কেন ‘পদ্মশ্রী’ ফিরিয়ে দিয়েছিলেন সন্ধ্যা?

ফানাম নিউজ
  ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৬:৪৪

গত ২৬ জানুয়ারি ছিল ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবস। ঠিক তার আগের দিন (২৫ জানুয়ারি) ঘোষণা করা হয় পদ্মশ্রী পুরস্কারের তালিকা। সে তালিকায় নাম ছিল উপমহাদেশের কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের। তবে ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ বেসামরিক এ সম্মাননা দ্বিধাহীন চিত্তে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন তিনি। দীর্ঘ ৭৫ বছরের সংগীত জীবন পাড়ি দেওয়া এ শিল্পীর এমন সাহসী সিদ্ধান্তে সেদিন চোখ কপালে উঠেছিল অনেকের।

সেই সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় জীবনের ৯০ বসন্ত পেরিয়ে পাড়ি জমিয়েছেন নক্ষত্রের দেশে। তার চিরপ্রস্থানের শোকে মুহ্যমান গোটা ভারতের সংগীতাঙ্গন। মঙ্গলবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় কলকাতার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

মৃত্যুর দিনে আবারও ঘুরেফিরে সামনে আসছে তার পদ্মশ্রী পুরস্কার প্রত্যাখ্যানের বিষয়টি। কেন তিনি এত বড় সম্মাননা অবলীলায় ফিরিয়ে দিয়েছিলেন? এর নেপথ্যের গল্পটা কী?

বর্ষীয়ান সংগীতশিল্পী পুরস্কার প্রত্যাখ্যানের প্রতিক্রিয়ায় সেদিন ভারতীয় বিভিন্ন গণমাধ্যমে বলেছিলেন, ‘এভাবে কেউ পদ্মশ্রী দেয়? এরা জানে না আমি কে? নব্বই বছরে আমায় শেষে পদ্মশ্রী নিতে হবে? আর এই ফোন করে বললেই চলে যাব আমি? শিল্পীদের কোনো সম্মান নেই?’

সন্ধ্যার অভিযোগ ছিল, এ পুরস্কারের বিষয়ে ভারত সরকার তাকে আগে থেকে কিছুই জানায়নি। ফোনে যেভাবে সম্মাননা দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, সেটি শিল্পীর কাছে যথেষ্ট অপমানজনক মনে হয়েছিল। এমনকি সেই প্রস্তাবে তাচ্ছিল্যের ছায়া ছিল। ফলে অসম্মানবোধ থেকেই পদ্মশ্রী সম্মাননা প্রত্যাখ্যানের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।

শাস্ত্রীয় সংগীত থেকে চলচ্চিত্রের গান, এমনকি আধুনিক গানের অ্যালবাম- সর্বত্র নিজস্বতার ছাপ রেখেছেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। অসংখ্য জনপ্রিয় গানের এ কণ্ঠশিল্পীর ভাষ্য ছিল- কেউ তার সংগীতের ক্যারিয়ার সম্পর্কে না জেনে হুটহাট পুরস্কার দিতে চাইলেই তিনি নিতে পারেন না।

কিংবদন্তি এ শিল্পী সংবাদমাধ্যমকে নিজের আত্মসম্মানবোধের জায়গাটি আঙুল দিয়ে দেখিয়ে সেদিন আরও বলেছিলেন, ‘আমি বলে দিয়েছি, আমার পদ্মশ্রীর কোনো দরকার নেই। শ্রোতারাই আমার সব। এ পুরস্কার নিতে আমার মন চাইছে না। এটা অনেক বড় অপমান আমার জন্য। এ অপমানের সম্মান আমি নিতে পারবো না। আমি কী কাজ করেছি, ওরা তা জানে না। আমাকে চেনেও না। সংগীতজগত সম্পর্কেও ওদের জ্ঞান নেই। এখন আমি ঠিকভাবে দাঁড়াতেও পারি না, এতদিন পর তাদের মনে হলো আমাকে পদ্মশ্রী দেওয়ার?’

ভারতে তার সময়ের প্রায় সব শিল্পীর সঙ্গে গান গেয়েছেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে তার দ্বৈত গানের কেমেস্ট্রি তো এখন বাঙালি শ্রোতার হৃদয়জুড়ে। শুধু বাংলা সিনেমাই নয়, তিনি চুটিয়ে গান করেছেন হিন্দি চলচ্চিত্রেও।

১৯৭১ সালে ‘জয়জয়ন্তী’ ও ‘নিশিপদ্ম’ চলচ্চিত্রে গান গেয়ে শ্রেষ্ঠ গায়িকা ক্যাটাগরিতে ভারতের জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিলেন সন্ধ্যা। ২০১১ সালে পশ্চিমবঙ্গের সরকার তাকে ‘বঙ্গবিভূষণ’ উপাধিতে ভূষিত করে। তবে সন্ধ্যাই প্রথম নন, এর আগে হেমন্ত মুখোপাধ্যায় ও সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়দের মধ্যে কিংবদন্তিরাও পদ্মশ্রী পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।