শিরোনাম
ইউক্রেনে আগ্রাসনের সপ্তম দিনে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী রাজধানী কিয়েভের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। বৃহস্পতিবার কিয়েভ থেকে মাত্র ১২ মাইল উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে রুশ বাহিনীকে অবস্থান করতে দেখা যায়।
তিন দিক থেকে কিয়েভ ঘিরে শহরটি দখলে নেওয়ার চেষ্টা করছে রাশিয়ার সেনারা। এছাড়া দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তর শহর খারকিভসহ বেশ কয়েকটি শহরে রুশ বাহিনী ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে।
মঙ্গলবার রাতভর ইউক্রেনের টেলিভিশন টাওয়ার, হাসপাতাল, মাতৃসদন, বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রুশ বাহিনী ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করেছে। তবে রুশ বাহিনী চরম প্রতিরোধের মুখে পড়েছে।
রুশ সেনারা ইউক্রেনের প্রতিরোধযোদ্ধাদের মুখোমুখি ও ক্ষয়ক্ষতির শিকার হচ্ছে। ইউক্রেনের দাবি-এখন পর্যন্ত ৬ হাজার রুশ সেনা নিহত হয়েছে। এছাড়া রাশিয়ার ৩০টি জঙ্গিবিমান, ৩১টি হেলিকপ্টার, ২১১টি ট্যাংক, ৬০টি ফুয়েল ট্যাংক এবং ৮৫০টি সামরিক যান ধ্বংস করা হয়েছে।
তবে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বুধবার প্রথমবারের মতো তাদের সেনাদের হতাহতের খবর দিয়ে বলেছে, এ কদিনের যুদ্ধে রাশিয়ার ৪৯৮ সেনা নিহত ও ১৫৯৭ জন আহত হয়েছেন।
রাশিয়ার কর্মকর্তারা আরও জানিয়েছেন, আরেক দফা আলোচনার জন্য ইউক্রেনের প্রতিনিধি দল পোল্যান্ড-বেলারুশ সীমান্তে পৌঁছতে কিয়েভ ছেড়েছে। সেখানে বৃহস্পতিবার সকালে বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।
প্রতিনিধি দলকে রাশিয়ার সেনারা নিরাপত্তা দিচ্ছে। এদিকে রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অংশ নিতে ৮০ হাজার ইউক্রেনীয় নাগরিক দেশে ফিরেছেন এবং লাখ লাখ ইউক্রেনীয় সেনা প্রস্তুত রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, ইউক্রেনে আগ্রাসন চালানোর জন্য রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন একাই দায়ী। এ যুদ্ধে পুতিনের পতন হবে। তাকে চরম মূল্য দিতে হবে।
এদিকে ইউক্রেনের বড় শহরগুলোয় প্রবেশ করতে গিয়ে রুশ বাহিনী বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে বলে দাবি করেছেন ব্রিটিশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেন ওয়ালেস।
তিনি বলেন, ইউক্রেনের ভূ-প্রাকৃতিক আকার এবং ৪ কোটি ৪০ লাখ মানুষের বিশাল জনগোষ্ঠী রুশ দখলদারত্বকে ‘খুবই কঠিন’ করে তুলবে। খারকিভে রাশিয়ার বোমাবর্ষণকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ‘রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসবাদ’ বলে অভিহিত করেছেন।
অপরদিকে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ বলেছেন, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করা হবে। জাতিসংঘ জানিয়েছে, ইউক্রেনে রুশ হামলায় এ পর্যন্ত ১৩ শিশুসহ ৫৩৬ জন নিহত হয়েছে। এছাড়া ইউক্রেনের ৬ লাখ ৭৫ হাজার মানুষ উদ্বাস্তু হয়েছে।
