শিরোনাম
ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার পর প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে দুবার আলোচনা করলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। প্রথম বৈঠকে ইউক্রেনে হামলাকে ‘সহিংসতা’ উল্লেখ করে তা থামানোর আহ্বান জানান মোদি। বুধবার ভিডিও কলে তাঁদের দ্বিতীয় বৈঠকটি হয়। তাঁরা ইউক্রেনের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন। পাশাপাশি সংঘাতের মধ্যে ইউক্রেনে আটকে পড়া ভারতীয় নাগরিকদের নিরাপদে সরিয়ে নিতে রাশিয়ার সহায়তা চান মোদি। এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে রুশ সেনাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে মোদিকে জানান পুতিন।
বৃহস্পতিবার কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আটকে পড়া সব ভারতীয়র জন্য ইউক্রেন ত্যাগের নিরাপদ পদ তৈরি করে দিতে ইউক্রেন ও রাশিয়ার প্রতি একাধিকার আহ্বান জানায় ভারত। আনুমানিক ৮ হাজার ভারতীয় এখনো খারকিভ, সুমি ও সংঘাতকবলিত অন্যান্য এলাকায় আটকে পড়েছেন। তাঁদের নিরাপদে সরিয়ে নিতে চেষ্টা চালাচ্ছে ভারত।
এরই মধ্যে আটকে পড়া ভারতীয়দের ‘মানবঢাল’ হিসেবে ইউক্রেনের সেনা ব্যবহার করছে বলে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় দাবি করার পর বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। যদিও গতকাল বৃহস্পতিবার নয়াদিল্লি তাদের শিক্ষার্থীদের ইউক্রেনে জিম্মি করার খবর অস্বীকার করেছে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ইউক্রেনে থাকা ভারতীয় নাগরিকদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচী বলেছেন, ‘আমরা কোনো শিক্ষার্থীর ব্যাপারে জিম্মি পরিস্থিতির প্রতিবেদন পাইনি। খারকিভ এবং পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে শিক্ষার্থীদের দেশের পশ্চিমাঞ্চলে নিতে বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করার জন্য আমরা ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেছি।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আটকে পড়া ভারতীয়দের উদ্ধারের বিষয়ে মোদি-পুতিনের আলোচনার পর ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি সংক্ষিপ্ত বিবৃতি দিয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, দুই নেতা ইউক্রেন পরিস্থিতি, বিশেষ করে খারকিভের অবস্থা পর্যালোচনা করেছেন। খারকিভে অনেক ভারতীয় শিক্ষার্থী আটকে পড়েছেন। তাঁরা সংঘাতকবলিত সব এলাকা থেকে ভারতীয় নাগরিকদের নিরাপদে উদ্ধারের বিষয়ে আলোচনা করেছেন।
রুশ সেনারা ইতিমধ্যে খারকিভ দখলে নিয়েছেন, যা স্বীকার করেছে ইউক্রেনের কর্তৃপক্ষও। ইউক্রেনে রুশ হামলার জন্য ভারত এখনো প্রকাশ্যে রাশিয়ার সমালোচনা করেনি। এর পরিবর্তে উভয় পক্ষকে সংঘাত থামানোর আহ্বান জানিয়েছে। এতে যুক্তরাষ্ট্রসহ তার মিত্রদেশগুলো হতাশ হয়েছে। তবে খারকিভে গোলায় এক ভারতীয় শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার পর রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিন্দা জানাতে মোদি সরকারের ওপর চাপ বাড়ছে।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র কোনাশেনকভ বলেন, ইউক্রেন পোল্যান্ডের সঙ্গে পশ্চিম সীমান্ত দিয়ে ভারতীয় শিক্ষার্থীদের সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে, যার অর্থ তাদের সংঘাতকবলিত অঞ্চলের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। রুশ সশস্ত্র বাহিনী ভারতীয় নাগরিকদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুত, যাতে তাঁরা রাশিয়া থেকে দেশে ফিরতে পারেন। পুতিন-মোদির আলোচনার পর ক্রেমলিনও বিবৃতি দিয়েছে। সেখানে বলা বলেছে, আলোচনায় পুতিন বলেন, সশস্ত্র সংঘাতের অঞ্চল থেকে ভারতীয় নাগরিকদের নিরাপদ প্রস্থান এবং তাঁদের স্বদেশে প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করতে রুশ সেনাদের তিনি নির্দেশ দিয়েছেন।
ভারত রাশিয়ার পুরোনো মিত্র। কিন্তু সম্প্রতি দেশটির ঘনিষ্ঠতা বেড়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গেও। তাই ইউক্রেনে রুশ হামলায় ভারতের অবস্থান এখনো পরিষ্কার নয়। ইউক্রেনে রুশ হামলার প্রতিবাদে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ একটি জরুরি অধিবেশন ডাকে। আলোচনা শেষে বুধবার রাতে সাধারণ পরিষদের সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের সমর্থনে রুশ হামলা বন্ধে একটি প্রস্তাব পাস হয়েছে। ওই প্রস্তাবে ভোটদানে বিরত ছিল ভারত, চীন, বাংলাদেশ, পাকিস্তানসহ ৩৫টি দেশ। এর আগে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকেও পরিষদের অস্থায়ী সদস্য ভারত কারোর পক্ষ নেয়নি, অর্থাৎ ভোটদানে বিরত ছিল দেশটি।
অবিলম্বে হামলা বন্ধ করে ইউক্রেনের আন্তর্জাতিক সীমান্ত থেকে রুশ সেনাদের সরিয়ে নিতে সাধারণ পরিষদের প্রস্তাবে ১৯৩ সদস্যদেশের মধ্যে ১৪১টি দেশ প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয়। প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দেয় রাশিয়াসহ পাঁচটি দেশ। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে নেপাল প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে। রাশিয়ার পক্ষে অবস্থান নিয়ে সাধারণ পরিষদের প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দিয়েছে মস্কোর মিত্র হিসেবে পরিচিত চার দেশ—বেলারুশ, উত্তর কোরিয়া, ইরিত্রিয়া ও সিরিয়া। চীনের সঙ্গে ভোটদানে বিরত ছিল মস্কোর দীর্ঘদিনের মিত্র কিউবা ও নিকারাগুয়া। আর ভেনেজুয়েলা চাঁদার অর্থ না দেওয়ায় ভোট দিতে পারেনি।