শিরোনাম
বিতর্কিত কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে ভারতজুড়ে লাখ লাখ কৃষক বিক্ষোভ চালিয়েছেন। এই বিক্ষোভের মুখে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জাতির উদ্দেশে এক ভাষণে বলেছেন, তিনটি কৃষি আইন প্রত্যাহার করে নেবে সরকার। কৃষক আন্দোলনের কাছে মোদির এমন পরাজয় স্বীকারে ক্ষুব্ধ বলিউড অভিনেত্রী কঙ্গনা রানাউত। শুরু থেকেই কৃষি আইনের পক্ষে ছিলেন তিনি। ফলে প্রকাশ্যেই রাগ দেখিয়েছেন এই অভিনেত্রী। সূত্র: আরটিভি
ইনস্টাগ্রামে দেওয়া এক পোস্টে কঙ্গনা লিখেছেন, ‘তবে কী এবার রাস্তায় নামা মানুষই দেশের আইন ঠিক করবে? নির্বাচিত সরকার নয়? যদি তা-ই হয় তবে এই দেশটাও তো জিহাদি দেশ হয়ে গেল।’ তিনি মনে করেন, এর চেয়ে লজ্জার আর কিছু হতে পারে না।
শুক্রবার (১৯ নভেম্বর) সকালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেন, 'আজ আমি আপনাদের, গোটা দেশকে এটাই বলতে এসেছি যে, আমরা তিনটি কৃষি আইন প্রত্যাহার করে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এ মাসের শেষের দিকে সংসদ অধিবেশনে তিনটি কৃষি আইন প্রত্যাহার করে নেওয়ার সাংবিধানিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করব।'
মোদি দাবি করেন, তিনটি আইন ছোট কৃষকদের সহায়তার জন্যই আনা হয়েছিল এবং কৃষি বিশেষজ্ঞ ও অর্থনীতিবিদরা আইনগুলোর পক্ষে ছিলেন। তার ভাষ্য, অনেক চেষ্টা করা হয়েছে এই তিনটি আইনের উপকারিতা বোঝানোর জন্য, কিন্তু আমরা ব্যর্থ হয়েছি।
ঘটনাচক্রে সেদিন ছিল দেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী কংগ্রেস নেত্রী ইন্দিরা গান্ধীর জন্মদিন। যার ভূমিকায় একটি সিনেমায় অভিনয় করেছেন কঙ্গনা। মোদির সিদ্ধান্তে প্রকাশ্যেই আপত্তি জানিয়ে কঙ্গনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া পোস্টে বলেন, ‘দেশের মানুষের যদি বোধ না থাকে তবে তাদের লাঠি দিয়েই শাসন করতে হবে। এ দেশে সেটাই একমাত্র সমাধান এবং একনায়কতন্ত্রই সেরা বিকল্প।’ এছাড়াও ইন্দিরার ছবি দিয়ে কঙ্গনা লিখেছেন, শুভ জন্মদিন ‘ম্যাডাম প্রাইম মিনিস্টার’।
কৃষি আইন নিয়ে অবশ্য প্রথম থেকেই সরব ছিলেন কঙ্গনা। কৃষকদের আন্দোলনের বিরুদ্ধে বহুবার মন্তব্যও করেছেন। এই নিয়ে দেশের বহু তারকার সঙ্গে প্রকাশ্যেই টুইট যুদ্ধ হয়েছে তার। এমনকি যেসব বিদেশি ভারতের কৃষকদের সমর্থন করে নেট মাধ্যমে লিখেছিলেন তাদেরও কুরুচিকর আক্রমণের অভিযোগ ওঠেছিল কঙ্গনার বিরুদ্ধে।
প্রসঙ্গত, এক বছরেরও বেশি সময় ধরে এই তিনটি আইন নিয়ে কৃষক সংগঠনগুলোর সঙ্গে সরকার আলোচনা চালিয়েছে। কিন্তু আইনগুলো সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাহার করতে কখনোই রাজি হয়নি মোদি সরকার। অন্যদিকে লাখ লাখ কৃষক দিল্লির প্রবেশপথগুলোতে অবস্থান বিক্ষোভ চালিয়ে গেছেন। প্রবল শীত আর ভীষণ গরমের মধ্যে অথবা করোনা মহামারির ভয়াবহ দ্বিতীয় ঢেউয়ের মধ্যেও তারা রাস্তায় তাঁবু খাটিয়ে থেকেছেন। প্রায় ৭০০ কৃষক ওই আন্দোলন চলাকালে মারা গেছেন।
এদিকে কৃষি আইন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তকে কৃষক আন্দোলনের জয় বলে বিরোধী রাজনৈতিক নেতা নেত্রীরা কৃষকদের অভিনন্দন জানিয়েছেন।
রাহুল গান্ধী টুইট করেছেন, দেশের অন্নদাতারা সত্যাগ্রহের মাধ্যমে অহংকারের মাথা ঝুঁকিয়ে দিয়েছে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে এই জয়ের জন্য অভিনন্দন।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি লিখেছেন, যে কৃষকরা অবিরাম লড়াই চালিয়ে গেছেন, আর বিজেপির নিষ্ঠুরতার সামনেও যারা ভয় পাননি, তাদের প্রত্যেককে আমার আন্তরিক অভিনন্দন।