শিরোনাম
সাম্প্রতিক সময়ের আলোচিত চিত্রনায়িকা পরীমণি। মাদক মামলায় গ্রেপ্তারের পর থেকে তাকে নিয়ে আলোচনা তুঙ্গে। বৃহস্পতিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) দিনগত রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে নতুন দুটি ছবি আপলোড করেছেন এই চিত্রনায়িকা। সেখানে দেখা যাচ্ছে- সিগারেট হাতে ক্যামেরায় পোজ দিয়েছেন পরীমণি। সূত্র: আরটিভি
পরীর পরনে সাদা-কালো রঙের টপস, খোলা চুলে চোখে চশমা, পায়ে পরেছেন কেডস। সেখানে তার হাতের '...ক মি মোর' লেখাটি স্পষ্ট। ক্যাপশনে তিনি লিখেছেন- 'সিগারেট স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর'। পরীর মতো একজন 'পাবলিক ফিগার'র এমন আচরণ ভালোভাবে নেয়নি অনেকেই।
পরীর ছবিগুলো নিয়ে প্রকাশিত একটি খবর নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক ওয়ালে শেয়ার করে গুণী রাজনীতিবিদ এবং বাংলাদেশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী সোহেল তাজ লিখেছেন- 'একজন সেলেব্রিটির কাছ থেকে এরকম অশোভন আচরণ কাম্য নয়। আমাদের ছেলে-মেয়েদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।'
বর্তমান সময়ে ডিজিটাল ডিভাইসের সঙ্গে জড়িয়েই বড় হচ্ছে শিশু-কিশোররা। তারা ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহারে পটু, ইন্টারনেটে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও তাদের দৃষ্টি বিদ্যমান। এমন একটি স্পর্শকাতর সময়েই হাতের তালুতে মেহেদি দিয়ে আঁকা ‘মিডল ফিঙ্গার’ প্রদর্শন করে ভয়াবহ অশ্লীলতার ইঙ্গিত দিয়েছেন পরীমণি। যা নিয়ে নানান মহলে সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
শিশু-কিশোররা বয়জ্যেষ্ঠ কাউকে কিছু করতে দেখে সেটি শিখে তা নিজেও প্রদর্শন করলে চরম বিব্রতকর পরিস্থিতির উদ্ভব হতে পারে বলে মনে করছেন দেশের সচেতন নাগরিক ও অভিভাবকরা। তাছাড়া পরীমণি একজন নায়িকা হিসেবে, তিনি ‘পাবলিক ফিগারও’ বটে! তার এমন আচরণের প্রভাবে শিশু-কিশোররা অসময়ে যৌন আচরণ প্রদর্শন করার শঙ্কা রয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। যা আমাদের আন্ত:সামাজিক ও কৃষ্টি-কালচারের সঙ্গে কোনভাবেই যায় না।
বিজ্ঞজনরা বলছেন, দেশের সংস্কৃতি অঙ্গনের একজন শিল্পীর এমন আচরণে বড়দের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ হারিয়ে ফেলতে পারে শিশু-কিশোররা। তাই সেলিব্রেটি হিসেবে পরীমণিকে সতর্ক করে দায়িত্বশীল আচরণ প্রদর্শন করতে মতামত দিয়েছেন বিজ্ঞজনরা।
সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কথা বলে আন্তর্জাতিক বার অ্যাসোসিয়েশন প্রদত্ত “আইবিএ প্রোবোনো অ্যাওয়ার্ড, ২০২০” অর্জনকারী বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইশরাত হাসানের সঙ্গে। এই আইনজীবী বলেন, 'পর্নোগ্রাফি আইন-২০১২ সালের ২ এর ‘গ’ উপধারায় ‘পর্নোগ্রাফি’ এর সজ্ঞায় বলা হয়েছে- ‘যৌন উত্তেজনা সৃষ্টিকারী কোন অশ্লীল সংলাপ, অভিনয়, অঙ্গভঙ্গি, নগ্ন বা অর্ধনগ্ন নৃত্য যাহা চলচ্চিত্র, ভিডিও চিত্র, অডিও ভিজ্যুয়াল চিত্র, স্থির চিত্র, গ্রাফিকস বা অন্য কোন উপায়ে ধারণকৃত ও প্রদর্শনযোগ্য এবং যাহার কোন শৈল্পিক বা শিক্ষাগত মূল্য নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ ধরণের অপরাধের শাস্তি সম্পর্কে একই আইনের ৮ ধারার ৪ উপধারায় বলা হয়েছে- ‘কোন ব্যক্তি পর্নোগ্রাফি প্রদর্শনের মাধ্যমে গণউপদ্রব সৃষ্টি করিলে তিনি অপরাধ করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবেন এবং উক্তরূপ অপরাধের জন্য তিনি সর্বোচ্চ ২ বছর পর্যন্ত সশ্রম কারাদণ্ড এবং ১ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হইবেন। পর্নোগ্রাফি আইনের অপরাধসমূহ আমলযোগ্য এবং অ-জামিনযোগ্য অর্থাৎ জামিনযোগ্য নয়।’
আইনজীবী ইশরাত হাসান বলেন, ‘এখানে নায়িকা পরীমণি পর্নোগ্রাফি আইনের ‘গ্রাফিকস বা অন্য কোন উপায়ে ধারণকৃত ও প্রদর্শনযোগ্য এবং যাহার কোন শৈল্পিক বা শিক্ষাগত মূল্য নেই’ সজ্ঞামতে অপরাধ করেছেন বলে মনে করছি। তবে কেউ এ বিষয়ে থানায় কিংবা আদালতে অভিযোগ না করলে আইনের প্রয়োগ বিচার পর্যন্ত গড়াবে কেমন করে?
সোহেল তাজের সেই পোস্টে নেটাগরিকরা তাদের নিজেদের মন্তব্য প্রকাশ করেছেন। পাঠকদের জন্য কিছু মন্তব্য তুলে ধরা হলো-
আল-আমিন হাসান নামে একজন লিখেছেন, 'যারা সমাজে অশ্লীলতা প্রমোট করে তারা সেলিব্রিটি হয় কেমনে? ওর মতন কতিপয় বিপদগামী নারী পুরুষের জন্য সমাজ দিন দিন অধঃপতনের দিকে যাচ্ছে।'
আজাদ হোসেইন লিখেছেন, 'আপনাদেরকেই এসব নোংরামির বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান গ্রহণ করতে হবে।'
সানভী জাহান লিখেছেন, 'এই মেয়ে জেল থেকে বের হয়ে না শুধরে আরও উচ্ছৃঙ্খল হচ্ছে। এর কাউন্সিলিং করানো দরকার এবং সু-চিকিৎসা দরকার।'
তাহমিদ আহমেদ পারাবত লিখেছেন, 'আমরা তরুণ সমাজ মারাত্মকভাবে আদর্শহীনতায় ভুগছি। যার ফলে এদের এতো ফ্যান ফলোয়ার।'
শাহাদাত হোসেইন খান বাবুল লিখেছেন, 'বাংলা সিনেমাতে যেসব নামকরা নায়িকারা অতীতে ছিলেন তারা তো পরীমণির মত কেউ ছিলেন না। পরীমণি নিজের কর্মের ফল নিজেই ভোগ করবে। তবে তার এসব বাড়াবাড়ি বিবেচনায় নিয়ে বিচার কার্যক্রম বিচারের গতিতে চললেই ভালো। যারা তার সাথে অন্যায় করেছে সে তাদেরকে আগেই সুযোগ দিয়েছে বলে মনে হয়, যেমন কর্ম তেমন ফল। রাজনীতিবিদদের রিমান্ডে নিয়ে কোন বিচারপতিকে কখনো সহানুভূতিশীল হতে দেখা যায় নাই যেভাবে পরীমণির ক্ষেত্রে দেখা গেছে। কি আর বলবো এসব নিয়ে।'