শিরোনাম
প্রায় এক বছর আগের কথা। গত বছরের আগস্টে আফগানিস্তানে তালেবান ক্ষমতা দখল করার চার মাস আগে দেশ ছাড়েন আজমল রাহমানি। সপরিবার পাড়ি জমান ইউক্রেনে। নিজ দেশের সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতি থেকে বাঁচতে ইউক্রেনে আশ্রয় নেওয়ার পর আজমলের মনে হচ্ছিল তিনি যেন এক টুকরো স্বর্গ খুঁজে পেয়েছেন। তবে সেই স্বস্তির অনুভূতি আর বেশি দিন থাকল না।
আশ্রয়দানকারী দেশ ইউক্রেনেই এখন যুদ্ধের দামামা। জীবন বাঁচাতে আবারও সপরিবার পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। ইতিমধ্যে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে পোল্যান্ডে পৌঁছেছেন আজমল।
সম্প্রতি ইউক্রেন সীমান্ত পাড়ি দিয়ে পোল্যান্ডে প্রবেশের পরপরই ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপিকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন আজমল রাহমানি। তিনি বলেন, ‘আমি এক যুদ্ধ থেকে পালিয়ে অন্য আরেকটি দেশে এসেছিলাম। এখানে আরেক যুদ্ধ শুরু হয়ে গেল। খুবই দুর্ভাগ্য।’
আজমলের সঙ্গে আছেন তাঁর স্ত্রী মিনা, সাত বছর বয়সী মেয়ে মারওয়া এবং ১১ বছর বয়সী ছেলে ওমর। পোল্যান্ড সীমান্তে পৌঁছাতে পরিবারটিকে ১ হাজার ১১০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হয়েছে। এর মধ্যে সর্বশেষ ৩০ কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে পাড়ি দিয়েছেন তাঁরা।
পোল্যান্ডের সীমান্তবর্তী এলাকা মেদিকাতে পৌঁছানোর পর অন্য শরণার্থীদের সঙ্গে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন আজমল। সেখান থেকে পোল্যান্ডের শেমিসল শহরে যাওয়ার কথা রয়েছে তাঁদের।
ইউক্রেনে যুদ্ধ পরিস্থিতি থেকে বাঁচতে গত কয়েক দিনে কয়েক লাখ মানুষ আশপাশের দেশগুলোতে পাড়ি জমিয়েছেন। এর মধ্যে একটা বড় অংশের গন্তব্যস্থল পোল্যান্ড, হাঙ্গেরি ও রোমানিয়া। শরণার্থীদের বেশির ভাগই ইউক্রেনীয় নাগরিক হলেও এর মধ্যে আফগানিস্তান, কঙ্গো, ভারত, নেপালসহ বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থী ও অভিবাসী শ্রমিকেরাও রয়েছেন।
আজমল রাহমানির বয়স চল্লিশের কোঠায়। পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর হয়ে আফগানিস্তানের কাবুল বিমানবন্দরে ১৮ বছর কাজ করেছেন তিনি। আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের চার মাস আগে দেশ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন আজমল। কারণ, তিনি হুমকি-ধমকি পাচ্ছিলেন এবং আশঙ্কা করছিলেন, তালেবান শাসনের অধীনে তাঁর সন্তানদের স্কুলে যেতে দেওয়া হবে না।
আজমল রাহমানি বলেন, ‘আফগানিস্তানে উন্নত জীবন যাপন করতাম আমি। আমার নিজের বাড়ি ছিল, ব্যক্তিগত গাড়ি ছিল, ভালো বেতন পেতাম। কিন্তু গাড়ি-বাড়ি সবকিছু বিক্রি করে দিলাম। আমার আর কিছুই থাকল না। তবে কোনো কিছুই আমার প্রিয়জন, আমার পরিবারের থেকে বড় নয়।’
রাহমানি আরও বলেন, আফগানিস্তান ছাড়ার জন্য ভিসা পেতে তাঁকে অনেক বেগ পেতে হয়েছিল। তিনি ইউক্রেনকে বেছে নিয়েছিলেন। কারণ, তাঁর মনে হয়েছিল, এটিই একমাত্র দেশ, যেটি তাঁকে আশ্রয় দিতে পারে। গত বছর ইউক্রেনে পৌঁছানোর পর কৃষ্ণসাগরসংলগ্ন বন্দর শহর ওডেসাতে বসতি গড়ে তোলেন তাঁরা। তবে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা শুরুর পর আবারও সবকিছু ছাড়তে বাধ্য হন আজমল ও তাঁর পরিবার।
আজমল রাহমানি ও তাঁর পরিবারের কারও পোলিশ ভিসা নেই। অভিবাসীদের নিয়ে কাজ করা দাতব্য সংস্থা ওসালেনিয়ে ফাউন্ডেশনের আইনজীবী তোমাস পিতজাক বলেছেন, যেসব পরিবারের কাছে পোলিশ ভিসা নেই, তাদের ১৫ দিনের মধ্যে নিবন্ধন করতে হবে। তবে তোমাস মনে করেন, এত বিপুলসংখ্যক শরণার্থীর নিবন্ধনের জন্য এই সময়সীমা খুব কম হয়ে যায়। তিনি মনে করেন, পোল্যান্ড সরকারকে শিগগিরই এই বিধি সংশোধন করতে হবে।
আজমল রাহমানি বলেছেন, তিনি ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন। তবে পোলিশ সীমান্তে স্বেচ্ছাসেবী ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছ থেকে পাওয়া উষ্ণ অভ্যর্থনায় উদ্বুদ্ধ হয়েছেন তিনি। আজমল বলেন, ‘তাঁরা আমাদের শক্তি জুগিয়েছেন।’