শিরোনাম
বাংলা চিত্রকাহিনি বা কমিকসের প্রাণপুরুষ নারায়ণ দেবনাথ আর নেই। আজ মঙ্গলবার সকালে তিনি মারা গেছেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৬ বছর। কয়েক প্রজন্মের বাঙালি কিশোরবেলার সঙ্গী হয়ে রয়েছে নারায়ণ দেবনাথের সৃষ্টি করা একের পর এক চরিত্র। সেই হাঁদা, ভোঁদা, বাঁটুল, নন্টে, ফন্টে, কেল্টুদের রেখে চলে গেলেন স্রষ্টা নারায়ণ।
গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর কলকাতার মিন্টো পার্কের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় নারায়ণ দেবনাথকে। ১৩ জানুয়ারি প্রবীণ শিল্পীর সঙ্গে হাসপাতালে দেখা করেন পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ রায়। এ সময় তাঁর হাতে তুলে দেওয়া হয় পদ্মশ্রী সম্মান। হাসপাতালের বিছানায় শয্যাশায়ী অবস্থাতেই তিনি তা গ্রহণ করেন। শনিবার রাত সোয়া নয়টা নাগাদ শিল্পীকে ভেন্টিলেশনে দেওয়া হয়। এ অবস্থায় আজ সকালে শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
গত শতাব্দীর পাঁচের দশক থেকেই নারায়ণ দেবনাথের আঁকার সঙ্গে পরিচয় বাঙালি পাঠকের। দেব সাহিত্য কুটির থেকে প্রকাশিত ছোটদের বই হোক কিংবা ‘শুকতারা’র পাতা, তরুণ নারায়ণ দেবনাথের অলংকরণের ম্যাজিক সবাইকে মুগ্ধ করেছিল। পাঠকের আপনজন হয়ে উঠেছিলেন তিনি।
ছয়ের দশকের গোড়ার দিকে ‘শুকতারা’র সম্পাদকের অনুরোধে ‘হাঁদা ভোঁদা’র জন্ম। খানিক পরে ‘বাঁটুল দি গ্রেট’-এর সঙ্গে পরিচয় খুদে শিক্ষার্থীদের। এসে পড়ে ‘নন্টে ফন্টে’, ‘বাহাদুর বেড়াল’-রা। জনপ্রিয়তায় এদের মতো না হলেও ‘শুঁটকি আর মুটকি’, ‘পটলচাঁদ দ্য ম্যাজিসিয়ান’, ‘গোয়েন্দা কৌশিক রায়’ও বাঙালি পাঠক পড়েছেন।
নারায়ণ দেবনাথের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শোকবার্তায় তিনি লিখেছেন, ‘বিশিষ্ট শিশুসাহিত্যশিল্পী ও কার্টুনিস্ট নারায়ণ দেবনাথের প্রয়াণে আমি গভীর শোক প্রকাশ করছি। বাঁটুল দি গ্রেট, হাঁদা ভোঁদা, নন্টে ফন্টে, বাহাদুর বেড়াল প্রভৃতি চরিত্রের স্রষ্টা নারায়ণ দেবনাথ সব বয়সের পাঠকের মনে চিরস্থায়ী আসন লাভ করেছেন।… আমি নারায়ণ দেবনাথের পরিবার-পরিজন ও অনুরাগীদের আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছি।’
কলকাতার দৈনিক আনন্দবাজারের খবরে বলা হয়েছে, ১৯২৫ সালে কলকাতার হাওড়ার শিবপুরে জন্ম নারায়ণ দেবনাথের। ছোটবেলা থেকেই শিল্পের প্রতি ঝোঁক ছিল। বাড়িতে অলংকার তৈরির চল ছিল। ছোট থেকেই গয়নার নকশা তৈরি করতেন নারায়ণ দেবনাথ। স্কুলের পড়া শেষে তিনি আর্ট কলেজে ভর্তি হন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ডামাডোলে বন্ধ হয়ে যায় আর্ট কলেজে পড়া। তারপর কয়েকটি বিজ্ঞাপনী সংস্থার হয়ে কাজ করেন। ২০১৩ সালে তাঁকে সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার এবং বঙ্গবিভূষণ পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। ২০২১ সালে পান পদ্মশ্রী।