খোলা চিঠিতে ইউক্রেনের ফার্স্ট লেডি ওলেনা জেলেনস্কার বুকফাটা আর্তনাদ

ফানাম নিউজ
  ০৯ মার্চ ২০২২, ১৭:২১

ইউক্রেনের ফার্স্ট লেডি ওলেনা জেলেনস্কা শিশুসহ বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গণহত্যা চালানোর দায়ে রাশিয়ার নিন্দা জানিয়ে বিশ্ব গণমাধ্যমের উদ্দেশ্যে রুশ আগ্রাসনের ব্যাপারে এক খোলা চিঠি লিখেছেন। গতকাল মঙ্গলবার (৮মার্চ) তিনি তার স্বামী ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির ওয়েবসাইটে এই খোলা চিঠি প্রকাশ করেন।

আবেগঘন সেই চিঠিতে ওলেনা জেলেনস্কা বলেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন তার জন্য বিশ্বাস করাই অসম্ভব হয়ে পড়েছে।

তিনি বলেন যে, ‘এই আগ্রাসন ‘বিশ্বাস করা অসম্ভব। আমাদের দেশ শান্তিপূর্ণ ছিল; আমাদের নগর, শহর এবং গ্রামগুলো জীবনে পূর্ণ ছিল’।

তিনি বলেন রাশিয়া এই হামলাকে ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ বললেও ‘এটি আসলে, ইউক্রেনীয় বেসামরিক মানুষদের ওপর গণহত্যা’।

ওলেনা লিখেছেন, ‘২৪ ফেব্রুয়ারি আমরা রাশিয়ার আগ্রাসনের ঘোষণায় জেগে উঠলাম। ট্যাংকগুলো ইউক্রেনীয় সীমান্ত পার হলো, আমাদের আকাশসীমায় বিমানগুলো ঢুকলো, ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণকারী যানগুলো আমাদের শহর ঘিরে ফেলল’।

‘ক্রেমলিন সমর্থিত প্রচারণা চালানো গণমাধ্যমের আশ্বাস সত্ত্বেও এখন ইউক্রেনীয়দের গণহত্যা করা হচ্ছে’।

রাশিয়ার হামলায় ইউক্রেনীয় শিশুদের প্রাণহানির ঘটনায় হৃদয় ভেঙে যাচ্ছে ফার্স্ট লেডি ওলেনার। বিশ্ব গণমাধ্যমের কাছে লেখা খোলা চিঠিতে তিনি নিহত কয়েকজন ইউক্রেনীয় শিশুর নাম উল্লেখ করেছেন।

ফার্স্ট লেডি লিখেছেন, ‘৮ বছরের এলিস...সড়কেই মারা গেল। তার দাদা তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছিল। কিয়েভের পলিনা.... গোলার আঘাতে বাবা-মার সাথেই মারা গেল’।

তিনি বলেছেন, ‘১৪ বছর বয়সী আর্সেনির মাথায় ধ্বংসাবশেষ আঘাত করেছিল। তাকেও বাঁচানো যায়নি। তীব্র গোলাবর্ষণের কারণে অ্যাম্বুলেন্স সময় মতো তার কাছে পৌঁছাতে পারেনি’।

‘রাশিয়া যখন বলছে যে, তারা বেসামরিকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে না, তখন আমি হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়া এই শিশুদের নাম বলছি’, বলেন তিনি।

জেলেনস্কার তার স্বামীর পরিচালিত কমেডি প্রযোজনা সংস্থার জন্য বিভিন্ন সময়ে স্ক্রিপ্ট লেখার অভিজ্ঞতা রয়েছে। ইউক্রেনের এই ফার্স্ট লেডি সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে রাশিয়ার সামরিক আক্রমণে লাখ লাখ মানুষের দেশ ছেড়ে যাওয়া এবং বেসামরিক মানুষদের ভোগান্তির চিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন এই খোলা চিঠিতে।

তিনি লিখেছেন, এই যুদ্ধ বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে চালানো হচ্ছে। আর এটি কেবলমাত্র গোলাবর্ষণের মধ্যেই সীমিত নেই। জেলেনস্কা বলেছেন, আমাদের সড়কগুলো শরণার্থীতে ভরে গেছে।

‘এই ক্লান্ত নারী এবং শিশুদের চোখের দিকে তাকিয়ে দেখুন, যারা তাদের প্রিয়জনকে ছেড়ে যাওয়ার ব্যথা এবং হৃদয়ের বেদনা সঙ্গী করে দেশ ছাড়ছেন’।

জরুরি চিকিৎসা পেতে মানুষ সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে, সেই বিষয়টির কথা উল্লেখ করে জেলেনস্কা লিখেছেন, বেইজমেন্টে কারও শরীরে ইনসুলিন দেওয়া অথবা ভারী গোলাবর্ষণের মাঝে শ্বাসকষ্টের ওষুধ নেওয়াটা কী সহজ?

‘হাজার হাজার ক্যানসার রোগীর কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যাদের কেমোথেরাপি এবং রেডিয়েশন চিকিৎসার প্রয়োজনীয় সুযোগ অনির্দিষ্টকালের জন্য বিলম্বিত হয়েছে’।

ইউরোপের বিভিন্ন দেশে যারা ক্ষমতায় আছেন তাদের প্রতি ইউক্রেনের আকাশ বন্ধ করার ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন জেলেনস্কা। তিনি বলেন, ‘আকাশ বন্ধ করুন, মাটির যুদ্ধ আমরা নিজেরাই করতে পারব’।

যদিও পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটো ইউক্রেনের নো-ফ্লাই জোন বাস্তবায়নের আহ্বান নাকচ করে দিয়েছে।

এই ফার্স্ট লেডি মিডিয়াকে ‘সত্য দেখানোর জন্য’ অনুরোধ করে তার চিঠি শেষ করেন।

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা যদি পুতিনকে থামাতে না পারি, যিনি পারমাণবিক যুদ্ধ শুরু করার হুমকি দিয়েছেন, তাহলে আমাদের কারও জন্য পৃথিবীতে কোন নিরাপদ স্থান থাকবে না। আমরা জিতব। আমাদের ঐক্যের কারণে। ইউক্রেনের প্রতি ভালবাসার প্রতি ঐক্য’।

মিসেস জেলেনস্কা একজন সাবেক চিত্রনাট্যকার এবং দেশ-বিদেশে তার বেশ খ্যাতি রয়েছে। তিনি তার স্বামীর সঙ্গে বেশ কয়েকটি বিদেশ সফরে গেছেন।

তিনি ইউক্রেনে ভাল স্কুলের খাবারের প্রচারণার জন্য এবং বিশ্বজুড়ে ইউক্রেনীয় ভাষার প্রসারকে উৎসাহিত করার জন্য সবচেয়ে বেশি পরিচিতি।

জেলেনস্কি রাশিয়া হামলার শুরুতেই বলেছিলেন যে, তিনি রাশিয়ার ‘এক নম্বর টার্গেট’ আর তার পরিবার ‘দুই নম্বর টার্গেট’।

সূত্র: দেশ রূপান্তর