গৃহবন্দি রুশ পরিচালকের আরেক মহামারি

ফানাম নিউজ
  ১৪ জুলাই ২০২১, ১৪:০২

করোনাভাইরাসের কারণে সারা দুনিয়ার মানুষ কঠিন সময় অতিক্রম করছে। মহামারির প্রেক্ষাপটে মানুষের টিকে থাকার লড়াইয়ের প্রতিফলন ঘটছে চলচ্চিত্র নির্মাতাদের ফ্রেমে ফ্রেমে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের এমন কয়েকটি ছবি রয়েছে কান উৎসবের ৭৪তম আসরে। সেগুলোর মধ্যে অন্যতম মূল প্রতিযোগিতা বিভাগে স্বর্ণ পামের জন্য লড়াই করা “পেত্রোভ’স ফ্লু”। এর পরিচালক কিরিল সেরেব্রেনিকোভের বিদেশগমনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে রেখেছে রুশ সরকার। এ কারণে কানসৈকতে তাকে ছাড়াই আসতে হয়েছে ছবিটির কলাকুশলীদের।

পালে দে ফেস্টিভাল ভবনের গ্র্যান্ড থিয়েটার লুমিয়েরে গত সোমবার বিকালে “পেত্রোভ’স ফ্লু”র ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার হয়েছে। এর আগে কিরিল সেরেব্রেনিকোভের মুখের স্থিরচিত্র ও ইংরেজি কেএস অক্ষর সংবলিত লাল রঙের ব্যাজ পরে লালগালিচায় হেঁটেছেন প্রযোজক ও অভিনয়শিল্পীরা। প্রেক্ষাগৃহে তার জন্য প্রতীকীভাবে একটি আসন ফাঁকা রাখা হয়।

গৃহবন্দি রুশ পরিচালকের আরেক মহামারি

কানের লালগালিচায় “পেত্রোভ’স ফ্লু” ছবির কলাকুশলীরা

উদ্বোধনী প্রদর্শনী শেষে ফেসটাইমের সহায়তায় প্রেক্ষাগৃহে যুক্ত হয়ে দর্শকদের ও অত্যাধুনিক প্রযুক্তিটিকে ধন্যবাদ জানান ৫১ বছর বয়সী এই রুশ নির্মাতা। গতকাল দুপুরে সংবাদ সম্মেলনেও ফেসটাইমের মাধ্যমে যুক্ত হন তিনি। গতকাল সকালে গ্র্যান্ড থিয়েটার লুমিয়েরে এবং বিকালে সাল দ্যু সোসানতিয়েমে আরও দু’বার দেখানো হয়েছে তার ছবিটি।

আরও পড়ুন:
কান ডকসে থিঙ্ক-ফিল্ম ইম্প্যাক্ট অ্যাওয়ার্ড জিতলো ‘মুন্নি’


২০১৮ সালে প্রকাশিত আলেক্সেই সলনিকাভের পুরস্কারজয়ী উপন্যাস অবলম্বনে তৈরি হয়েছে “পেত্রোভ’স ফ্লু”। ২০ মাস গৃহবন্দি থাকাকালে এর চিত্রনাট্য লিখেছেন কিরিল সেরেব্রেনিকোভ। গল্পে দেখা যায়, সোভিয়েত-পরবর্তী রাশিয়ার একটি রহস্যজনক ফ্লু মহামারির কবলে পড়ে।

গৃহবন্দি রুশ পরিচালকের আরেক মহামারি

কানের লালগালিচায় “পেত্রোভ’স ফ্লু” ছবির কলাকুশলীরা।

কিরিল সেরেব্রেনিকোভের আগের ছবি ‘লেটো’ ২০১৮ সালে মূল প্রতিযোগিতা বিভাগে ছিলো। কিন্তু তখনও গৃহবন্দি থাকায় কানে আসতে পারেননি তিনি। ২০২০ সালের জুনে তাকে তিন বছরের কারাদণ্ড দিয়ে তা স্থগিতা রেখে অর্থ আত্মসাতের মামলায় জরিমানা করা হয়।

