সিনেমা জগতের সবাই পাগল হয়ে যাচ্ছি, চিৎকার করে কাঁদলেন মালেক আফসারী

ফানাম নিউজ
  ১৯ জানুয়ারি ২০২২, ১৫:৫০

দেশীয় ছবির অন্যতম সফল পরিচালক মালেক আফসারী। বিভিন্ন সময় সোশ্যাল মিডিয়ায় নানান বিষয়ে আলোচনা, তীব্র সমালোচনা ও ক্ষোভ প্রকাশ করে ভিডিওবার্তা দেন তিনি। অভিনেত্রী শিমু হত্যার খবর শুনে ব্যথিত এই নির্মাতা। নিজের ফেসবুক পেজে শিমু হত্যার বিচার চেয়ে একটি ভিডিও পোস্ট করেছেন তিনি। সেখানে শিমুর হত্যাকারীর শাস্তির দাবির পাশাপাশি চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি, বিশেষ করে জায়েদ খানের প্রসঙ্গে নানা কথা বলেছেন। সূত্র: আরটিভি

মালেক আফসারীর সেই কথাগুলো হুবহু তুলে ধরা হলো-

'মনটা ভালো নাই। চিত্রনায়িকা শিমু, প্রায় ২০-২২টা সিনেমায় অভিনয় করেছে। এই শিল্পীটা প্রতিবাদী কণ্ঠ ছিল। প্রতিবাদী হওয়ার কারণ, শিল্পী সমিতির সদস্য পদ হারানো ১৮৪ জনের মধ্যে একজন সে। ২০-২২টা সিনেমা করার পর বাদ পড়লে প্রতিবাদী তো হবেই। তার নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেল ছিল, সেখান থেকেও প্রতিবাদ করতো। আসলে পাগল কিন্তু আমরা সবাই হয়ে যাচ্ছি সিনেমা জগতের। 

২০১৭ সালের কথা। সে সময় ১৭টা সমিতি মিলে একটা আন্দোলন করে। সেই আন্দোলনে মিশা-জায়েদের পদত্যাগ চায়। কিন্তু সেই আন্দোলনের কোনো সুফল আসেনি। তারপর আস্তে আস্তে সেই আন্দোলন নিস্তেজ হয়ে যায়। যেভাবে এখন নীরব, নিস্তেজ হয়ে গেল আমাদের শিমু।

আমার মনে আছে, শিমু একটা জায়গায় বলেছিল- আমি একজন শিল্পী। শিল্পী হয়েই মরতে চাই। সে (শিমু) চাচ্ছিল, তার সেই আইডেন্টি ছিনিয়ে নেওয়া হবে কেন?

আমার মনে হয়, সিনেমাকে যারা ফলো করেন তারা সিনেমার সব খবর জানতে পারছেন। কালকে রাতে যখন শিমু হত্যার খবর পাই, তখন আর ঘুমাতে পারি নাই। আমরা না জেনে, না বুঝে কারও ওপর আঙুল তুলতে পারি না। এটা উচিত হবে না। এটা আইনের ব্যপার।

আমার সাথে হয়তো কারও ঝগড়া হয়েছে, আমি তাকে বলছি দেখে নেব। এখন তারপর দিন যদি সে খুন হয়ে যায়, সেই খুন আমি করছি কি না সেটা পুলিশ বের করবে। আমাদের বলা উচিত হবে না।

শিমুর এই যাওয়াটা কেউ মেনে নিতে পারছে না। একটু আগে এফডিসি থেকে একটা ফোন পেলাম। ওখানে একটা হাহাকার, কান্নাকাটি চলছে। স্বজন হারানোর কান্না। এভাবে কারও মৃত্যু কেউ মেনে নিতে পারে? স্বাভাবিক মৃত্যু তো সবাই মেনে নেয়, কিন্তু কাউকে জবাই করে দেবে, টুকরো করে ফেলবে, বস্তায় ভরে ফেলে দেবে- এটা তো মানা যায় না।

প্রশাসনের কাছে আমার দাবি- আপনারা বের করুণ কে খুনি, কে এই অপকর্ম করল। খুঁজে বের করুন প্লিজ। আমার বিশ্বাস ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই বেরিয়ে যাবে। কারণ এর পেছনে র‍্যাব আছে, পুলিশ আছে। সবাই তদন্ত করছে। আমরা চাই, সত্যিকারের অপরাধী সামনে আসুক। কিন্তু না জেনে, না বুঝে কেউ কারও দিকে আঙুল তুলবেন না। এতে সম্পর্কের আরও অবনতি হবে।

