শিরোনাম
গম, ভুট্টা, চিনি, লবণ, মাংসসহ প্রধান কৃষিপণ্য রপ্তানি নিষিদ্ধ করেছে ইউক্রেন সরকার। দেশটির মন্ত্রিসভায় সম্প্রতি এ সংক্রান্ত একটি আইন পাশ করা হয়েছে। খবর রয়টার্স ও দ্য গার্ডিয়ানের।
নতুন আইন অনুযায়ী, ইউক্রেন থেকে ওটস, বাজরা, চিনি, লবণ, গম, মাংস, গবাদিপশু এবং এ থেকে তৈরিকৃত পণ্য এখন থেকে রপ্তানি নিষিদ্ধ। মন্ত্রিপরিষদের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এটি আসলে একটি রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা।
ইউক্রেনের কৃষি নীতি ও খাদ্যমন্ত্রী রোমান লেশচেঙ্কো বলেছেন, ইউক্রেনে মানবিক সংকট প্রতিরোধ, বাজার স্থিতিশীল রাখা এবং জনগণের চাহিদা মেটাতে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ইউরোপের অন্যতম বৃহত্তম কৃষি পণ্য সরবরাহকারী দেশ ইউক্রেন। কৃষি তথ্য বিশ্লেষণ সংস্থা গ্রো ইন্টেলিজেন্সের তথ্য অনুযায়ী, রাশিয়া এবং ইউক্রেন বিশ্বব্যাপী প্রায় ৩০ শতাংশ গম রপ্তানি করে। রাশিয়া ও ইউক্রেন একসময় ‘ইউরোপের রুটির ঝুড়ি’ আখ্যা পেয়েছিল। বিশ্বের প্রায় এক-চতুর্থাংশ গম ও অর্ধেক সূর্যমুখীজাত পণ্য রপ্তানি করে এই দুই দেশ। আর ইউক্রেন প্রচুর ভুট্টা রপ্তানি করে।
বিশ্লেষকেরা সতর্ক করেছেন, যুদ্ধের ফলে শস্য উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী গমের দাম দ্বিগুণ হতে পারে। জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির প্রধান ডেভিড বিসলে বলেছেন, বিশ্ব সম্প্রদায়ের শঙ্কিত হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। ইউক্রেন সংকটের জেরে বিশ্বব্যাপী খাদ্যমূল্য আকাশ ছুঁতে পারে। অবস্থাপন্ন মানুষের জন্য তা বিশেষ উদ্বেগের না হলেও দরিদ্র মানুষের জীবনে বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। সমস্যা হচ্ছে বিবদমান দুই দেশ, অর্থাৎ ইউক্রেন ও রাশিয়া উভয়ই মৌলিক খাদ্যসামগ্রী রপ্তানিকারক। যুদ্ধের কারণে স্বাভাবিকভাবেই খাদ্য রপ্তানিতে প্রভাব পড়েছে। ইতিমধ্যে ফসল উৎপাদন ব্যাহত হতে শুরু করেছে, বেড়েছে দাম। তিনি বলেন, যেসব দেশ কৃষ্ণসাগর অঞ্চল থেকে শস্যের বড় অংশ আমদানি করে, চলমান সংকটের প্রভাব তাদের ওপরই বেশি পড়বে। এ প্রসঙ্গে লেবাননের কথা উল্লেখ করেন তিনি। দেশটি যত খাদ্যশস্য আমদানি করে, তার অর্ধেকই ইউক্রেন থেকে। এই তালিকায় আরও আছে যুদ্ধবিধ্বস্ত ইয়েমেন, সিরিয়া ও তিউনিসিয়া। এ তালিকা আরও দীর্ঘ করা সম্ভব। যুদ্ধবিধ্বস্ত ইয়েমেন ও সিরিয়া এখন খাদ্য আমদানি করতে না পারলে নতুন করে বিপর্যয়ের মুখে পড়বে।
এদিকে বাংলাদেশে গমের চাহিদার একটি বড় অংশ পূরণ করা হয় রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে আমদানি করে। রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা চালানোর পর এ দুই উৎস থেকেই গম আমদানি নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে, রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে ২০২০-২১ অর্থবছরে ৮০ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি হয়, যার মধ্যে বেশির ভাগই ছিল গম। এ ছাড়া মটর ডাল, সরিষা, পুরোনো লোহার টুকরা, সয়াবিন দানা ও রাসায়নিক আমদানি হয় দেশটি থেকে। চলতি অর্থবছরে (২০২১-২২) চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ৫৪ লাখ ৫৫ হাজার টন গম আমদানি হয়।