৩২ নিত্যপণ্যের ১৯টির দাম বেড়েছে

ফানাম নিউজ
  ১৯ মে ২০২২, ১০:৫৫

রমজান এলেই প্রতিবছর নিত্যপণ্যের দাম বাড়ে। গত রমজানেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। তবে ভিন্ন খবর হচ্ছে, এবার রোজার সময়ে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ার প্রবণতাকেও হার মানিয়েছে চলতি মে মাসের দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি। 

গেলো রমজানের মাঝামাঝি সময় (১৮ এপ্রিল) থেকে চলতি মাসের ১৮ মে পর্যন্ত এক মাসে বাজারে শুধু ব্রয়লার মুরগি ছাড়া কোনো নিত্যপণ্যের দাম কমেনি। বেড়েছে অধিকাংশ পণ্যের দাম। তবে কিছু নিত্যপণ্যের দাম স্থিতিশীলও রয়েছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) রাজধানীর বাজারের ৩২ ধরনের খাদ্যপণ্যের দামের ওঠা-নামার হিসাব রাখে। সংস্থাটির গত এক মাসের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এসময়ের ব্যবধানে বাজারে ৩২ খাদ্যপণ্যের মধ্যে বেড়েছে ১৯টির দাম। কমেছে শুধু একটি পণ্যের দাম। স্থিতিশীল রয়েছে ১২টির।

টিসিবি বলছে, এক মাসের ব্যবধানে বাজারে মোটা চাল, আটা, ময়দা, সয়াবিন, পাম অয়েল, মসুর ডাল, ছোলা, আলু, পেঁয়াজ, রসুন, শুকনা মরিচ, হলুদ, আদা, জিরা, তেজপাতা, গুড়া দুধ, চিনি ও ডিমের দাম বেড়েছে। বাজারে শুধুমাত্র কমেছে ব্রয়লার মুরগির দা, যা গত মাসের থেকে বর্তমানে কেজিতে ৫ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে।

অন্যদিকে টিসিবির তথ্যে বাজারে একমাসের ব্যবধানে মুগডাল, অ্যাংকার ডাল, দারুচিনি, লবঙ্গ, এলাচ, ধনিয়া, রুই মাছ, ইলিশ মাছ, গরুর মাংস, খাসির মাংস, খেজুর ও লবণের দাম স্থিতিশীল রয়েছে। অর্থাৎ এসব পণ্য রমজানে যে দামে বিক্রি হয়েছে, এখনো সেই দামেই বিক্রি হচ্ছে।

যেসব পণ্যের দাম বেড়েছে, সেগুলো সর্বনিম্ন দেড় শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ প্রায় ৫১ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে এই এক মাসের মধ্যেই। যার মধ্যে সবেচেয় বেশি বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। এছাড়া বাজারে খোলা আটা-ময়দা, ভোজ্যতেল, মসুর ডাল, ডিম, আদা, রসুন ও আলুর দাম বেড়েছে ১০-২৯ শতাংশ পর্যন্ত। এ সব পণ্যই একটি পরিবারের জন্য প্রতিদিনের অপরিহার্য।

তবে ক্রেতারা ব্যবসায়ীদের এসব কারণকে অজুহাত বলছেন। তাদের অভিযোগ, ‘ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে ক্রেতাদের পকেট কাটছেন।’ এরমধ্যে সয়াবিন তেল নিয়ে সরকারের কঠোর অবস্থানে সারাদেশে ব্যবসায়ীদের গুদাম থেকে হাজার হাজার টন ভোজ্যতেল উদ্ধার হওয়ার পর ক্রেতারা ব্যবসায়ীদের ওপর আরও বিশ্বাস হারিয়েছেন। 

ব্যবসায়ীরা দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন কারণ দেখিয়েছেন, যার মধ্যে অন্যতম- রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। এ যুদ্ধের কারণে বিশ্ববাজারে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি হয়েছে বলে দাবি তাদের। এছাড়া ডলারের দাম বাড়াসহ কিছু পণ্যের আমদানি-রপ্তানিতে জটিলতা তৈরি হয়েছে বলেও জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

বুধবার (১৮ মে) সন্ধ্যায় উত্তর বাড্ডা বাজারে কেনাকাটা করতে আসেন সামিয়া ইয়াসমিন। বাজারে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা যতই বুঝ দিক, তাদের সিন্ডিকেট আমাদের কাছে পরিষ্কার। বাজারে জিনিসপত্রের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ানো ব্যবসায়ীদের কারসাজি। বিশ্ববাজারে এক টাকা বাড়ার খবর পেলে তারা পাঁচ টাকা বাড়িয়ে দিচ্ছে। এটা কী ধরনের ব্যবসা? পরে বিশ্ববাজারে কমলেও আমাদের এখানে ব্যবসায়ীরা আর দাম কমান না।’

ক্রেতাদের দাবি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের যেমন নজরদারি, সেটা নেই। দেশে এখন যে নজরদারির চর্চা আছে, সেটা লোক দেখানো। পণ্যের দাম বেড়ে যখন বাজারে চরম অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, তখন হুটহাট কিছু অভিযান চলে। যে পণ্যের দাম বাড়ে, শুধু সেই পণ্যের জন্য দু-চারজন বিক্রেতাকে মাঠপর্যায়ে জরিমানা করে দায়সারা হয়।

কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, ‘বিভিন্ন যৌক্তিক কারণে দেশে সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়েছে। তবে যৌক্তিকভাবে যা বেড়েছে, তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি বাড়িয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এখন সব ইস্যুকে সামনে রেখে বাড়তি মুনাফার সুযোগ খোঁজেন ব্যবসায়ীরা।’

তিনি বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের নানান অজুহাত, যার শেষ নেই। কারণে-অকারণে পণ্যের দাম বাড়িয়ে ক্রেতাদের নাজেহাল করা হচ্ছে। ব্যবসায়ীদের এ কারসাজি ঠেকাতে দেশে বেশি কিছু বিদ্যমান আইনেও আছে। তবে সেসব আইনের যথাযথ প্রয়োগ ও বাস্তবায়ন নেই। ফলে দিনে দিনে ব্যবসায়ীরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছেন। সরকারকে আরও কঠোর হতে হবে, তা না হলে পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাবে।’

এদিকে, শুধু খাদ্যপণ্য নয়, বেড়েছে নিত্যব্যবহার্য অন্যান্য পণ্যের দামও। সাবান, টুথপেস্ট, ডিটারজেন্ট, নারিকেল তেল, সেভিং ফোম, টালকম পাউডার, রেজারসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়েছে। ব্যয় সামলাতে না পেরে অনেকেই নিত্যব্যবহার্য পণ্যের তালিকা কাটছাঁট করছেন বলেও জানিয়েছেন ক্রেতারা।

এছাড়া আটা-ময়দার দাম বাড়ায় রুটি, কেক, বিস্কুটের মতো বেকারি পণ্যের দামও অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। আগে চায়ের দোকানে যে রুটি (বনরুটি) ও পিস কেক ৮ টাকা করে বিক্রি হতো, তা এখন ১০ টাকা। আবার ৩০ টাকা দামের ফ্যামেলি রুটি এখন বিক্রি হচ্ছে ৪০-৪৫ টাকায়।

সূত্র: জাগো নিউজ