শিরোনাম
ভারতীয় ধনকুবের গৌতম আদানির করপোরেট সাম্রাজ্যে হঠাৎ পতনের সুর উঠেছে। গত বৃহস্পতিবারের পর শুক্রবার (২৭ জানুয়ারি) সকালে এই পতনের গতি আরও বেড়েছে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গের তথ্যমতে, সবশেষ দুই সেশনে পাঁচ হাজার কোটি মার্কিন ডলারের বেশি বাজারমূল্য হারিয়েছে আদানি গ্রুপ।
সম্প্রতি এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে গৌতম আদানি ও তার সংস্থার বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতি এবং প্রতারণার অভিযোগ তোলে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিনিয়োগ গবেষণা সংস্থা হিনডেনবার্গ রিসার্চ। তাদের ওই প্রতিবেদনের জেরে এশিয়ার শীর্ষ ধনীর ওপর ব্যাপক চাপ তৈরি হয়েছে বলে উল্লেখ করেছে ব্লুমবার্গ।
তার মূল ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান আদানি এন্টারপ্রাইজ লিমিটেডের প্রতি আস্থা হারানোয় বিনিয়োগকারীরা এরই মধ্যে ২৫০ কোটি ডলারের শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছেন। হিনডেনবার্গের সব অভিযোগ অবশ্য অস্বীকার করেছে সংস্থাটি। গত বৃহস্পতিবার বন্ডহোল্ডারদের সঙ্গে কথা বলেছে তারা এবং শুক্রবার অভিযোগের বিষয়ে বিস্তারিত যুক্তি উপস্থাপনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তা সত্ত্বেও আদানি গ্রুপের ওপর বিনিয়োগকারীদের বিশ্বাসে ফাটল স্পষ্ট।
শুক্রবার আদানি এন্টারপ্রাইজের শেয়ারের দর ১৯ শতাংশের বেশি কমে ৩ হাজার ২৭৬ রুপির নিচে নেমেছে। তাছাড়া আদানি গ্রিন এনার্জি লিমিটেড এবং আদানি টোটাল গ্যাসের মতো কিছু সহযোগী সংস্থা দৈনিক ২০ শতাংশ পতনের সীমা স্পর্শ করেছে।
গ্লোবাল সিআইও অফিসের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার গ্যারি ডুগান বলেন, ‘ইস্যুটি ভারতীয় করপোরেট খাতের কেন্দ্রে আঘাত করেছে, যেখানে বেশ কয়েকটি পরিবার-নিয়ন্ত্রিত সংগঠনের আধিপত্য রয়েছে৷ স্বভাবগতভাবেই তারা অস্বচ্ছ। এ অবস্থায় বিশ্বব্যাপী বিনিয়োগকারীদের করপোরেট গভর্নেন্সের বিষয়গুলোতে আস্থা রাখতে হবে।’
সাম্প্রতিক পতনের আগে গত কয়েক বছর গৌতম আদানির জন্য ছিল শুধুই উত্থানের গল্প। ২০২২ সালে এশিয়ার সর্বোচ্চ মুনাফা লগ্নিকারীদের মধ্যে তিনি ছিলেন অন্যতম। গত পাঁচ বছরের উত্থানে ইলন মাস্কের টেসলা ইনকরপোরেশনকেও পেছনে ফেলেছে আদানি এন্টারপ্রাইজ। ধীরে ধীরে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিদের তালিকায় নিজের অবস্থান পাকা করেছেন গৌতম আদানি।
এমনকি, গত বছরের সেপ্টেম্বরে কিছু সময়ের জন্য হলেও বিশ্বের শীর্ষ ধনীর তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে উঠে এসেছিলেন ভারতীয় এ ধনকুবের। ওই সময়ে আদানি ও তার পরিবার নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠানগুলোর মোট সম্পদের পরিমাণ ছিল ১৫ হাজার ৪৭০ কোটি ডলার।
কিন্তু সাম্প্রতিক পতনের ধাক্কায় ১০ হাজার কোটি ডলারের নিচে নেমে গেছে আদানির সম্পদ। বৃহস্পতিবার দুপুরে ব্লুমবার্গ বিলিয়নিয়ার ইনডেক্সে তার সম্পদের পরিমাণ ছিল ৯ হাজার ৭০০ কোটি ডলার, যা গত বুধবারের তুলনায় ১৫ শতাংশ কম।
আদানি গ্রুপের বিষয়ে দুই বছর তদন্তের পর গত ২৪ জানুয়ারি গুরুতর নানা অভিযোগের বিশদ বিবরণসহ একটি বিস্ফোরক প্রতিবেদন প্রকাশ করে হিনডেনবার্গ রিসার্চ। এর প্রতিক্রিয়ায় আদানি গ্রুপ বলেছে, তারা হিনডেনবার্গের বিরুদ্ধে ‘অসৎ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, গবেষণাবিহীন’ প্রতিবেদন প্রকাশের বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেবে।
জবাবে হিনডেনবার্গ অবশ্য বলেছে, তাদের প্রতিবেদন পুরোপুরি সঠিক। এর বিরুদ্ধে যেকোনো আইনি পদক্ষেপ হবে অযৌক্তিক।