শিরোনাম
রোহিঙ্গাদের ওপর নিষ্ঠুর ও অমানবিক আচরণ করে বিশ্বকে নিজেদের উগ্রতার কথা জানান দিয়েছিল মিয়ানমারের সেনাবাহিনী।
ধর্ষণ, লুট আর বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ করে রোহিঙ্গাদের জীবন বিভীষিকাময় করে তুলেছিল মিয়ানমারের সেনারা।
বিশ্বব্যাপী এ নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠলেও তা নিয়ে কোনো পাত্তা দেয়নি সেনাবেষ্টিত মিয়ানমার সরকার। উল্টো সু চির সরকার রোহিঙ্গা ইস্যুতে সেনাবাহিনীর অবস্থানকে জোড়ালোভাবে সমর্থন করে গিয়েছেন। শেষ পর্যন্ত সেই সেনাবাহিনীর হাতেই ক্ষমতাচ্যুত হন অং সান সু চি। সেনাবাহিনী ক্ষমতা নেওয়ার পর গোটা মিয়ানমারজুড়ে এখন চরম নিরাপত্তাহীনতা।
সেনা আতংকে নারীরা কোথায় যান?
আলজাজিরার খবরে বলা হয়, মিয়ানমারের জান্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধের কেন্দ্রবিন্দু এলাকা পশ্চিমাঞ্চল সাগাইংয়ে নারীরা এখন সেনা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। আসন্ন বিপদ ইঙ্গিত পেয়েই তারা পালিয়ে যান নিকটস্থ জঙ্গলে। জান্তা সেনাদের আসার কোনো খবর এলেই ধর্ষণাতঙ্কে পালিয়ে যান নারীরা।
পুরুষরা পালান প্রাণভয়ে, সেনারা লুটতরাজের পাশাপাশি মানুষ হত্যাও করছে।
আলজাজিরার খবরে বলা হয়, উত্তর-পশ্চিম সাগাইং অঞ্চলের বাসিন্দা খাইন থু। এ যাবত কমপক্ষে ১৫ বার পালিয়েছেন বাড়ি থেকে। সৈন্যদের আসার খবর শুনেই তিনি দ্রুত ছুটে পালান জঙ্গলের দিকে। শুধু তিনিই নন, সঙ্গে থাকেন অন্য নারীরাও। সৈন্যদের গ্রামছাড়ার খবর পেলে আবার চুপি চুপি ফেরেন আপন আঙিনায়।
গত এপ্রিল থেকেই জান্তাবিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল ছিল এই অঞ্চল। প্রতিরোধের শক্ত ঘাঁটি হিসাবে পরিচিত সাগাইং তাই সামরিক অভিযানের হটস্পটে পরিণত হয়েছে। গত জুলাই থেকে এই অঞ্চলের মোট ১০৯ বাসিন্দা নিহত হয়েছেন বলে একটি প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে।
খাইন থু (ছদ্মনাম) বলেন, ‘গ্রামবাসী দেৌড়ানোর জন্য সদাপ্রস্তুত থাকে। এমনকি সৈন্যরা চলে যাওয়ার পরও গ্রামটিতে বিরাজ করে ভুতুড়ে নীরবতা। দোকানপাট-হাটবাজার সবই বন্ধ হয়ে যায়।'
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা পালিয়ে গিয়ে তো এক সপ্তাহের বেশি থাকতে পারি না। কারণ মেৌলিক মানবিক চাহিদাগুলো তখন প্রকট হয়ে ওঠে। জঙ্গলে তো আর সেসব নিয়ে যাওয়া যায় না। শুধু তাই নয়, জঙ্গলে বিশুদ্ধ পানিরও বেশ অভাব থাকে।'
কোনো কোনো দিন শুধু লবণ দিয়ে মাছের ভর্তা দিয়ে ভাত খেয়েছিলেন তারা।
থু বলেন, ‘আমি সত্যিই হতাশ। এমন জীবন আর রাখতে চাই না।’ মে মাসে, সাগাইং অঞ্চলে ১৫ বছর বয়সি একটি মেয়েকে ধর্ষণের পর হত্যা করেছিল মিয়ানমারের জান্তা সেনারা।
২৬ সেপ্টেম্বর স্থানীয় সংবাদ মাধ্যম ডেমোক্রেটিক ভয়েস অব বার্মা এবং খিত থিত মিডিয়ার এক রিপোর্টে বলা হয়, কানি টাউনশিপে চার নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন জুন থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে।
আগস্টে সৈন্যরা প্রায় ১০ দিনের জন্য গ্রাম দখল করে। সেবার তারা ৩০টিরও বেশি বাড়িতে অভিযান চালায়। ঘর তালাবদ্ধ করে গেলেও, এসে ঘরে কিছুই পাননি সাগাইং কিংবা কানির পালিয়ে বাঁচা জনগণ। ভাঙচুর আর লুটপাট করে নিয়ে গেছে সব। তারা একটি বাড়ির ফ্রিজ তুলে নিতে না পারলেও সেটিকে বালি দিয়ে ভরাট করে গিয়েছিল বলে জানিয়েছেন সংশি্লষ্ট বাসিন্দা।
সূত্রঃ যুগান্তর