শিরোনাম
আবারও ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় বন্দর নগরী মারিওপোলে সাময়িক যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিয়েছে পুতিনের রাশিয়া। স্থানীয় সময় রবিবার সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত (বাংলাদেশ সময় দুপুর ২টা-রাত ১টা) খণ্ডকালীন এই যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হয়েছে।
পুতিনের রুশ সেনাদের হাতে অবরুদ্ধ শহরটি থেকে বেসামরিক মানুষকে সরিয়ে নেয়ার জন্যেই সাময়িক এ যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হয়েছে। শহরটিতে অন্তত ২ লাখ মানুষ আটকা পড়ে আছে বলে জানা গেছে।
রবিবার (৬ মার্চ) শহরের সিটি কাউন্সিলের বরাত দিয়ে পাওয়া এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
বিবিসি বলছে, যুদ্ধবিরতির কারণে বেসামরিক মানুষ শহরটি থেকে বেরিয়ে যেতে পারবেন। স্থানীয় সময় দুপুর ১২টা থেকে নির্দিষ্ট একটি রুটে শহর থেকে সাধারণ মানুষ বের হতে পারবেন।
এর আগে শনিবারও প্রায় একই ধরনের একটি খণ্ডকালীন যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু যুদ্ধবিরতি ঘোষণার কিছু সময় পরই নতুন করে বোমা হামলা শুরু হওয়ায় সেটি ব্যর্থ হয়।
অবশ্য ঘণ্টা খানেকের মধ্যেই যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের জন্য একে অপরকে দোষারোপ করতে শুরু করে রাশিয়া ও ইউক্রেন।
ইউক্রেনের দাবি, রাশিয়া প্রতিশ্রুতি মতো মানবিক করিডর তৈরি করেনি এবং মারিওপোলের বাসিন্দাদের শহর ছেড়ে যেতে বাধা দিয়েছে।
অন্যদিকে রাশিয়ার দাবি, ইউক্রেন শর্ত পালন করেনি, তারা কোনোভাবেই শান্তি বজায় রাখতে আগ্রহী নয়। এই পরিস্থিতিতে যুদ্ধবিরতি বাতিল করে ফের হামলা শুরু করে রাশিয়া।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, ইউক্রেনের মারিওপোল ও ভলনোভাখা শহর থেকে বেসামরিক নাগরিকদের সরে যাওয়ার সুযোগ দিতে যে সামরিক যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হয়েছিল তার অপব্যবহার করেছে ইউক্রেনের সেনাবাহিনী। এ কারণে ওই যুদ্ধবিরতি স্থগিত করে আবার সামরিক অভিযান শুরু করা হয়েছে।
ওদুকে ইউক্রেনের মনোবল ভাঙতে চলমান সামরিক অভিযানে দেশটির শহর ও জনবহুল এলাকাগুলোতে ব্যাপক বোমা বর্ষণ করছে রাশিয়া। যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি রিপোর্টে এই তথ্য উঠে এসেছে বলে রবিবার (৬ মার্চ) এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
রবিবার প্রকাশ করা দৈনিক গোয়েন্দা রিপোর্টে ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, রাশিয়ার সর্বাত্মক সামরিক অভিযানের মুখে ইউক্রেনের প্রতিরোধ মস্কোকে বিস্মিত করা অব্যাহত রেখেছে। আর এই কারণেই খারকিভ, চেরনিহিভ ও মারিওপোলসহ অন্য শহরগুলোকে লক্ষ্য করে বোমাবর্ষণ চালিয়ে যাচ্ছে রুশ বাহিনী।
ওই প্রতিবেদনে ২০১৬ সালে সিরিয়া এবং ১৯৯৯ সালে চেচনিয়াতে রুশ সামরিক কৌশলের সঙ্গে ইউক্রেনে চলমান অভিযানে মস্কোর কৌশলেরও তুলনা করা হয়েছে। ইউক্রেনের মতো সিরিয়া এবং চেচনিয়াতেও রুশ সামরিক বাহিনী ভবন ও ঘনবসতি পূর্ণ এলাকায় ব্যাপক গোলাবর্ষণ করেছিল।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ভোরে ইউক্রেনে ঢুকে হামলা শুরু করে রাশিয়ান সৈন্যরা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের প্রথম দেশ হিসেবে রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনী স্থল, আকাশ ও সমুদ্রপথে ইউক্রেনে এই হামলা শুরু করে। একসঙ্গে তিন দিক দিয়ে হওয়া এই হামলায় ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র পড়েছে বৃষ্টির মতো।
ইউক্রেনের উপ-প্রধানমন্ত্রী ওলহা স্টেফানিশনিয়া রাশিয়ার ‘সন্ত্রাসী পরিকল্পনার’ আরেকটি তরঙ্গ শুরু হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন।
তিনি বিবিসিকে বলেছেন, পরিস্থিতি আরও গুরুতর হয়ে উঠছে এবং ইউক্রেনের শহরগুলোর হাসপাতাল এবং কিন্ডারগার্টেনগুলোতে হামলা চালানো হয়েছে।
তিনি বলেন, আগ্রাসন প্রতিহত করার জন্য ইউক্রেনের দৃঢ় সংকল্প রয়েছে। এটিই যুদ্ধের শেষ নয়।
তিনি বলেন, প্রচুর রুশ সেনাদের প্রাণহানিসহ রাশিয়ার ‘বিশাল ক্ষয়ক্ষতি’ও ভ্লাদিমির পুতিনকে নিরুৎসাহিত করছে না বরং আরও উৎসাহিত করছে।
সূত্র: বিবিসি ও দেশ রূপান্তর