শিরোনাম
ডলার সংকটের কথা বলে ঋণপত্র (এলসি) খুলছে না ব্যাংকগুলো, তাই জ্বালানি তেল আমদানি করতে এলসি খোলার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সহায়তা চেয়েছে একমাত্র রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন জ্বালানি তেল আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি)।
সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয় এবং জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের কাছে পাঠানো একটি চিঠিতে জ্বালানি তেল আমদানির নিমিত্তে এলসি খোলার জন্য রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ও বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে ডলার সরবরাহ নিশ্চিত করতে ও সেই অনুযায়ী প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করতে বাংলাদেশ ব্যাংককে অনুরোধ জানায় বিপিসি।
বিপিসি বলছে, পরিশোধিত ও অপরিশোধিত তেল আমদানি করার জন্য তাদেরকে প্রতি মাসে প্রায় ৫৬০-৬৯৬ মিলিয়ন ডলার মূল্যের ১৬-১৭টি এলসি খুলতে হয়। কিন্তু লেনদেনের হার বেড়ে যাওয়ায় সরকারি ক্রয়ের জন্য এলসি খুলতে চাইছে না ব্যাংকগুলো।
মে মাসে অর্থনীতিবিদদের সঙ্গে অর্থমন্ত্রীর প্রাক-বাজেট আলোচনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. ফজলে কবির বলেন, 'মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য আমরা রিজার্ভ থেকে ডলার ছেড়ে খাদ্য, জ্বাালানি সার আমদানির এলসি খুলছি। ব্যাংক রেটে এসব এলসি খোলা হচ্ছে, যা মঙ্গলবার ছিল প্রতি ডলার ৮৭.৫০ টাকা।' কিন্তু ব্যাংকগুলো এখন ডলারের বিপরীতে ৮৭.৫০ টাকা রেট পাচ্ছে না।
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, রোববার খোলাবাজারে ডলারের রেট ছিল ৯৯ টাকা—যা গত সপ্তাহে ছিল ৯৮ টাকা। তবে আন্তঃব্যাংক লেনদেনের জন্য মার্কিন ডলারের লেনদেন হার ৮৭.৫০ টাকায় স্থির থাকলেও, ব্যাংকগুলো আন্তঃব্যাংক রেটের চেয়ে বেশি টাকা দিয়ে ডলার কিনছে।
এ কারণে ব্যাংকগুলো দাবি করছে, এলসি খুলতে গিয়ে তারা টাকা হারাচ্ছে। রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, অগ্রণী ও জনতা ব্যাংক এবং ওয়ান ব্যাংক ও ইসলামী ব্যাংকসহ কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে আমদানি বিল পরিশোধ করত বিপিসি। গত বছরের নভেম্বরে সোনালী ব্যাংক বিপিসিকে বলে দেয় যে, তারা আর সরকারি এলসি খুলতে পারবে না।
চলতি বছরের ১২ এপ্রিল এক আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সভার পর বিপিসিকে বাজার হারে বা আন্তঃব্যাংক রেট অনুযায়ী ডলার কিনে জ্বালানি তেলের বিল পরিশোধ করতে বলা হয়। একই মাসের ২৬ তারিখ রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি ব্যাংকগুলোকে এই সিদ্ধান্তের কথা জানায় বিপিসি।
২০২২ সালের ১২ মে-র বিপিসির চিঠিতে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড এ-ও জানিয়েছিল যে চলমান ডলার সংকটের কারণে বৈদেশিক মুদ্রাবাজার থেকে ডলার কিনে জ্বালানি তেলের মূল্য পরিশোধ করা প্রায় অসম্ভব।
অগ্রণী ব্যাংক আরও বলে, আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে বিজনেস কোরেসপন্ডিং (বিসি) সেলিং রেটের চেয়ে রেমিট্যান্স রেট বেশি হওয়ার কারণে তারা বিশাল বিনিময়-লোকসান গুনছে।
বিপিসি তাদের চিঠিতে লিখেছে, 'এরকম পরিস্থিতির কারণে ভবিষ্যতে জ্বালানি আমদানি ঝুঁকিতে পড়তে পারে। সময়মতো এলসি খোলা না হলে দেশে জ্বালানি সংকট দেখা দিতে পারে।'
বিপিসির পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড প্ল্যানিং) খালিদ আহমেদ বলেছেন, এই পরিস্থিতিতে জ্বালানি সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখার জন্য অতিরিক্ত খরচ বহন করতেও প্রস্তুত আছেন তারা।
তিনি বলেন, 'আমরা জ্বালানি বিভাগ ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংককে অগ্রণী ব্যাংকের অবস্থান জানিয়েছি এবং জ্বালানি আমদানির জন্য এলসি খোলার জন্য আমাদের সাহায্য করতে বলেছি।'
বিপিসির এলসি খোলা নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা কিংবা সরকারি এলসি খোলার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে পর্যাপ্ত ডলার না পাওয়ার বিষয়ে মতামত জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি তার জানা নেই। সংশ্লিষ্ট দপ্তরে খোঁজ-খবর না নিয়ে মন্তব্য করা সমীচীন হবে না বলে জানান তিনি।
তবে তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলার বাজারে ছেড়েছে, যার বড় অংশই দেওয়া হয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে সরকারের বড় বড় এলসি খোলার জন্য।
বর্তমানে দেশের মোট জ্বালানি চাহিদার প্রায় ৯১-৯২ শতাংশই আমদানির মাধ্যমে মেটানো হয়। চাহিদার বাকিটা পাওয়া যায় স্থানীয় গ্যাসক্ষেত্র থেকে কনডেনসেট আকারে, যা গ্যাসের একটি জৈব-পণ্য।
সারা দেশে বড় বড় ভূমি ও নদী মজুদাগারে বিপিসির এক মাসের মজুদ রয়েছে। এসব ডিপোতে ছয় লাখ টন জ্বালানি মজুদ আছে।
সূত্র: দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড