শিরোনাম
যুদ্ধকালীন এই ধোঁয়াশার মধ্যে সামনের দিকে দেখাটা অনেকের জন্যই কঠিন হতে পারে। যুদ্ধক্ষেত্রে শোকাহত এবং বাস্তুচ্যুতদের কান্না মন ছুঁয়ে গেলেও যুদ্ধ থামানোর কূটনৈতিক প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। তাই পেছনের দিকে না তাকিয়ে বরং ভাবা উচিত কিভাবে ইউক্রেনের এই সংঘাত শেষ হতে পারে। চলমান পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে রাজনীতিবিদ ও সমর পরিকল্পনাবিদরা কী জানাচ্ছেন যুদ্ধ শেষের উপায় হিসেবে? যদিও আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে ভবিষ্যৎ সম্পর্কে খুব কম মানুষই ভবিষ্যৎ বাণী করতে পারে, তারপরও মাঝে মাঝে সত্যিই মিলে যায় সেই সব ভবিষ্যৎ বাণী। দেখে নেওয়া যাক এই সংঘাত শেষের উপায় হিসেবে কী বলছেন রাজনীতিবিদ ও সমর পরিকল্পনাবিদরা।
স্বল্পমেয়াদী যুদ্ধ
ইউক্রেনে সামরিক অভিযান বাড়িয়ে দিয়েছে রাশিয়া। ইউক্রেন জুড়ে নির্বিচারে কামান এবং রকেট হামলা চলছে। যদিও রুশ বিমানবাহিনী সে তুলনায় কম ভূমিকা রাখছে। তারপরও চলছে আকাশ হামলাও।
অন্যদিকে ইউক্রেনের জাতীয় অফিসগুলোকে লক্ষ্য করে চালানো হচ্ছে সাইবার হামলা। বন্ধ হয়ে গেছে বিদ্যুৎ ও নেট সংযোগ। নিহত হয়েছে হাজার হাজার বেসামরিক মানুষ। কঠোর প্রতিরোধ গড়ে তোলার পরও পতনের মুখে রয়েছে রাজধানী কিয়েভ। এই পর্যায়ে ইউক্রেন দখল নিয়ে পুতিনপন্থী কাউকে গদিতে বসাতে পারে রাশিয়া। প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি গুপ্তহত্যার শিকার হতে পারেন কিংবা পশ্চিম ইউক্রেন বা দেশের বাইরেও পালিয়ে গিয়ে নির্বাসিত সরকার গঠন করতে পারেন। অন্যদিকে পুতিনও জয় ঘোষণা করে কিছু সেনা সরিয়ে নিয়ে বাকি সেনাদের ইউক্রেনেই রেখে যেতে পারেন নিয়ন্ত্রণ রাখার জন্য।
এই ফলাফল কোনোভাবেই অসম্ভব নয়। এটা নির্ভর করছে কয়েকটি বিষয়ের ওপর। যেমন: রুশ বাহিনী অভিযান আরও জোরদার করলে এবং ইউক্রেনের অসাধারণ লড়াইয়ের মনোভাব কমে গেলে। এর মাধ্যমে পুতিন হয়তো কিয়েভে শাসন পরিবর্তন এবং ইউক্রেনের পশ্চিমা একীকরণের ইতি টানতে পারবেন।
তবে যে কোনো রাশিয়াপন্থী সরকার অবৈধ এবং ইউক্রেনে বিদ্রোহের কারণ হতে পারে। এর ফলে দেশটিতে আবার সংঘাত শুরু হওয়ার আশঙ্কা থেকে যাবে।
দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধ
এই অভিযান একটি দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধে পরিণত হওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে। রুশ বাহিনীর দুর্বল মনোবল, রসদের অভাব এবং অযোগ্য নেতৃত্বের কারণে যুদ্ধের স্থায়িত্ব বাড়তে পারে।
