শিরোনাম
রাশিয়া আক্রমণ করলে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির রাজধানী কিয়েভ ছাড়ার পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হয়েছে বাইডেন প্রশাসন ও ইউক্রেনীয় সরকারের কর্মকর্তাদের মধ্যে।
সংশ্লিষ্ট দুটি সূত্রের বরাতে মঙ্গলবার (২২ ফেব্রুয়ারি) এ তথ্য জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম এনসিবি নিউজ।
খবরে বলা হয়েছে, রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করলে জেলেনস্কিকে কিয়েভ থেকে পোল্যান্ডের কাছাকাছি লভিভ শহরে সরিয়ে নেওয়া হতে পারে। পোল্যান্ড সীমান্ত থেকে লভিভের দূরত্ব মাত্র ৫০ মাইলের মতো। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেন সরকারের কর্মকর্তাদের মধ্যে এই আলোচনার পাশাপাশি সোমবার (২১ ফেব্রুয়ারি) মর্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্টেরও সরাসরি টেলিফোনে কথা হয়েছে।
ইউক্রেন সীমান্তে রুশ সেনা সমাবেশের জেরে গত ১২ ফেব্রুয়ারি কিয়েভ দূতাবাসের বেশিরভাগ কর্মীকে সরিয়ে নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। কিয়েভের বদলে এখন লভিভ থেকেই কার্যক্রম পরিচালনা করছে মার্কিন প্রশাসন।
জেলেনস্কিকে কিয়েভ থেকে সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র-ইউক্রেনের কর্মকর্তাদের মধ্যে আলোচনা সম্পর্কে জানতে চাইলে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের মুখপাত্র।
ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্টের এক মুখপাত্র বলেছেন, বাইডেন ও জেলেনস্কির মধ্যে আলোচনায় কিয়েভ ত্যাগের বিষয়ে কোনো কথা হয়নি। তবে সরকারের নিম্নপর্যায়ে এ নিয়ে কোনো কথা হয়েছে কি না, তা তিনি জানেন না।
এনবিসি নিউজের খবরে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা সরকারগুলো রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের হুমকি নিয়ে বাড়াবাড়ি করছে, জেলেনস্কি সম্প্রতি এমন অভিযোগ করলেও তার সরকার ঠিকই কয়েক সপ্তাহ ধরে গোপনে সম্ভাব্য রুশ আক্রমণের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছে। স্পর্শকাতর তথ্য-প্রযুক্তি ও সামরিক কমান্ড সংশ্লিষ্ট জিনিসপত্র এরই মধ্যে কিয়েভের বাইরে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
সূত্রের ভাষ্যমতে, প্রস্তুতির জন্য তারা (ইউক্রেন সররকার) সম্ভাব্য সব করেছে। আর তা করা হয়েছে খুব নিরিবিলি। সরকারি বিবৃতি দেওয়া হয়েছে খুব সতর্কভাবে। জনগণের মধ্যে আতঙ্ক না বাড়িয়ে রাশিয়াকে বার্তা দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে যে, ইউক্রেন আক্রমণ করলে তারা কঠোর প্রতিরোধের সম্মুখীন হবে।
এরপরও ইউক্রেন সরকারের অনেকেই মনে করছেন, রাজধানীতে জেলেনস্কির অবস্থান ক্রমেই অরক্ষিত হয়ে পড়ছে। এ কারণেই তাকে সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা প্রস্তুত করা হচ্ছে।
ইউক্রেনে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত জন হার্বস্ট বলেছেন, রাশিয়া আক্রমণ করলে কোনো সমস্যা ছাড়াই যেন কার্যক্রম চালানো যায়, তা নিশ্চিত করতে উদ্যোগ নিয়েছে জেলেনস্কি প্রশাসন। তিনি বলেন, আমার মনে হয়, সরকার চালিয়ে যেতে তারা বিকল্প কোনো পরিকল্পনা প্রস্তুত করেছে। তবে মন্ত্রিসভা ঠিক কোথায় সরিয়ে নেওয়া হতে পারে, তা বলতে পারেননি তিনি।
ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দুটি বিচ্ছিন্নতাবাদী অঞ্চল দোনেৎস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন দেশের স্বীকৃতি দিয়েছে রাশিয়া। সোমবার এক ভাষণে মস্কোপন্থিদের নিয়ন্ত্রিত অঞ্চল দুটির নিরাপত্তায় সেনা পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তবে তার এ ঘোষণায় ইউক্রেন ভয় পায় না বলে মন্তব্য করেছেন প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। বলেছেন, তারা শান্তি চান ঠিকই, কিন্তু নিজেদের এক খণ্ড জমিও কাউকে দখল করতে দেবেন না।
মঙ্গলবার টেলিভিশনের এক ভাষণে জেলেনস্কি বলেন, ইউক্রেন আট বছর আগের সেই দেশ আর নেই, যখন রাশিয়া অবৈধভাবে ক্রিমিয়া দখল করেছিল। এটি ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি নয়, এটি ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি। এটি সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি দেশ, ভিন্ন সেনাবাহিনী, তবে লক্ষ্য একই- শান্তি।
তিনি বলেন, আমরা কূটনৈতিক উপায়ে এ সমস্যার সমাধান চাই। আমরা কোনো উসকানিতে সাড়া দেবো না।