‘স্বৈরশাসক’ পুতিনকে বাইডেনের হুঁশিয়ারি

ফানাম নিউজ
  ০৩ মার্চ ২০২২, ০০:৪১

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে ‘স্বৈরশাসক’ বলে অভিহিত করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তিনি বলেছেন, পুতিন ইউক্রেনে যুদ্ধক্ষেত্রে সফলতা পেলেও এই হামলার জন্য তাঁকে দীর্ঘ মেয়াদে চড়া মূল্য দিতে হবে। 

প্রথম স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন ভাষণে বাইডেন এই হুঁশিয়ারি দেন। ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার এক সপ্তাহের মাথায় বাইডেনের দেওয়া এই ভাষণকে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। মার্কিন কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশন ও জনগণের উদ্দেশে এই ভাষণ দেন দেশটির প্রেসিডেন্ট।

ভাষণে বাইডেন বলেন, সামনে কী আসছে, সে সম্পর্কে তাঁর (পুতিন) কোনো ধারণাই নেই। ইউক্রেনে রাশিয়ার সেনা পাঠানোর জন্য বিশ্ব তাঁকে একঘরে করেছে। রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরও শক্তিশালী নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হবে, যা তাঁর অর্থনৈতিক শক্তি ধসিয়ে দেবে এবং সামরিক বাহিনীকে দুর্বল করবে।

বাইডেন তাঁর বক্তব্যে বিশ্বে গণতন্ত্র বনাম স্বৈরতন্ত্রের লড়াইয়ের বিষয়টিও তুলে ধরেন। পুতিনের সমালোচনা করে বাইডেন বলেন, ‘রাশিয়ার একজন স্বৈরশাসক আরেকটি দেশে হামলা চালাচ্ছেন, যার মূল্য দিতে হচ্ছে পুরো বিশ্বকে। কিন্তু গণতন্ত্র ও স্বৈরতন্ত্রের লড়াইয়ে এ মুহূর্তে গণতন্ত্রেরই উত্থান ঘটছে এবং গোটা বিশ্ব স্পষ্টতই শান্তি ও নিরাপত্তার পক্ষ নিয়েছে।’ মার্কিন প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, ‘তিনি (পুতিন) হয়তো ভেবেছিলেন, পশ্চিমা বিশ্ব ও ন্যাটো (ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক হামলার) কোনো জবাব দেবে না। তিনি আমাদের বিভক্ত করতে পারবেন বলে ভেবেছিলেন। কিন্তু পুতিনের ধারণা ভুল। আমরা এখন ঐক্যবদ্ধ রয়েছি।’

ভাষণের আগে মঙ্গলবার সকালে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে ফোনে কথা বলেন বাইডেন। তখন ইউক্রেনে মার্কিন সেনাদের সরাসরি যুদ্ধে অংশ নেওয়ার জন্য বাইডেনকে অনুরোধ করেন জেলেনস্কি। তবে ইউক্রেন যুদ্ধে মার্কিন সেনা পাঠানো হবে না জানিয়ে বাইডেন বলেন, ‘আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, ইউক্রেনে রুশ সেনাদের সঙ্গে মার্কিন সেনারা সংঘাতে জড়ায়নি এবং কখনো এ সংঘাতে জড়াবে না।’ ইউক্রেনে যুদ্ধ করতে ইউরোপে মার্কিন সেনা মোতায়েন করা হয়নি, বরং পুতিন পশ্চিমে অগ্রসর হতে থাকায় ন্যাটো মিত্রদের রক্ষায় মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানান তিনি। বাইডেন বলেন, পুতিন হয়তো কিয়েভের চারপাশ ট্যাংক দিয়ে ঘিরে রাখতে পারেন, তবে ইউক্রেনের মানুষের মন ও হৃদয় কখনোই জয় করতে পারবেন না।

ভাষণে রাশিয়ার বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞারও ঘোষণা দেন বাইডেন। যুক্তরাষ্ট্রের আকাশসীমায় রাশিয়ার উড়োজাহাজ চলাচল নিষিদ্ধের ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, ভবিষ্যতে রাশিয়ার সেনাবাহিনীকে বেকায়দায় ফেলতে আরও পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, তাঁরা প্রযুক্তি খাতে রাশিয়ার প্রবেশাধিকার কেড়ে নিচ্ছেন। এই পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে সামনের বছরগুলোতে রাশিয়ার অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি কমে যাবে। রাশিয়ার সেনাবাহিনী দুর্বল হয়ে পড়বে।

তেলের জোগান দেবে যুক্তরাষ্ট্র

মস্কোকে কোণঠাসা করতে একগুচ্ছ অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ একাধিক দেশ। এর কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে হু হু করে বাড়ছে অপরিশোধিত তেলের দাম। গতকাল বুধবার তা গিয়ে ঠেকেছে প্রতি ব্যারেল ১১০ ডলারে। এ পরিস্থিতিতে বাজারে তেলের জোগান দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন বাইডেন। বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম নিয়ে মঙ্গলবার বৈঠকে বসে প্যারিসভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সি বা আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থা (আইইএ)। আলোচনার পর বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, আন্তর্জাতিক বাজারে ভারসাম্য বজায় রাখতে ৬০ মিলিয়ন ব্যারেল অপরিশোধিত তেলের জোগান দেবে সংস্থাটির অন্তর্ভুক্ত দেশগুলো। এর অর্ধেকটাই আসবে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে।

এ বৈঠকের পর কংগ্রেসে বাইডেন বলেন, ‘আমি ঘোষণা করছি যে আরও ৩০টি দেশের সঙ্গে যৌথভাবে আন্তর্জাতিক বাজারে ৬০ মিলিয়ন ব্যারেল তেল জোগান দেওয়া হবে। এ উদ্যোগে নেতৃত্ব দেবে আমেরিকা। আমরা বাজারে ছাড়ব ৩০ মিলিয়ন ব্যারেল তেল। প্রয়োজনে জোগান আরও বাড়াতে প্রস্তুত ওয়াশিংটন।’