শিরোনাম
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন পূর্ব ইউক্রেনের লুহানেস্ক ও দোনেৎস্ককে স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ায় নতুন নতুন নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়ছে রাশিয়া।
নিষেধাজ্ঞা আরোপের তালিকায় রযেছে পশ্চিমা বিশ্ব, জাপান ও অস্ট্রেলিয়া। নতুন আরোপিত এসব নিষেধাজ্ঞা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ব্রিটেন, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ও জাপানের পক্ষ থেকে সম্মিলিতভাবে রাশিয়ার আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিশেষ করে ব্যাংক ও ধনী ব্যক্তিদের লক্ষ্য করে দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে জার্মানি রাশিয়ার থেকে যাওয়া গ্যাস পাইপ লাইন নর্ড স্ট্রিম-২ স্থগিত করার ঘোষণা দিয়েছে। খবর আল জাজিরার।
এখন পর্যন্ত রাশিয়ার বিরুদ্ধে যেসব নিষেধাজ্ঞা আরোপ হয়েছে সেগুলো হলো-
যুক্তরাষ্ট্র
রাশিয়াকে আন্তর্জাতিক অর্থায়ন থেকে বিচ্ছিন্ন এবং তাদের দুটি বৃহৎ ব্যাংকের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসে এক ভাষণে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সোমবার দিনের শেষের দিকে পূর্ব ইউক্রেন সীমান্ত পেরিয়ে দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক অঞ্চলে সেনা পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন। কার্যত এটি ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের সূচনা।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বলেন, তার নিষেধাজ্ঞা রাশিয়া সরকারকে পশ্চিম থেকে অর্থ সংগ্রহ বন্ধ করে দেবে এবং রাশিয়া যদি তার বাহিনী নিয়ে পশ্চিম ইউক্রেনের দিকে অগ্রসর হয়, তবে তাকে আরও বেশি মূল্য দিতে হবে।
ওয়াশিংটন রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত বৃহত্তম অর্থ লগ্নিকারী প্রতিষ্ঠান ভিইবি ও প্রমজভ্যাজ ব্যাংকের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। ব্যাংক দুটিকে রুশ সরকারে আশীর্বাদপুষ্ট বলে ধারণা করা হয়। প্রতিষ্ঠান দুটির সম্মিলিত সম্পদ ৮০০ কোটি ডলারেরও বেশি। এ ছাড়া বুধবার থেকে শুরু হওয়া নিষেধাজ্ঞার আওতায় রয়েছে দেশটির ‘অভিজাত’ শ্রেণি এবং রাশিয়ার বেসামরিক নেতারাও।
যুক্তরাজ্য
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনের লুহানেস্ক ও দোনেৎস্ককে স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ায় রাশিয়ার পাঁচটি ব্যাংক ও তিনজন বিত্তবান ব্যক্তির ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাজ্য।
যে তিনজন ব্যক্তির ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে তার মধ্যে রয়েছেন গেনাডি তিমচেনকো। তিনি রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের কাছের লোক। এ নিষেধাজ্ঞার ফলে যুক্তরাজ্যে থাকা এসব ব্যাংকের টাকা ও তিন ব্যক্তির সব সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত হতে যাচ্ছে।
যুক্তরাজ্যের সংসদে দেওয়া বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেন, এটি হলো নিষেধাজ্ঞার প্রথম ধাপ, আমরা যা করার প্রস্তুতি নিয়েছিলাম এটি তার প্রথম সিদ্ধান্ত।
তিনি আরও বলেন, যুক্তরাজ্যে এসব ব্যাংকের যে সম্পত্তি আছে তার সব বাজেয়াপ্ত করা হবে। যে সব ব্যক্তিদের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে তারা যুক্তরাজ্যে প্রবেশ করতে পারবেন না।
যে পাঁচটি ব্যাংককে যুক্তরাজ্য নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সেগুলো হলো- রসিয়া, আইএস ব্যাংক, জেনারেল ব্যাংক, প্রোমসাভায়াজ ব্যাংক এবং ব্ল্যাক সি ব্যাংক।
এদিকে যুক্তরাজ্য আরও হুমকি দিয়েছে রাশিয়ার কোম্পানিগুলোকে মার্কিন ডলার ও ব্রিটিশ পাউন্ড ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হবে। যেন তারা তাদের অর্থের পরিমাণ না বাড়াতে পারে।
জার্মানি
রাশিয়া থেকে গ্যাস বয়ে নিয়ে যাওয়া নর্ড স্ট্রিম-২ পাইপলাইনের কার্যক্রম স্থগিত করার ঘোষণা দিয়েছে জার্মানি। ১১.৬ বিলিয়ন ডলারের প্রকল্পটি রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন গ্যাস জায়ান্ট গ্যাজপ্রমের মালিকানাধীন।
ইউক্রেন
ইউক্রেনের সংসদ দেশটির বিচ্ছিন্নতাবাদী-নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলগুলোর স্বাধীনতার স্বীকৃতিদানকারী ও পূর্ব ইউক্রেনে রাশিয়ান সেনা প্রবেশ সমর্থনকারী আইনপ্রণেতাসহ ৩৫১ রুশ নাগরিকের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। নিষেধাজ্ঞার আওতায় ওই ব্যক্তিরা ইউক্রেনে কোনো ধরনের কার্যকলাপ করতে পারবেন না।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন
রাশিয়ার ওপর সবচেয়ে কঠোর নিষেধাজ্ঞা ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ)। এ নিষেধাজ্ঞার আওতায় রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু, রাশিয়ার সেনাপ্রধান ও রুশ আইনসভার ডুমার ৩৫১ জন ডেপুটি আছেন। একই সঙ্গে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা ও ব্যাংকিং খাতের সঙ্গে জড়িত অন্যান্য আরও ২৭ কর্মকর্তা ও প্রতিষ্ঠানের ওপরও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। ইইউয়ের এ নিষেধাজ্ঞা যুক্তরাষ্ট্র কিংবা যুক্তরাজ্যের ঘোষিত নিষেধাজ্ঞার চেয়ে বেশি কঠোর।
জাপান ও অস্ট্রেলিয়া
জাপান ও অস্ট্রেলিয়াও ইউক্রেনের বিরুদ্ধে আগ্রাসনে জড়িত রুশ নাগরিকদের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দিয়েছে।
জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা জাপানে রাশিয়ান বন্ড ইস্যু নিষিদ্ধ করার কথা বলেছেন। সেই সঙ্গে তিনি রাশিয়ার বেশ কয়েকজন ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের পাশাপাশি তাদের সম্পদও জব্দ করবেন।
এছাড়া তিনি রাশিয়া থেকে জ্বালানি আমদানি বন্ধ রাখার বিষয়েও ভাবছেন বলে জানা গেছে।
জাপানের প্রধানমন্ত্রী বলেন, মস্কো ইউক্রেনের দোনেৎস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করে সেখানে রুশ সেনাদের প্রবেশের অনুমতি দিয়ে দেশটির সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করেছে। রাশিয়ার এ কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে টোকিও আরও কঠোর পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে।