শিরোনাম
রুশ আগ্রাসন চলছে। এর মধ্যেই স্থিতিশীলতা আনতে ও যুদ্ধ থামানোর উদ্দেশে বেলারুশে আলোচনায় বসে রাশিয়া ও ইউক্রেনের প্রতিনিধিরা। তবে প্রথমবারের আলোচনায় কোনো সমাধান আসেনি; তেমনটি আশাও করেনি কোনো পক্ষই।
গোপনীয়তার মধ্যে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকের দুই পক্ষের দাবি নিয়ে আলোচনার জন্য নিজ নিজ দেশে ফিরে গেছে। এতে দুই পক্ষের মধ্যে আরও আলোচনা হবে বলে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।
গত সপ্তাহে ইউক্রেনে রুশ অভিযান শুরুর পর দুই পক্ষের মধ্যে এটি প্রথম আলোচনা। সোমবার ইউক্রেনের স্থানীয় সময় দুপুর ১টার একটু আগে বেলারুশে দুপক্ষের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়।
বেলারুশের গণমাধ্যম বেল্টা নিউজের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, দ্বিতীয়বার আলোচনায় বসার জন্য দুই পক্ষই এখন পরামর্শ করতে তাদের নিজ নিজ দেশে ফিরে যাবে। কয়েক দিনের মধ্যেই দুই পক্ষ ফের আলোচনায় বসতে পারে।
সোমবার আলোচনা শুরুর আগে ইউক্রেন ও রাশিয়ার প্রতিনিধিদের স্বাগত জানান বেলারুশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভ্লাদিমির মাকেই। তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট লুকাশেঙ্কো আন্তরিকভাবে আশা করছেন সংকট সমাধানে আলোচনায় সব প্রশ্নের সমাধান খুঁজে পাওয়া সম্ভব হবে। বেলারুশের জনগণও এর জন্য প্রার্থনা করছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভ্লাদিমির আরও বলেন, এ আলোচনায় উভয়পক্ষই ‘পুরোপুরি নিরাপদ বোধ করছে’। আলোচনায় যে কোনো প্রস্তাব বিবেচনা করে দেখা হবে এবং পূরণ করার চেষ্টা করা হবে। আমরা আলোচনার ফলাফলের দিকে তাকিয়ে আছি।
এদিকে আলোচনাটি ঠিক কোন জায়গায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে, সেটি নিরাপত্তার কারণে গোপন রাখা হয়েছে। শুধু বেলারুশের গোমেল অঞ্চলের প্রিপায়াত নদীর তীরের কথা জানানো হয়েছে। আলোচনায় ইউক্রেনের প্রতিনিধিদলের মধ্যে বেশ কয়েকজন ঊচ্চপদস্থ কর্মকর্তা রয়েছেন।
এদিকে এ লড়াইয়ের মধ্যেই ইউরোপের যুদ্ধরত দুই দেশ ইউক্রেন ও রাশিয়ার প্রতিনিধিরা শান্তি আলোচনা শুরু করেছেন। যুদ্ধ বন্ধের লক্ষ্যে তারা প্রতিবেশী দেশ বেলারুশে আলোচনায় বসেন।
প্রতিনিধিদলে প্রতিরক্ষামন্ত্রী অলেক্সি রেজনিকভ, প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা মাইখাইলো পোড়োলিয়াকসহ অনেকেই রয়েছেন। দুটি প্রধান দাবি নিয়ে রাশিয়ার প্রতিনিধিদের সঙ্গে ইউক্রেনের প্রতিনিধিরা আলোচনায় বসেন।
দাবিগুলো হলো-অনতিবিলম্বে যুদ্ধবিরতির চুক্তি করা এবং ইউক্রেন থেকে রাশিয়ার সব সেনা প্রত্যাহার করে নেওয়া।
ইউক্রেনের প্রতিনিধিদল বলেছে, এ মুহূর্তে যুদ্ধবিরতি এবং রুশ সেনা প্রত্যাহার চান তারা। অন্যদিকে, রাশিয়ার প্রতিনিধিদল বলেছে, তারা এমন এক বোঝাপড়া চান যাতে দুই পক্ষেরই স্বার্থরক্ষা হয়। ইউক্রেনে রুশ সামরিক অভিযানের প্রতিবাদে বিশ্বের বড় বড় শহরে বড় ধরনের বিক্ষোভ হয়েছে। যেখানে পুতিনকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালের অ্যাডলফ হিটলারের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। খবর বিবিসি, এএফপি, রয়টার্স, দ্য গার্ডিয়ান, আলজাজিরা ও সিএনএনের।
এদিকে আগ্রাসনের পঞ্চম দিনে সোমবার অর্থাৎ দুই দেশের আলোচনার দিনেও ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরে তীব্র লড়াইয়ের খবর পাওয়া গেছে। উত্তরাঞ্চলীয় শহর চেরনিহিভে রাতভর বোমা হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। তবে রাজধানী কিয়েভ ও হারকিভসহ বিভিন্ন শহরে প্রতিরোধযোদ্ধাদের মুখোমুখি হতে হয়েছে রুশ সেনাদের। বিভিন্ন স্থানে রুশ সেনারা আটক হয়েছেন। বরফের ভেতরে তাদের নিথর দেহ এবং রাস্তায় রাস্তায় বিধ্বস্ত রুশ ট্যাংক পড়ে থাকতে দেখা যায়।
প্রসঙ্গত, রোববার বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্ডার লুকাশেঙ্কো মধ্যস্থতার উদ্দেশ্যে টেলিফোন করেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলদিমের জেলেনস্কিকে। বৈঠকে বসতে রাজি হলেও জেলেনস্কি হুঁশিয়ারি দেন, চাপের মুখে একখণ্ড ভূমিও ছাড় দেয়া হবে না।
এদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের তথ্য অনুযায়ী, রাশিয়ার আক্রমণের কারণে এখন পর্যন্ত ৭ লাখেরও বেশি মানুষ ইউক্রেন ছেড়েছেন। সোমবার রুশ হামলার পঞ্চম দিনে হতাহতের সংখ্যাও অনেক। যদিও রাজধানী শহর কিয়েভের নিয়ন্ত্রণ এখন ইউক্রেনের হাতে। এদিন কারফিউ তুলে দেয়া হয়েছে কিয়েভ থেকে।