবিব। রাজধানী ঢাকার অদূরে গাজীপুরের বাসিন্দা হাবিব গত ৩০ বছর ধরে কিয়েভে বসবাস করছেন। যুদ্ধ শুরুর দিন থেকে তার এক ছেলে রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করতে যুদ্ধে গেছেন। প্রায় ষাট ছুঁই ছুঁই হাবিব শত প্রতিকূলতায়ও দেশ ছেড়ে পালাননি।
এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে হাবিব বলেন, যুদ্ধ শুরুর দিন থেকেই সময়-সুযোগ পেলে ঘরের বাইরে বেরিয়ে কিয়েভের পরিস্থিতি দেখেন। প্রথমদিকে ঘন ঘন শক্তিশালী বোমা বিস্ফোরণের শব্দে কেঁপে উঠতেন, সাইরেনের শব্দ শুনে আত্মরক্ষার্থে মাটির নিচে ব্যাংকারে লুকিয়ে থাকতেন। প্রথম দিকে বড় বড় শপিংমল ও মার্কেটগুলোতে গিয়ে কোনো পণ্য কিনতে পারেননি। ভয়ে আতঙ্কে সবাই বেশি বেশি খাদ্য ও মালামাল কিনে নেওয়ায় প্রতিটি দোকানপাট পণ্যশূন্য হয়ে পড়ে। টাকা নিয়ে শহর ঘুরেও একটি রুটি কিনতে না পারার দৃশ্যও দেখেছেন। কিন্তু দিন যত গড়াচ্ছে কিয়েভের বাসিন্দাদের মনোবল তত চাঙ্গা হচ্ছে। বিভিন্ন দেশ থেকে মার্কেটগুলোতে খাদ্য, শীতবস্ত্র ও অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী আসছে।
তার ভাষ্য, কিয়েভের বাসিন্দাদের মধ্যে এখনো যুদ্ধ ভয়ের লেশমাত্র নেই। সবার মধ্যে সাহসী মনোভাব। অনেকেই নির্ভয়ে শহরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। বিভিন্ন মার্কেটে ন্যূনতম দামে মালামাল বিক্রি হচ্ছে। অনেক ধনাঢ্য ব্যক্তি বিভিন্ন মার্কেটে বিনামূল্যে অপেক্ষাকৃত দরিদ্রদের মধ্যে শীতের পোশাক বিতরণ করছে। কেউ কেউ লঙ্গরখানা খুলে বিনামূল্যে খাবার বিতরণ করছেন।
বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত এ প্রবাসীর কথায়- রাশিয়া মনে করেছিল খুব সহজেই ইউক্রেন দখল করে নেবে। কিন্তু ইউক্রেনের কাছে রাশিয়ার ব্যবহার করা মিসাইল ও ট্যাংক ধ্বংসকারী ডিভাইস রয়েছে, তা হয়তো ঘুণাক্ষরেও কল্পনা করতে পারেনি মস্কো। বর্তমানে ইউক্রেনে প্রচণ্ড শীত। রাতের বেলা মাইনাস ৭ থেকে ৮ ডিগ্রি ও দিনের বেলায় মাইনাস ৩ থেকে ৪ ডিগ্রি থাকছে। এমন শীতের মধ্যে অচেনা দেশে যুদ্ধে এসে সুবিধা করতে পারছে না রুশ সৈন্যরা। ইউক্রেন সেনাদের সঙ্গে যুদ্ধে হাজার হাজার রাশিয়ান সৈন্য হতাহত হচ্ছে। যুদ্ধভূমিতে খাবার ফুরিয়ে আসছে তাদের। কেউ কেউ ইউক্রেনের সেনাদের কাছে আত্মসমর্পণ করছেন।
হাবিব বলেন, যুদ্ধ কোনো দেশের জন্যই মঙ্গলকর নয়। ইউক্রেন ও রাশিয়ার যুদ্ধে দুদেশের অর্থনীতিই ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হচেছ। যুদ্ধের কারণে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে তেলসহ পণ্যের দাম বাড়ছে। বেশিদিন যুদ্ধ চললে এর ক্ষতিকর প্রভাব বিভিন্ন দেশে পড়বে। যুদ্ধের পরোক্ষ মাসুল গোটা পৃথিবীকে দিতে হবে।