খবর বিবিসি, এএফপি, রয়টার্স, দ্য গার্ডিয়ান, আলজাজিরা ও সিএনএনের। ২৪ ফেব্রুয়ারি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনে আক্রমণ চালাতে সেনাদের নির্দেশ দেন। এরপর তিন দিক থেকে ইউক্রেনে হামলা শুরু করে রুশ বাহিনী।
এ হামলা চলাকালে বুধবার ইউক্রেন ও রাশিয়ার প্রতিনিধিদলের মধ্যে দ্বিতীয় দফার সমঝোতা আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। সোমবার অনুষ্ঠিত প্রথম দফার আলোচনা কোনো সমঝোতা ছাড়াই শেষ হয়।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বেসরকারি মহাকাশ প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠান মাক্সার টেকনোলজিসের দাবি-কিয়েভের উত্তরে সেনা সমাবেশ ক্রমাগত বাড়াচ্ছে রাশিয়া। সেখানে রুশ সেনাবাহিনীর প্রায় ৪০ মাইল দীর্ঘ একটি বহর জড়ো হয়েছে।
এর মধ্যে বহরটি কিয়েভ থেকে মাত্র ১৫ মাইল দূরত্বে অবস্থান করছে। এদিকে কিয়েভের টেলিভিশন টাওয়ারে রুশ রকেট হামলায় পাঁচজন নিহত হয়েছেন।
একই সঙ্গে হামলার কবলে পড়ে সেখানকার কলোকস্ট স্মৃতিসৌধও। কিয়েভের মেয়র জানিয়েছেন, দুটি রকেট টাওয়ারটিতে আঘাত হানে। এতে টাওয়ারের কিছু যন্ত্রপাতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং কয়েকটি টিভি চ্যানেলের সম্প্রচার ব্যাহত হয়েছে।
কিয়েভের কাছে নিজ বাসায় রুশ বোমা হামলায় ইউক্রেনের দুই ফুটবলার নিহত হয়েছেন। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে পেশাদার ফুটবলারদের আন্তর্জাতিক সংগঠন ‘ফিফপ্রো’ এক টুইট বার্তায় এ তথ্য জানায়।
ইউক্রেনের ক্লাব কারপাতি লেভিভের যুবদলের খেলোয়াড় ২১ বছর বয়সি ভিতালি সাপিলো যুদ্ধে মারা গেছেন। আর ২৫ বছর বয়সি অপেশাদার ফুটবলার দিমিত্রো মার্তিনেঙ্কো স্থানীয় ক্লাব এফসি গোস্তোমেলে খেলতেন।
ফিফপ্রোর টুইটে বলা হয়, ইউক্রেনের তরুণ ফুটবলার ভিতালি সাপিলো ও দিমিত্রো মার্তিনেঙ্কোর পরিবার, বন্ধু ও সতীর্থদের পাশেই আছি আমরা। এ যুদ্ধে ফুটবলের প্রথম ক্ষতি। তাদের আত্মা শান্তিতে থাকুক।
চলমান সংঘাতে সবশেষ ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর খারসনের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে রুশ সেনারা। স্থানীয় সিসিটিভি ভিডিওতে দেখা গেছে, রাশিয়ার সাঁজোয়া যান ও সেনাদের রাস্তায় রাস্তায় টহল দিতে দেখা গেছে।
খারসনে রুশ বাহিনীর গোলাবর্ষণে এ পর্যন্ত ২০০ মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। নিহতদের বেশির ভাগই বেসামরিক লোক। শহরটিতে প্রায় আড়াই লাখ মানুষের বসবাস।
শহরটির মেয়র ইগর কলিখায়েব সরকার এবং সাহায্য সংস্থাগুলোর কাছে খাদ্যপণ্য ও ওষুধ সরবরাহ নিশ্চিত করতে এবং আহতদের উদ্ধারে সাহায্যের আবেদন করেছেন।
মেয়র ফেসবুকে হৃদয়স্পর্শী স্ট্যাটাস দিয়ে জানান, আবাসিক ভবনগুলোয় আগুন জ্বলছে। শহরের স্থাপনাগুলো পুড়ছে। শহরের রাস্তায় রুশ সৈন্যদের চলাচল দেখা যাচ্ছে। শহরের প্রধান ট্রেন স্টেশন এবং বন্দর দখল করা হয়েছে।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দাবি-তাদের সৈন্যরা ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর খারসনে পূর্ণ কর্তৃত্ব স্থাপন করেছে। ইউক্রেনের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর জায়তোময়ারে বেশ কয়েকটি আবাসিক ভবনে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করা হয়েছে। এতে ভবনগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং আগুন ধরে যায়। কর্তৃপক্ষ বলেছে, এ হামলায় চারজন নিহত হয়েছেন।
