শিরোনাম
নির্বাসিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন পড়ে গিয়ে পায়ের হাড় ভেঙে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। এরপর অস্ত্রোপচার করে তার ‘হিপ জয়েন্ট’ বাদ দিয়েছেন চিকিৎসক। সার্জনের ‘ভুল’ চিকিৎসায় তিনি পঙ্গু হতে চলেছেন বলে দাবি করেছেন তসলিমা।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একের পর এক পোস্ট দিয়ে চিকিৎসকের ওপর ক্ষোভ ঝেড়েছেন চিকিৎসা শাস্ত্র নিয়ে পড়া এই লেখিকা। সম্প্রতি তার সবশেষ পোস্টে আক্ষেপ করে বলেছেন, আমার প্রথম জীবন কেড়ে নেওয়া হয়েছে, এখন মৃত্যুযাপন করছি।
পাঠকদের জন্য তসলিমা নাসরিনের পোস্টটি তুলে ধরা হলো-
‘যে জীবন আমি যাপন করছি, সে জীবন আমার দ্বিতীয় জীবন। আমার প্রথম যে জীবন ছিল সেটির মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যু এমনিতে হয়নি। মৃত্যুকে ডেকে আনা হয়েছে। পরিকল্পনায় ছিলেন একটি লোক আর তার দুই সহকর্মী। তিনটে মাত্র লোক, জিহাদিরা এতকাল ধরে যা পারেনি- তা পেরেছে।’
তসলিমা লেখেন, ‘জিহাদিরা যদি আমাকে হত্যা করতো, তাহলে আমার এতটা দুঃখ হতো না। কারণ দীর্ঘকাল থেকেই জানি তারাই আমার আততায়ী। দুঃখ বেশি হচ্ছে কারণ হত্যাকারীরা জিহাদি নয়। কী কারণ তাদের ছিল তবে আমাকে হত্যা করার? এর মধ্যে বড় দুটো কারণ আপাতত যা মনে হচ্ছে। তা হলো- ম্যালপ্র্যাকটিস এবং মার্কেটিং।’
‘অনেকে বলছে হত্যাকারীর বিরুদ্ধে মামলা করতে। আমার মতো নিরীহ, নির্বোধ কী করে বড় বড় শক্তিমান মানুষের বিরুদ্ধে আদালত অবধি যাবে! সেই ক্ষমতা তো আমার নেই। শারীরিক, মানসিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক কোনো শক্তিও আমার নেই।’
তিনি আরও লেখেন, ‘এই দ্বিতীয় জীবনটি সম্পূর্ণই অন্যরকম। আমার প্রথম জীবনের মতো দুরন্ত, দুর্বিনীত নয়। এই দ্বিতীয় জীবনটি অনেকটা রিহ্যাবের ৯৫ বছর বয়সী জরাগ্রস্ত মহিলাদের মতো। এই জীবনটি আমার জন্য নয়। কিন্তু এই জীবনটিই এখন আমার জন্য বরাদ্দ করেছে আমার হত্যাকারীরা। যতই প্রাণপণে আমি মনের শক্তি অর্জন করতে চাইছি দুবেলা করে, ততই ব্যর্থ হচ্ছি।’
‘আমার কী হয়েছিল? আমার শরীরের ওপর দিয়ে কি কোনও ট্রাক বা ট্রেন চলে গিয়েছিল? হাড়গোড় গুঁড়ো হয়ে গিয়েছিল? না। আমার শরীরের কোনো হাড় কোথাও বাজেভাবে ভেঙেছিল? না। আমি কি হাঁটতে পারছিলাম? আমি হাঁটতে পারছিলাম। আমি কি বসতে পারছিলাম? আমি বসতে পারছিলাম। আমার কি হিপ জয়েন্ট ফুলে উঠেছিল? না। জয়েন্টে ব্যথা ছিল? না। আমার কি কোনো জয়েন্ট ডিজিজ ছিল? না। কী ছিল আমার তবে? শুরুতে হাঁটুতে ব্যথা ছিল, পরে সে ব্যথাও ছিল না। অকারণ উদ্বেগ ছাড়া কিছুই ছিল না আমার। উদ্বেগটি আমার ভেতরে তৈরি হয়নি। সিরিঞ্জে ভরে ইনজেক্ট করা হয়েছে। আর আমার উদ্বেগই ছিল ম্যালপ্র্যাকটিসের জন্য চমৎকার পুঁজি।’
আমার প্রথম জীবনটি আমার কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া হয়েছে দাবি করে তসলিমা আরও লেখেন, ‘এই দ্বিতীয় জীবনটির দিকে তাকালে আমার শ্বাসকষ্ট হয়, বড় অসহায় বোধ করি। দ্বিতীয় জীবনটি আমার প্রাপ্য ছিল না।’
‘আমার প্রথম জীবনটির নাম ছিল জীবন, আমার দ্বিতীয় জীবনটির নাম মৃত্যু। আমি বেশ কিছুদিন হলো মৃত্যুযাপন করছি। আমাকে হয়তো আরও বহুদিন মৃত্যুযাপন করতে হবে’, যোগ করেন এ লেখিকা।