গৃহবন্দির সুবাদে কিরিল সেরেব্রেনিকোভকে বলা যায় আইসোলেশনের পথিকৃৎ! করোনা মহামারির কারণে সারাবিশ্বে এটি অন্যতম প্রয়োজনীয় বিষয় হয়ে গেছে। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, নিজের ওপর মনোযোগ দেওয়া মন্দ কিছু নয়। এর মাধ্যমে কখনো কখনো ভবিষ্যতের জন্য কিংবা জীবনের পরবর্তী ধাপের বেলায় নতুন উৎস খুলে যেতে পারে। আইসোলেশনে দারুণ কিছু খুঁজে বের করতে হবে। এটা সম্ভব।’


এদিকে কানের এবারের আসরে গতকাল মূল প্রতিযোগিতা বিভাগে আরও ছিলো ইরানি পরিচালক আসগর ফারহাদির ‘অ্যা হিরো’ এবং ফরাসি নারী নির্মাতা জুলিয়া দুকুরনোর ‘টাইটেনিয়াম’ ছবি দুটির ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার।

সিনেমা ও জলবায়ু বিভাগে মঙ্গলবার প্রদর্শিত হয়েছে ফরাসি নারী নির্মাতা মারি অ্যামিগেটের ‘দ্য ভেলভেট কুইন’। প্রতিযোগিতা বিভাগের বাইরে গতকাল কান কর্তৃপক্ষ দেখিয়েছে ফ্রান্সের ভ্যালেরি লুমেরসিয়ার পরিচালিত ‘অ্যালিন, দ্য ভয়েস অব লাভ’। কান প্রিমিয়ারে ছিলো ফরাসি পরিচালক আরনো দেপ্লেশাঁর ‘ডিসিপশন’। স্পেশাল প্রদর্শনীতে মঙ্গলবার প্রদর্শিত হয়েছে ফরাসি তারকা নোয়েমি মারল্যঁ পরিচালিত ও অভিনীত ‘মি ইউবিতা মাই লাভ’। মিডনাইট সেশনে দর্শকরা উপভোগ করেছেন ফ্রান্সের ভ্রাতৃদ্বয় জ্যঁ-মারি লারিউ পরিচালিত ‘ত্রালালা’।

উৎসবের অষ্টম দিন আঁ সার্তে রিগায় ছিলো আইসল্যান্ডের ভালদিমার ইওহানসন পরিচালিত প্রথম ছবি ‘ল্যাম্ব’। চীনের না জিয়াজো পরিচালিত প্রথম ছবি ‘স্ট্রিটওয়াইজ’। এছাড়া দেখানো হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের জাস্টিন চন পরিচালিত ‘ব্লু বায়ো’।


ধ্রুপদি ছবির বিভাগ কান ক্ল্যাসিকসে গতকাল মাস্টারক্লাসে আলাপ করেছেন ফরাসি অভিনেত্রী ইজাবেল উপার। এছাড়া দেখানো হয়েছে আইভরি কোস্টের পরিচালক অঁরি দুপার্কের ‘ড্যান্সিং ইন দ্য ডাস্ট’ (১৯৮৯) ছবির পুনরুদ্ধার করা সংস্করণ।

কান শহরের জেডব্লিউ ম্যারিয়টের থিয়েটার ক্রজেট, এসপাস মিরামার, আর্কেডস, পালে জি, আলেকস্যঁন্দ থ্রি এবং অলিম্পিয়া থ্রি প্রেক্ষাগৃহে দিনভর প্রদর্শিত হয়েছে প্যারালাল বিভাগ ডিরেক্টরস ফোর্টনাইট, ইন্টারন্যাশনাল ক্রিটিকস উইক এবং এসিডে নির্বাচিত ছবিগুলো। এছাড়া সাল বুনুয়েলে শিক্ষার্থী নির্মাতাদের বিভাগ সিনেফঁদাসোর আয়োজন এবং সাল দ্যু সোসানতিয়েমে ছিলো ট্যালেন্টস আদামি সিনেমা।