ইউক্রেনের উত্তর-পূর্ব শহর খারকিভের পুলিশ বিভাগের একটি ভবনে রকেট হামলা করেছে রুশ বাহিনী। সেখানে রুশ ছত্রীসেনারা (প্যারাট্রুপাররা) অবতরণ করেছে। রুশ ভাষাভাষীদের এ শহরটিতে মঙ্গলবার থেকে রুশ গোলাবর্ষণ তীব্র করা হয়।
ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর তথ্যানুযায়ী, বুধবার ভোরে খারকিভ ও আশপাশের এলাকায় বিমান হামলার সাইরেন বেজে ওঠে। এরপর একটি আবাসিক এলাকায় রকেট হামলা হয়। একটি ভিডিওতে দেখা যায়, রুশ ছত্রীসেনাদের হামলায় একটি ভবন জ্বলছে।
ভবনটি কারাজিন ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির কাছাকাছি অবস্থিত। মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার ভোর পর্যন্ত গোলাবর্ষণে ২১ জন বেসামরিক ব্যক্তি নিহত এবং ১১২ জন আহত হয়েছেন। খারকিভের একটি সামরিক হাসপাতালেও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করা হয়েছে।
খারকিভের আঞ্চলিক প্রশাসক ওলে সিনেগোভবের দাবি-খারকিভে হামলার পর প্রতিরোধের কবলে পড়েছে রুশ সেনারা। ব্যাপক ক্ষতির শিকার হতে হচ্ছে। ইউক্রেনের সেনারাও প্রতিরোধের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করতে ইউক্রেনে ফিরেছেন ৮০ হাজার মানুষ : রাশিয়ার সেনাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অংশ নিতে এখন পর্যন্ত বিদেশ থেকে ৮০ হাজার ইউক্রেনীয় নাগরিক দেশে ফিরেছেন।
ইউক্রেনের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক টেলিগ্রাম পোস্টে বলা হয়, বিদেশফেরত ইউক্রেনীয়দের একটি বড় অংশ পুরুষ। তারা সেনাবাহিনী ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী প্রতিরক্ষা দলের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন।
ইউক্রেনের উপপ্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক উপদেষ্টা সোভেতলানা জালিচাক বলেছেন, রাশিয়ার চাপিয়ে দেওয়া যুদ্ধে ইউক্রেনীয়রা একটু ভীতসন্ত্রস্ত। তবে তারা লড়াইয়ে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
ইউক্রেনের পশ্চিমের শহর বেরেগোভো থেকে তিনি আরও বলেন, পুতিনের সেনাবহর অগ্রসর হচ্ছে। আমাদের আশঙ্কা, পুতিন থামবেন না। কিন্তু রুশ বাহিনীকে থামাতে আমরাও প্রস্তুত।
সোভেতলানা জালিচাক আরও বলেন, রুশ বাহিনীকে রুখতে আঞ্চলিক প্রতিরক্ষা ইউনিট গঠন করা হয়েছে। ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে সাধারণ নাগরিকরাও কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করছেন।
গত কয়েকদিনে ইউক্রেনের প্রায় এক লাখ সাধারণ নাগরিক দেশটির স্বেচ্ছাসেবী প্রতিরক্ষা দলে যোগ দিয়েছেন। এর মধ্যে তার ভাইও রয়েছেন বলে তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, ‘ও (জালিচাকের ভাই) সেনাবাহিনীর কেউ নয়, কিন্তু ও বন্দুক হাতে তুলে নিয়েছে। কিয়েভের প্রবেশমুখে একটি শহরের সুরক্ষায় নিয়োজিত আছে।’