ইউক্রেনীয়দের প্রবল প্রতিরোধের মুখে রাশিয়ান বাহিনীর কিয়েভের মতো শহরগুলোতে দখল নিতে অনেক সময় লাগতে পারে। ফলে দীর্ঘায়িত হতে পারে যুদ্ধ। ১৯৯০ এর দশকে চেচনিয়ার রাজধানী গ্রোজনি দখল এবং ব্যাপকভাবে ধ্বংস করার জন্য রাশিয়ার নশৃংস এবং দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধের অনেকটা প্রতিধ্বনি শোনা যাচ্ছে এই যুদ্ধেও।
তবে রাশিয়ান বাহিনী কয়েকটি শহরের দখল নিলেও সেগুলোর নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখাটা তাদের জন্য কঠিন হতে যাচ্ছে। সম্ভবত ইউক্রেনের মতো বড় দেশে লড়ার জন্য পর্যাপ্ত সেনাও মোতায়েন করতে পারবে না মস্কো।
এছাড়া ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা বাহিনী স্থানীয়দের অনুপ্রেরণা ও সমর্থন পেয়ে একটি কার্যকর বিদ্রোহে শুরু করেছে। পশ্চিমা দেশগুলোও তাদের অস্ত্র সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। তাই ইউক্রেনও সহজে ছেড়ে কথা বলবে না বলেই ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।
ইউরোপীয় যুদ্ধ
এটা কি সম্ভব যে এই যুদ্ধ ইউক্রেনের সীমান্তের বাইরে ছড়িয়ে পড়তে পারে? পুতিন ন্যাটোর সদস্য নয় এমন সাবেক সোভিয়েত প্রজাতন্ত্র যেমন মলদোভা এবং জর্জিয়ার মতো দেশগুলোতে সৈন্য পাঠিয়ে সাবেক সাম্রাজ্যের আরও অংশ পুনরুদ্ধার করতে চাইতে পারেন। অথবা এতে পুতিনের ভুল হিসাব কেবলই বাড়তে পারে।
কূটনীতিক সমাধান
এতো কিছুর পরও এই সংঘাতের একটা কূটনীতিক সমাধানের বিষয়টিও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস অবশ্য সেই ইঙ্গিত দিয়ে বলেছেন, এখন অস্ত্র কথা বলছে, কিন্তু সংলাপের পথ সবসময়ই খোলা আছে।
এদিকে কূটনীতিক সমাধানের জন্য আলোচনাও চলছে। বৃহস্পতিবারই ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ পুতিনের সঙ্গে কথা বলেছেন। আলোচনা চলছে দুই দেশের প্রতিনিধিদের মধ্যেও।
পুতিনের পতন
পুতিনের পতনের মাধ্যমে এই যুদ্ধের সমাপ্তির বিষয়টিও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। কারণ ইউক্রেনে হামলা শুরুর সময় পুতিন নিজেই বলেছিলেন, আমরা যেকোনো পরিণতির জন্য প্রস্তুত। সেই পরিণতি যদি তার পতনের হয়? এটা অকল্পনীয় মনে হতে পারে। তারপরও সাম্প্রতিক দিনগুলোতে বিশ্ব পরিবর্তিত হয়েছে এবং এই বিষয়গুলোও এখন চিন্তা করা হচ্ছে। লন্ডনের কিংস কলেজের ওয়ার স্টাডিজের ইমেরিটাস অধ্যাপক প্রফেসর স্যার লরেন্স ফ্রিডম্যান চলতি সপ্তাহে জানিয়েছেন, এখন কিয়েভের মতো মস্কোতেও শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এছাড়া ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযানই রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের 'শেষের শুরু হতে পারে' বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিজ ট্রাস।
তবে আসলে কী ভাবে এই রক্তরক্ষী লড়াই শেষ হবে সেই প্রশ্নের উত্তর সময়ই বলে দেবে।
সূত্র: বিবিসি