ইউক্রেন যুদ্ধ বছর না হলেও কয়েক মাস ধরে চলবে : ডোমিনিক রাব

ফানাম নিউজ
  ০৬ মার্চ ২০২২, ১৭:৩৪

ইউক্রেন-রাশিয়ার এ যুদ্ধ বছর না হলেও অন্তত কয়েক মাস ধরে চলবে বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাজ্যের উপ-প্রধানমন্ত্রী ডোমিনিক রাব।

স্কাই নিউজে দেয়া একটি সাক্ষাৎকারে যুক্তরাজ্যের উপ-প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, রাশিয়ার ভ্লাদিমির পুতিন যাতে ব্যর্থ হন, সেজন্য বন্ধু দেশগুলোর কৌশলগত মনোভাব দেখানো উচিত।

এর আগে যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা প্রধান তথা চীফ অফ ডিফেন্স স্টাফ অ্যাডমিরাল স্যার টনি রাডকিন বিবিসিকে বলেছেন, ইউক্রেন, ইউরোপ এবং সারা বিশ্বের জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে যুক্তরাজ্য মনে করে যেন, কোনভাবেই ইউক্রেনের যুদ্ধ আর না বাড়ে।

তিনি বলেন, ‘আমরা কোনভাবেই চাই না ন্যাটো আর রাশিয়ার মধ্যে একটা যুদ্ধ বেধে যাক। তবে ইউক্রেনের মানুষ খুবই বিপর্যয়কর অবস্থায় আছে বলে তিনি স্বীকার করেছেন’।

ইউক্রেনের আকাশসীমায় ‘নো-ফ্লাই জোন’ ঘোষণা করতে রাজি না হওয়ায় নেটোর ওপর ক্ষুব্ধ ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদামির জেলেনস্কি। সেটি করা হলে রাশিয়ার সঙ্গে সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়বে ন্যাটো।

স্যার রাডকিন বলেছেন, ইউক্রেনে হামলা রাশিয়ার জন্যও ভালো হয়নি। তিনি বিশ্বাস করেন, যুক্তরাজ্য এর জবাবে সঠিক পদক্ষেপ নিয়েছে।

তিনি বলেন, রাশিয়ার হুমকি মোকাবেলায় যুক্তরাজ্য এবং তাদের মিত্রদের খুবই হুঁশিয়ার থাকতে হবে।

যুক্তরাজ্য এখনো রাশিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে কীনা জানতে চাইলে স্যার টনি বলেন, মস্কোর অপারেশনাল হেডকোয়ার্টার্সের সঙ্গে তাদের একটি সরাসরি লাইন আছে, যেটি প্রতিদিন পরীক্ষা করে দেখা হয়।

তিনি জানান, সম্প্রতি তিনি এই লাইন ব্যবহার করে তার রুশ প্রতিপক্ষ সেনা প্রধান ভ্যালেরি গেরাসিমভের সঙ্গে একটি বৈঠকের অনুরোধ জানিয়েছেন, তবে এখনো তার উত্তরের প্রতীক্ষায় আছেন।

ওদিকে, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে পরাজিত করতে ছয় দফা পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। একইসঙ্গে ইউক্রেনে রাশিয়ার পরাজয় নিশ্চিত করতে নতুন উদ্যমে ঝাঁপিয়ে পড়তে বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি।

ইউক্রেনে রাশিয়ার ‘ভয়াবহ আক্রমণ’ ব্যর্থ করার জন্য প্রেসিডেন্ট পুতিনের ওপর চাপ বাড়াতেই এই ছয় দফা পরিকল্পনা তৈরি করেছেন বরিস জনসন। এই ছয় দফা পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে-

এক. বিশ্ব নেতাদের ইউক্রেনের জন্য একটি ‘আন্তর্জাতিক মানবিক জোট’ গঠন করতে হবে।

দুই. ‘নিজেদের আত্মরক্ষার জন্যই’ তাদের (দেশগুলোর) উচিত ইউক্রেনকে সমর্থন করা।

তিন. রাশিয়ার ওপর অর্থনৈতিক চাপ বাড়াতে হবে।

চার. আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবশ্যই ইউক্রেনে রাশিয়ার চলমান কর্মকাণ্ডকে প্রতিরোধ করতে হবে।

পাঁচ. যুদ্ধ বন্ধে কূটনৈতিক সমাধানের পথ অবশ্যই অনুসরণ করতে হবে। এবং সেটি হতে হবে কেবল ইউক্রেনের বৈধ সরকারের পূর্ণ অংশগ্রহণের মাধ্যমই।

ছয়. সামরিক জোট ন্যাটোর অন্তর্ভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে ‘নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা’ আরও জোরদার করার জন্য একটি দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।

বিবিসি বলছে, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন ডাউনিং স্ট্রিটে সোমবার (৭ মার্চ) কানাডার প্রধানমন্ত্রী জান্টিন ট্রুডো এবং ডাচ প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুটের সঙ্গে বৈঠক করবেন বরিস জনসন। বিশ্ব রাজনীতির উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মধ্যে অনুষ্ঠিতব্য এই বৈঠকে কানাডীয় ও ডাচ প্রধানমন্ত্রীর কাছে বরিস জনসন তার বার্তা পৌঁছে দেবেন বলে মনে করা হচ্ছে।

এর আগে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদামির জেলেনস্কি বিদেশি যোদ্ধাদের তার দেশের জন্য লড়াই করার আহ্বান জানিয়েছিলেন। তিনি বলেছেন, এই যুদ্ধে প্রায় ১৬ হাজার বিদেশি স্বেচ্ছাসেবক হিসাবে অংশ নিয়েছে।

প্রায় তিন হাজার আমেরিকান ইউক্রেনের পক্ষ হয়ে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ নিয়েছে বলে ওয়াশিংটনে ইউক্রেনের দূতাবাসের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার জানিয়েছে, ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার পর দেশটি থেকে ১৫ লাখের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।

এদের মধ্যে ছয় লাখ মানুষ প্রতিবেশী পোল্যান্ডে আশ্রয় নিয়েছে। এর বাইরে হাঙ্গেরি, রোমানিয়া, মলদোভা, শ্লোভাকিয়াসহ অন্যান্য ইউরোপীয় দেশগুলোয় আশ্রয় নিয়েছে বাকিরা।

সূত্র: স্কাই নিউজ, বিবিসি ও দেশ রূপান্তর