ইউক্রেন ছেড়েছেন ৬ লাখ ৭৫ হাজারের বেশি মানুষ : জাতিসংঘ জানিয়েছে, যুদ্ধ থেকে বাঁচতে ইউক্রেন ছেড়ে ৬ লাখ ৭৫ হাজারের বেশি মানুষ প্রতিবেশী দেশগুলোয় যেতে বাধ্য হয়েছে। ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ বিষয়ে সোমবার গণশুনানি শুরু করবেন হেগের আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে)।
তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধে ব্যবহৃত হবে পরমাণু অস্ত্র : তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে সেই যুদ্ধে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করা হবে এবং সেই যুদ্ধ হবে ধ্বংসাত্মক বলে মন্তব্য করেছেন রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ।
তিনি আরও বলেন, ইউক্রেন পরমাণু অস্ত্র অর্জন করতে সক্ষম হলে তা হবে রাশিয়ার জন্য ‘সত্যিকারের বিপদ’। এর আগে মঙ্গলবার জেনেভা সম্মেলনে ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের এ নতুন ন্যায্যতা দেওয়ার চেষ্টা করেন তিনি।
তিনি বলেন, ইউক্রেন যাতে পরমাণু অস্ত্র বানাতে না পারে, সেজন্য হামলা চালানো হয়েছে। তিনি বলেন, ইউরোপেও কোনো মার্কিন পারমাণু বোমা থাকতে পারবে না।
তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কৌশলগত স্থিতিশীলতা নিয়ে রাশিয়া আলোচনা করতে প্রস্তুত। কিন্তু সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের কোনো দেশে সামরিক ঘাঁটি স্থাপন করতে পারবে না ওয়াশিংটন।
রাশিয়া আমাদের মুছে ফেলতে চায় : রাশিয়া ইউক্রেনকে মুছে ফেলতে চায় বলে মন্তব্য করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। বুধবার রুশ আগ্রাসনের সপ্তম দিনে এক ভিডিও ভাষণে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
জেলেনস্কি আরও বলেন, ইউক্রেন, এর ইতিহাস এবং জনগণকে মুছে ফেলার লক্ষ্যে কাজ করছে রাশিয়া। রুশ আগ্রাসন মোকাবিলায় পশ্চিমা দুনিয়ার প্রতিক্রিয়া যথেষ্ট নয় বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, ‘আপনারা কি দেখতে পাচ্ছেন না কী ঘটছে? নাৎসিবাদের জন্ম হয় নীরবতার মধ্যে। তাই বেসামরিকদের হত্যার বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলুন, ইউক্রেনীয়দের হত্যা সম্পর্কে আওয়াজ তুলুন।’
ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগদানের জন্য ইউক্রেনের আবেদনকে সমর্থন দিতে মিত্র দেশগুলোর প্রতিও তিনি আহ্বান জানান। আগ্রাসন শুরুর পর থেকে ইউক্রেনে এ পর্যন্ত প্রায় ছয় হাজার রুশ সেনা নিহত হয়েছে বলেও তিনি দাবি করেন।
পুতিনকে চরম মূল্য দিতে হবে : যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, ইউক্রেনে আগ্রাসন চালানোর জন্য রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন একাই দায়ী।
এজন্য তাকে দীর্ঘ মেয়াদে অব্যাহতভাবে চড়া মূল্য গুনতে হবে। ন্যাটো ও যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের পাশে আছে। প্রথম স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন ভাষণে তিনি বলেন, স্বৈরশাসকদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা না নিলে তারা আরও বেশি ভয়ংকর হয়ে ওঠে।
