শিরোনাম
পাকিস্তান সরকার নতুন সাইবার অপরাধ আইন করেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেশটির সামরিক, বিচার বিভাগ বা সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ভুয়া খবর পোস্ট করলে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে। তবে সমালোচকেরা বলছেন, আইনটি পাকিস্তানে মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে হরণ করার সর্বশেষ উদাহরণ। ইতিমধ্যে গণমাধ্যম কর্মীদের জন্য পাকিস্তান বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক দেশ হিসেবে তালিকায় স্থান পেয়েছে।
গতকাল সোমবার পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট দপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, নতুন আইনটি প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের পর তা দ্রুত অনুমোদন করেন প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি। প্রেসিডেন্টের অনুমোদনের পর পরই আইনটি কার্যকর বলে বিবেচিত হবে। তবে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য প্রেসিডেন্টের অনুমোদনের তিন মাসের মধ্যে আইনটি সংসদে উপস্থাপন করতে হবে। ধারণা করা হচ্ছে, ইমরান খানের জোট সরকার সহজেই আইনটি পাস করাতে পারবে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পাকিস্তানে ভিন্নমতের জায়গা সংকুচিত হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নজরদারি এবং ঐতিহ্যবাহী গণমাধ্যমগুলোর স্বাধীনতা হরণের অভিযোগ রয়েছে পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে। গণমাধ্যমগুলো বলছে, ওপর মহল থেকে চাপ থাকায় তারা সেল্ফ–সেন্সরশিপ আরোপ করে কাজ করছে।
পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনীর সমালোচনাকে দীর্ঘদিন ধরে বিপজ্জনক হিসেবে দেখা হচ্ছে এবং অধিকার রক্ষায় কাজ করা প্রতিষ্ঠানগুলোর দাবি, নিরাপত্তা বাহিনী ও রাষ্ট্রীয় অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে সমালোচনা থেকে সুরক্ষা দেবে নতুন আইন।
আইনটি অগণতান্ত্রিক অভিহিত করে পাকিস্তানের মানবাধিকার কমিশন বলেছে, এটি অবশ্যই সরকার ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের ভিন্নমত ও সমালোচকদের দমন করতে ব্যবহার করা হবে।
কোনো ব্যক্তির মানহানি বা ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ক্ষতি করতে পারে, এমন ভুয়া তথ্য অনলাইনে ছড়ানো ঠেকাতে বিদ্যমান মানহানির আইন সংশোধন করে নতুন সাইবার আইনটি করা হয়েছে। নতুন আইনে সর্বোচ্চ সাজা তিন বছর থেকে বাড়িয়ে পাঁচ বছর করা হয়েছে। এমনকি অভিযুক্ত ব্যক্তি জামিন পাবেন না, তার মানে কারাগারে থেকেই তাঁর বিচার শুরু হবে।
গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করার জন্য এই আইন করা হচ্ছে বলে যে গুঞ্জন উঠেছে, তা ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছেন বিচারমন্ত্রী ফারোগ নাসিম। তিনি গত রোববার বলেন, প্রকাশ্য সমালোচনা করা যাবে; তবে কোনো ভুয়া খবর প্রচার করা যাবে না।
পাকিস্তান ফেডারেল ইউনিয়ন অব জার্নালিস্ট আদালতে এ আইনের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ করার ঘোষণা দিয়েছে। সংগঠনটি বলছে, সংবাদপত্র এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ক্ষেত্র সংকুচিত করার লক্ষ্যে এ আইন করা হয়েছে।
বিশ্বজুড়ে সরকারগুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে ভুয়া তথ্য ছড়ানো ঠেকাতে বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে। তবে অনেক দেশ তথাকথিত ভুয়া খবর ঠেকানোর অজুহাতে তাদের বিরুদ্ধে ওঠা প্রতিবেদনগুলো প্রত্যাখ্যান করছে এবং নিজেদের প্রচারের জন্য ব্যবহার করছে।