একটা জায়গায় শিমু বলতেছিল- জায়েদ খানের যেকোনো পোস্টের কমেন্টে গিয়ে দেখেন তাকে মানুষ ভালোবাসে না। কথা কিন্তু সত্যি। কমেন্ট বক্সে গেলে বুঝা যায়, এই মানুষটার প্রতি কারও ভালোবাসা নাই। মানুষের ভালোবাসা থাকুক না থাকুক সে যদি কেয়ার না করে তাহলে আমাদের তো কিছু করার নাই।

আমার কথা হলো- ১৭টা সংগঠন যখন আজ থেকে দুই বছর আগে একটা আন্দোলন করল, তখনই তার (জায়েদ খান) বুঝে নেওয়া উচিত ছিল আমার ভাই ব্রা-দারের সাথে বিবাদ করে কেন আমি এই চেয়ারটা দখল করে থাকবো। এই যে সামনে নির্বাচন, এই নির্বাচনে যদি কাঞ্চন সাহেবকে সসম্মানে চেয়ারটা ছেড়ে দিতো তাহলে আমার মনে হয় তার সম্মানটা আরও বেড়ে যেত। আমি তার জায়গায় হলে ছেড়ে দিতাম।

এই যে চলচ্চিত্রের মানুষদের মধ্যে এত দলাদলি, কেউ কি ভালো বলতেছে আমাদের? একদম না। বলতেছে যে, এরা সব ফালতু। একদম নোংরামির চরম পর্যায়ে চলে গেছে।

গত দুই-তিন দিন আগেই জায়েদ খান বলেছিল, আমি কোনো একটা অশুভর ইঙ্গিত পাচ্ছি। এফডিসিতে জঙ্গি আসতে পারে, কোনো একটা অঘটন ঘটতে পারে। এই অশুভ জিনিসটা এমনভাবে ভর করল যে, একটা শিল্পীর দ্বিখণ্ডিত লাশের খবর আসল। পৃথিবী থেকেই বিদায় হয়ে গেল। ভাগ্যিস এই ঘটনাটা এফডিসির ভেতরে ঘটেনি। তাহলে কিন্তু জায়েদ খানের ওপরে পুরো দোষটা চেপে যেত। উপরওয়ালাই তাকে রক্ষা করেছে।

আমি প্রশাসনের কাছে বলবো- ভাই আপনারা প্লিজ তাড়াতাড়ি এটা বের করুন। তা না হলে আমাদের সিনেমায় একে অন্যকে দোষারোপ করবে। এতে আরও জটিলতা বাড়বে।

আমি সিনেমার সবাইকে অনুরোধ করবো- না বুঝে, না শুনে, প্রমাণ ছাড়া কাউকে খুনের দায়ে দায়ী করতে পারেন না। প্রশাসনের হাতে ছেড়ে দেন। উফ...এ রকম হবে এই সিনেমা জগত! ভাবি নাই, ভাবতে পারি নাই। এত নিচে যাব আমরা! এই চেয়ারে কি আছে, কি আছে জানি না। এই চেয়ার দখল করে রাখতে হবে কেন বুঝি না। আসেন আমরা শিমুর মৃত্যুর সঠিক বিচারের অপেক্ষায় থাকি।

সবাইকে আমি বলব, একটু সবুর ধরেন। একটু মাথা ঠান্ডা করেন সবাই। এই নির্বাচন এমন কিছু না। এই নির্বাচন দিয়ে সিনেমার কোনো পরিবর্তন চলে আসবে, দেশ-জাতি একদম উদ্ধার হয়ে যাবে- এরকম কিছু না। কিচ্ছু হবে না। মিশা-জায়েদ চার বছর ছিল কী এমন উন্নতি হয়েছে সিনেমার? লাশ নিয়ে কাঁধে করে গেছে, কুকুরকে বিস্কিট খাইয়েছে, মানুষকে খাবার দিছে- এটা হতেই পারে। এটা তো উন্নতি না। সবাই ভালো থাকবেন। আল্লাহ হাফেজ।'