জো বাইডেন বলেন, ইতিহাসে দেখা গেছে, আগ্রাসী আচরণের কারণে স্বৈরশাসকরা যদি মূল্য না দেন, তা হলে তারা আরও বিশৃঙ্খলা তৈরি করেন।
তিনি বলেন, কোনো রকম উসকানি ছাড়াই রাশিয়া পূর্বপরিকল্পিতভাবে ইউক্রেনে হামলা করেছে। ইউক্রেনের জনগণের প্রশংসা করে তিনি বলেন, তারা হলেন ‘শক্তিশালী প্রাচীরের’ মতো, যেটি কেউ ধারণা করেনি।
ইউক্রেন দখল রাশিয়ার জন্য খুব কঠিন হবে : ইউক্রেনের বড় শহরগুলোয় প্রবেশ করতে গিয়ে রাশিয়া বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে বলে দাবি করেন ব্রিটিশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেন ওয়ালেস।
তিনি বলেন, ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনী এবং বেসামরিক নাগরিকরা হাতের কাছে পাওয়া সবকিছু দিয়েই এগোতে থাকা শত্রুদের প্রতিহত করছেন।
সম্প্রতি বিবিসি ব্রেকফাস্ট অনুষ্ঠানে বেন ওয়ালেস বলেন, রাশিয়ার সামরিক কৌশল হলো বড় শহরের কেন্দ্রগুলো ঘিরে ফেলে নির্বিচারে বোমাবর্ষণ।
এরপর একটা জনগোষ্ঠীকে আটকে ফেলে তাদের ভেঙে পড়ার আশায় থাকা আর পরে অবশিষ্ট কিছু থাকলে তা দখল করা। তিনি আরও বলেন, কিন্তু ইউক্রেনের ভূ-প্রাকৃতিক আকার এবং ৪ কোটি ৪০ লাখ মানুষের বিশাল জনগোষ্ঠী রুশ দখলদারত্বকে ‘খুবই কঠিন’ করে তুলবে।
এ সময় তিনি চেচনিয়ায় রাশিয়ার অভিজ্ঞতা, আফগানিস্তানে সোভিয়েত ইউনিয়নের অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘বিপুল বাহিনী নিয়ে একটি দেশে আগ্রাসন চালানো একটি বিষয়, কিন্তু ৪ কোটি ৪০ লাখ মানুষ, যারা আপনার উপস্থিতি চায় না, তাদের দখল করা ভিন্ন বিষয়।’
ন্যাটোর নো-ফ্লাই জোন বাস্তবায়নের সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়ে তিনি বলেন, রাশিয়া কোনো সীমা লঙ্ঘন করলে ইউরোপজুড়ে যুদ্ধ শুরু হয়ে যেতে পারে।
ইউক্রেনকে ইইউ’র সদস্য করার সম্মতি ইউরোপীয় পার্লামেন্টের : ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা ইইউ’র সদস্যপদ লাভের জন্য ইউক্রেন যে আবেদন জানিয়েছিল তা গ্রহণ করেছে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট।
মঙ্গলবার রাতে পার্লামেন্টে অনুষ্ঠিত এ সংক্রান্ত ভোটাভুটিতে আবেদনের পক্ষে ৬৩৪ ভোট পড়ে। বিপক্ষে ভোট দেয় ১৩ জন এবং ২৬ সদস্য ভোটদানে বিরত থাকেন।
মঙ্গলবার ইইউ’র আটটি দেশ ইউক্রেনকে এই ইউনিয়নের সদস্য করার আবেদন খতিয়ে দেখতে জরুরি বৈঠক আহ্বান করার দাবি জানিয়েছিল। ইউরোপীয় পার্লামেন্টে ইউক্রেনের আবেদন গৃহীত হওয়ার অর্থ হলো ইইউতে দেশটির সদস্যপদ পেয়ে যাওয়া নয়।
বরং ভোটাভুটির মাধ্যমে ইউক্রেনকে ইইউতে অন্তর্ভুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু হলো মাত্র। ইইউতে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার জন্য একটি দেশকে ‘কোপেনহেগেন ঘোষণা’ নামে কিছু সুনির্দিষ্ট শর্তাবলী পূরণ করতে হয়।
এসব শর্তের মধ্যে রয়েছে-মুক্ত বাজার অর্থনীতি, স্থিতিশীল গণতন্ত্র, আইনের শাসন এবং ইউরোসহ ইইউ’র সব আইন মেনে নিতে প্রস্তুত থাকা।
এর আগে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কি রোববার এক আবেদনে বলেছিলেন- প্রয়োজনে বিশেষ পন্থা অবলম্বন করে হলেও যেন তার দেশকে ইইউর অন্তর্ভুক্ত করা হয়।