শিরোনাম
প্রতারকের খপ্পরে পড়ে প্রায় ৩২ হাজার টাকা খোয়ালেন জনপ্রিয় অভিনেত্রী ও নির্মাতা মেহের আফরোজ শাওন। ফোনে নিজেকে ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া পরিচয় দেন সেই প্রতারক। অথচ গত ২২ জুলাই নিউইয়র্কের মাউন্ট সিনাই হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন ফজলে রাব্বী মিয়া।
প্রতারক শাওনকে ফোন করে জানান, নুহাশপল্লীর উন্নয়ন ও হুমায়ূন আহমেদের নামে মিউজিয়াম নির্মাণ বাবদ অস্ট্রেলিয়ার একটি এনজিও থেকে বড় অংকের ফান্ড এসেছে, যা বর্তমানে অর্থ মন্ত্রণালয়ে জমা আছে। টাকাটা কীভাবে পাওয়া যাবে, এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন উপ-সচিব তার সঙ্গে যোগাযোগ করবেন।
পরবর্তীতে নিজেকে উপ-সচিব পরিচয় দিয়ে শাওনকে ফোন করে ফান্ড ট্রান্সফারের জন্য সরকারি ফি বাবদ ৩১ হাজার ৮৫০ টাকা বিকাশে দিতে বলেন। শাওন তাকে বিশ্বাস করে সেই টাকা পাঠান। পরদিনই এই অভিনেত্রী বুঝতে পারেন, তিনি প্রতারকের খপ্পরে পড়েছেন।
এ প্রসঙ্গে শাওন গণমাধ্যমকে জানান, ‘যিনি আমাকে ফোন করলেন, তিনি খুবই সিস্টেমেটিক ওয়েতে কথা বলেছেন। প্রথমে বললেন, আমি জাতীয় সংসদের মাননীয় ডেপুটি স্পিকার সাহেবের পি এস বলছি। স্যার একটু আপনার সঙ্গে কথা বলবেন। এরপর ফোনের ওপাশ থেকে বললেন, আমি জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া বলছি। আপনি কেমন আছেন? এর পরমুহূর্তেই তিনি বললেন, তোমাকে তুমি করে বলি মা। তোমার মা তো আমার কলিগ ছিলো। সুতরাং আমার আর কোনো সন্দেহ হয়নি।’
এই অভিনেত্রী আরও জানান, ‘তিনি (প্রতারক) আমাকে এত সুন্দর করে বুঝালেন, কিছুদিন আগে অস্ট্রেলিয়ার একটি এনজিও নুহাশপল্লীতে বেড়াতে গিয়েছিলো। হুমায়ূন আহমেদের নামে তুমি একটা মিউজিয়াম করতে চাও, এটা জেনে তারা একটা অনুদান দিয়েছে। এই বিষয়েই তোমার সঙ্গে আমি কথা বলতে চাই। হুমায়ূন আহমেদের কথা বললে যে আমি অন্যকিছু ভাবতে পারি না, সেই ব্যাপারটা রিড করেই তিনি কথাগুলো আমাকে বলেছেন। আমার কাছে অবিশ্বাস হওয়ার মতো তখন কিছু মনে হয়নি।’
শাওন বলেন, ‘তিনি জানালেন, তারা টাকাটা হাতে হাতে দিতে চায়। নুহাশপল্লীতে গিয়ে একবেলা দুপুরের খাবার খেতে চায়। কিন্তু মা, তোমার কিছু করতে হবে না। এটার জন্য আমাদের বাজেট আছে। আমরাই সমস্ত কিছু করে দিবো। সবকিছুর পর তিনি হঠাৎ করে বললেন, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ সচিব তোমাকে ফোন দিবে। টাকাটা কীভাবে দেওয়া যাবে, তিনি সে বিষয়ে কথা বলবে। এরপর অর্থ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব নাম দিয়ে একজন ফোন করলেন। ট্রু কলারে নাম উঠলো এবং সেখানে লেখা ছিলো অর্থ মন্ত্রণালয়। অর্থাৎ প্রতারক যিনি আছেন, তিনি এই নামেই সেভ করে রেখেছিলেন। তিনি আমাকে জানালেন, চেকটা আমরা হাতে হাতে দিবো। কিন্তু ট্যাক্স, ভ্যাট বাবদ আপনাকে কিছু টাকা দিতে হবে। আপনার কষ্ট করে আসার প্রয়োজন নেই। আমি আপনাকে একটা নম্বর দিচ্ছি, সেই নম্বরে বিকাশ করেন। সেই মুহূর্তে আমি আসলে ভুল করেছি। দায়িত্বশীল কারও সঙ্গে কথা না বলে আমি টাকাটা পাঠাই। সেটা আমার উচিত হয়নি।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিকাশে টাকাটা পাঠানোর পরও তারা আমাকে ফোন করেন। তারা বলেন, পরশু আমরা নুহাশপল্লী যাবো। আগামীকাল নিশ্চিত করবো কয়জন যাবো। খাবারের কী কী ম্যানু হবে, তিনি সেটাও ঠিক করে দেন। এর পরদিন কোনো ফোন আসে না। তখন আমরা কল করতে থাকি। সে সময় থেকেই ফোন বন্ধ। তখন আমার মনে হয়, আমি মনে হয় কোনো প্রতারকের পাল্লায় পড়েছি।’
জানা গেছে, শাওনের কাছ থেকে টাকা নেওয়া সেই প্রতারকের নাম মো. রবিউল ইসলাম। বয়স ৪১। ২০১৯ সাল থেকেই তিনি এভাবে প্রতারণা করে আসছিলেন। বৃহস্পতিবার (২৫ আগস্ট) দুপুরে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
প্রতারক রবিউলের কাছ থেকে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত দুটি মোবাইল ফোন ও ভুয়া রেজিস্ট্রেশন করা চারটি সিমকার্ড জব্দ করে ডিবি। অর্গানাইড ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিমের টিম লিডার অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মো. নাজমুল হক বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেন।