শিমুলের টাইলস ছড়িয়ে যাচ্ছে সারাদেশে

ফানাম নিউজ
  ১৫ অক্টোবর ২০২১, ২০:১৬

মোস্তাফিজুর রহমান শিমুল। ঠাকুরগাঁও জেলা শহরের শান্তিনগর এলাকার বাসিন্দা। বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করে তিন বছর চাকরির পেছনে ছুটেছেন, সফল হননি। পাড়ি জমান প্রবাসে। কাজ করেছেন টাইলসের দোকানে। দেশে ফিরে অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে গড়ে তুলেছেন টাইলসের কারখানা। এখন তিনি সফলদের একজন। 

তিনি বলেন, ‘লেখাপড়া করে শুধু চাকরির পেছনে ছুটেলে চাকরিই সফলতা এনে দেবে, এমন ভাবাটা ভুল। লেখাপড়া শেষ করে নিজের মেধা আর পরিশ্রমকে কাজে লাগিয়ে চাইলে অন্যভাবেও সফল হওয়া যায়। তৈরি করা যায় কর্মসংস্থান।’ 

ঠাকুরগাঁও শহরের শান্তিনগর এলাকায় গড়ে তুলেছেন ব্লক পার্কিং টাইলসের কারখানা। ছোট পরিসরে হলেও কারখানায় উঁকি দিচ্ছে বিরাট সম্ভাবনা। বিপুল কর্মসংস্থানের সুযোগ হওয়াটা এখন শুধু সময়ের ব্যাপার। 

শিমুলের তৈরি টাইলস এখন নিজ জেলার গণ্ডি পেরিয়ে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলায়। ব্যবসা শুরুর ৮ মাসেই পাওয়া ব্যাপক সাফল্য আজ হাসি ফুটিয়েছে অনেকের মুখে। আর চাকরির পেছনে ছোটেন না শিমুল। তিনি চাকরি দিচ্ছেন। 

শিমুল বলেন, ‘২০১১ সালে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করে ৩ বছর চাকরির পেছনে ছুটেও লাভ হয়নি। এমন শিক্ষিত বেকার থাকাটাই নিজের কাছে নিজেকে বোঝা বলে মনে হচ্ছিল। তাই শেষে হতাশ হয়ে ২০১৫ সালে প্রবাসে চলে যাই। কাতারের একটি পার্কিং টাইলসের কম্পানিতে চাকরি করতাম।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘আমি সেই টাইলসের কোম্পানিতে প্রায় ৩ বছর কাজ করেছি। খেয়াল করি যে, কারখানায় তৈরি পার্কিং টাইলসে ব্যবহৃত প্রধান কাচামাল সিমেন্ট, বালু ও নুড়ি পাথর। আমাদের দেশে তথা নিজ এলাকাতেই বেশ সহজলভ্য এই কাঁচামাল। ছোট আকারে শুরু করতে পুঁজিও তেমন লাগছে না। তখনই দেশে ফিরে এমন একটি কারখানা গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেই।’

২০১৯ সালে দেশে ফিরেই এই কারখানা দেওয়ার পরিবেশ যাচাই করতে থাকেন শিমুল। দেশের বিভিন্ন স্থানে গড়ে ওঠা পার্কিং টাইলসের কারখানা ঘুরে দেখেন। বাজারে চাহিদা বোঝার চেষ্টা করেন। এতে কাতারভিত্তিক প্রযুক্তি দেশের জন্য সঠিক বলে মনে হয় তার।

শিমুল বলেন, ‘২০২০ সাল থেকে কারখানা দেওয়ার প্রস্তুতি শুরু করে ২ লাখ টাকা পুঁজি নিয়ে ২০২১ এর ১ জানুয়ারিতে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদ শুরু করি পার্কিং টাইলস। নিজ জেলায় ব্যাপক সাড়া পাই। আস্তে আস্তে পার্শ্ববর্তী জেলায় যাওয়া শুরু করে আমার পণ্য। তবে, এখন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অর্ডার পাচ্ছি।’

পার্কিং টাইলসের কারখানায় কর্মরত শ্রমিক আজম আলী শারীরিকভাবে দুর্বল হওয়ায় তার আগের পেশা রিকশা চালাতে বেশ কষ্ট হতো। তিনি বলেন, ‘এক বন্ধুর কাছ থেকে জানতে পেরে আমি শিমুলের কারখানায় কাজ নিয়েছি। হালকা কাজে ভালো পারিশ্রমিক পেয়ে আমার মতো বাকিরাও বেশ খুশি।’

প্রথমে একজন শ্রমিককে কাজ শিখিয়ে তাকে নিয়ে পথচলা শুরু শিমুলের। এখন এই কারখানায় ১৭ জন শ্রমিক কাজ করছেন। ভবিষ্যতে আরও বড় পরিসরে কাজ শুরু করবেন। 

শিমুলকে সরকারিভাবে সহযোগিতা করে তার কাজে উৎসাহ দেওয়া প্রয়োজন বলে জানান ঠাকুরগাঁও চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক মামুনুর রশিদ। তিনি বলেন, ‘শিমুলের মাধ্যমে বৃহত্তম কর্মসংস্থান সৃষ্টির সুযোগ রয়েছে। তার সফলতা অন্য তরুণদের উদ্যোক্তা হতে উৎসাহী করবে।’ 

ঠাকুরগাঁও বিসিক শিল্প নগরীর উপ-ব্যবস্থাপক মো. নুড়েল হক বলেন, ‘আমরা চাই ভালো ভালো উদ্যোক্তা সৃষ্টি হোক। শিমুলের উদ্যােগ বেশ সম্ভাবনাময়। তার যে কোনো সহযোগিতায় আমরা পাশে আছি।’

সূত্র: রাইজিংবিডি