রাতে ঢাবি হলের গেস্টরুমে অসুস্থ শিক্ষার্থীকে ‘নির্যাতন’

ফানাম নিউজ
  ২৭ জানুয়ারি ২০২২, ১৮:১৪

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বিজয় একাত্তর হলে গেস্টরুমে অসুস্থ এক শিক্ষার্থীকে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের ৬ কর্মীর বিরুদ্ধে। এতে ওই শিক্ষার্থীর অসুস্থতা বেড়ে যাওয়ায় তাকে হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরে ইসিজি করিয়ে আবার হলে ফিরিয়ে আনা হয়।গতকাল বুধবার (২৬ জানুয়ারি) দিনগত রাত ১০টায় বিজয় একাত্তর হলের টিভি রুমে এ নির্যাতনের ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সূত্র: আরটিভি

ছাত্রলীগের নির্যাতনের শিকার আখতারুল ইসলাম লিটন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি জানান, অসুস্থতার কারণে গেস্ট রুমে যেতে পারছিলেন না। পরে ডেকে নিয়ে গেস্ট রুমে লাইটের দিকে দীর্ঘক্ষণ তাকিয়ে থাকতে বাধ্য করা হয়। পরে আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। এক পর্যায়ে অচেতন হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন আখতারুল ইসলাম লিটন।

এ ঘটনায় জড়িতদের বিচার চেয়ে লিটন আজ বৃহস্পতিবার (২৭ জানুয়ারি) সকালে হল প্রাধ্যক্ষ বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। ঘটনা তদন্তে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করবেন বলে জানিয়েছেন প্রাধ্যক্ষ আবদুল বাছির।

লিখিত অভিযোগে লিটন যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছেন সেই ছাত্রলীগ কর্মীরা হলেন- সমাজবিজ্ঞান বিভাগের কামরুজ্জামান রাজু, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাইফুল ইসলাম, লোকপ্রশাসন বিভাগের সাইফুল ইসলাম রোহান, ইতিহাস বিভাগের হৃদয় আহমেদ কাজল, সমাজকল্যাণ বিভাগের ইয়ামিন ইসলাম, মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ওমর ফারুক।

তারা বিজয় একাত্তর হল ছাত্রলীগের শীর্ষ পদ প্রত্যাশী আবু ইউনুস এবং রবিউল হাসান রানার ছোট ভাই বলে পরিচিত। রবিউল ও ইউনুস ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনের অনুসারী।

অভিযোগপত্রে লিটন লিখেছেন, ‘গতকাল রাতে আমি অসুস্থ থাকা স্বত্ত্বেও অভিযুক্তরা জোরপূর্বক গেস্টরুমে ডেকে নিয়ে আমাকে লাইটের দিকে তাকিয়ে থাকতে বলে। এতে আমি চেতনা হারিয়ে ফেলি। পরে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছি। এখন আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।’

এ বিষয়ে কথা বলতে বুধবার রাতেই লিটনকে ফোন দেওয়া হলে অসুস্থ আছেন জানিয়ে পরে কথা বলবেন বলে জানান। সকালে ফোন দেওয়া হলে রিসিভ না করায় তার বক্তব্য জানা যায়নি।

তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এক শিক্ষার্থী গণমাধ্যমকে বলেন, রাত ৯টায় আমাদের গেস্টরুম শুরু হয়। হলে অবস্থান করা স্বত্ত্বেও গেস্টরুমে উপস্থিত হয়নি এরকম কেউ আছে কি না দেখার জন্য বড় ভাইয়েরা আমাদের এক বন্ধুকে গণরুমে পাঠায়। অসুস্থ হওয়ায় লিটন সেখানে শুয়ে ছিল।

‘বড় ভাইদের নির্দেশ মোতাবেক তাকে গেস্টরুমে নিয়ে আসা হয়। ছুটি না নিয়ে কেন অনুপস্থিত ছিল সেটি জানতে চেয়ে উপস্থিত বড় ভাইয়েরা তাকে বকা দেয়।

ওই শিক্ষার্থী আরও বলেন, ‘বড় ভাইদের মতে গেস্টরুমে টুপিওয়ালা সুয়েটার পরা যাবে না, কিন্তু লিটন অসুস্থ হওয়ায় সেটি পরে আসায় তাকে আরও বাজে ভাষায় গালাগাল করা হয়। এরপর শাস্তি স্বরূপ রাজু ভাই লিটনকে এক ঘণ্টা লাইটের দিকে তাকিয়ে থাকতে বলে।’

‘প্রায় ৫ মিনিট তাকিয়ে থাকার পর কাজল (হৃদয় আহমেদ কাজল) ভাই তাকে ছুটি দিয়ে রুমে পাঠিয়ে দেয়৷ কিছুক্ষণ পর খবর আসলো লিটন অসুস্থ হয়ে গেছে। তার বুকে ব্যথা শুরু হয়েছে। এরপর গেস্টরুম থেকে আমাদের ছুটি দিয়ে বড় ভাইয়েরাই তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়।’

ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে ছাত্রলীগ কর্মী ইয়ামিন বলেন, ‘তার খোঁজ নেওয়ার জন্যই আমরা তাকে গেস্টরুমে ডেকে এনেছি। গেস্টরুমে টুপিওয়ালা হুডি পরার নিয়ম না থাকায় আমরা তাকে টুপি খুলতে বলেছি। কারণ, তার সাথে আমরা কথা বলছি, কিন্তু তাকে ভালোভাবে দেখা যাচ্ছে না।’

লাইটে তাকিয়ে থাকার নির্দেশের ব্যাপারে ইয়ামিন বলেন, ‘আমরা লাইটে তাকিয়ে থাকতে বলেছি, কিন্তু আমরাই তো আবার তাকে পাঠিয়ে দিয়েছি।’

তবে এ ঘটনা অস্বীকার করেছেন ছাত্রলীগের অপরকর্মী রাজু। তিনি বলেন, ‘আমাকে ফাঁসানোর জন্য এগুলো বলা হচ্ছে। ছোট ভাইদের অনেকেই বাড়ি থাকায় আমরা গেস্টরুমই করি না।’

এ ঘটনা শুনে বুধবার মধ্যরাতেই হলে ছুটে আসেন বিজয় একাত্তর হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক আবদুল বাছির। তিনি অসুস্থ শিক্ষার্থীকে দেখতে গণরুমে যান। এ সময় তিনি ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দকে তিরষ্কারও করেন।

বাছির বলেন, ‘এত রাতে বিজয় একাত্তর হলে আসতে হয়েছে, বিষয়টা খুবই দুঃখজনক। ছাত্রলীগের প্রতি আহ্বান থাকবে সব কিছুতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখার।’

প্রাধ্যক্ষ জানান, এ বিষয়ে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তিন কার্য দিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবে। সেই আলোকে অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাদেরকে সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়া হবে।

এ বিষয়ে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘ঘটনাটি আমরা খতিয়ে দেখব। সংগঠনের নাম ব্যবহার করে কেউ যদি কোনো শিক্ষার্থীর সঙ্গে অসম্মানজনক ব্যবহার করে সেক্ষেত্রে আমরা সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেব।’