শিরোনাম
‘প্রাচ্যের অক্সফোর্ড’খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ। ১৯২১ সালের এই দিনে আনুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রমের মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ ঘটে প্রতিষ্ঠানটির। তৎকালীন ব্রিটিশশাসিত বাংলায় এটিই ছিল একমাত্র উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
দিবসটি উপলক্ষে এবারের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘গবেষণা ও উদ্ভাবন : ইন্ডাস্ট্রি-একাডেমিয়া সহযোগিতা’। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
১৯১২ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দেন তৎকালীন ব্রিটশ ভারতের ভাইস রয় লর্ড হার্ডিঞ্জ। এরপর পূর্ব ভাইস রয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আবেদন জানান ঢাকার নবাব স্যার সলিমুল্লাহ, ধনবাড়ীর নবাব সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী, শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হকসহ বাংলার অন্য নেতারা।
২৭ মে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য ব্যারিস্টার আর নাথানের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠিত হয়। ১৯১৩ সালে প্রকাশিত হয় নাথান কমিটির ইতিবাচক রিপোর্ট। ওই বছরই ডিসেম্বরে সেটি অনুমোদিত হয়। ১৯১৭ সালে গঠিত স্যাডলার কমিশনও ইতিবাচক প্রস্তাব দিলে ১৯২০ সালের ১৩ মার্চ ভারতীয় আইনসভা পাশ করে ‘দ্য ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যাক্ট (অ্যাক্ট নং-১৩) ১৯২০’। আর ছাত্রছাত্রীদর জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বার উন্মুক্ত হয় ১৯২১ সালের ১ জুলাই।
সে সময়কার ঢাকার সবচেয়ে অভিজাত ও সৌন্দর্যমণ্ডিত রমনা এলাকায় প্রায় ৬০০ একর জমির ওপর পূর্ববঙ্গ এবং আসাম প্রদেশ সরকারের পরিত্যক্ত ভবনগুলো এবং ঢাকা কলেজের (বর্তমান কার্জন হল) ভবনগুলোর সমন্বয়ে মনোরম পরিবেশ গড়ে ওঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠাকালে ৩টি অনুষদ ও ১২টি বিভাগ নিয়ে একটি আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসাবে এর যাত্রা শুরু হয়। প্রথম শিক্ষাবর্ষে বিভিন্ন বিভাগে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ছিল ৮৭৭ জন। শিক্ষক সংখ্যা ছিল মাত্র ৬০ জন।
প্রতিষ্ঠার পর থেকেই পূর্ববাংলার মানুষের মাঝে জ্ঞানের আলো ছড়ানোর পাশাপাশি শতবর্ষী এ বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ অর্জন হলো ১৯৫২-এর ভাষা আন্দোলন, বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলন, ছেষট্টির ছয় দফা আন্দোলন, উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান এবং ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন।
বাণীতে রাষ্ট্রপতি বলেন, ঐতিহাসিক রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন ও মহান মুক্তিযুদ্ধসহ দেশের সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামে এবং দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকরা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তবুদ্ধির প্রাঙ্গণ থেকেই দেশের সাধারণ মানুষের মুক্তির স্বপ্ন দেখেছিলেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও বুদ্ধিজীবী নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছেন। আমি তাঁদের স্মৃতির প্রতি জানাই গভীর শ্রদ্ধা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে তিনি শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীসহ বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সকল সদস্যকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান।
প্রতিষ্ঠার পর হতে আজ পর্যন্ত অনন্য দক্ষতায় মনন ও মানবিকতায় অভূতপূর্ব সংশ্লেষ ঘটিয়ে এই মহিরুহ বিদ্যায়তন সমগ্র জাতিকে জ্ঞান-বিজ্ঞানে পরিপুষ্ট করে চলেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ভারত ভেঙে অত্র অঞ্চলে যে রাষ্ট্র ব্যবস্থার সৃষ্টি হয়, সেই রাষ্ট্রটি বাংলা ভাষাভাষী জনগোষ্ঠীর নিরাপদ আবাসভূমি ছিল না, এ সত্যটি সবার আগে অনুধাবন করতে পেরেছিলেন এ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের তৎকালীন তরুণ ছাত্র শেখ মুজিবুর রহমান, যিনি সবার আগে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে আন্দোলন গড়ে তুলতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন এবং কালক্রমে হয়ে উঠেছেন বাঙালি জাতির পিতা, বঙ্গবন্ধু, বাঙালি ইতিহাসের মহানায়ক ও সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি।
শেখ হাসিনা বলেন, ’৫২ এর ভাষা-আন্দোলন, জাতির পিতা ঘোষিত-’৬৬ এর ছয়-দফার ভিত্তিতে স্বায়ত্বশাসন আন্দোলন এবং তাঁর আহ্বানে ’৭১ এর মহান স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং পরবর্তীকালে সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলন, অসাম্প্রদায়িক সাংস্কৃতিক সত্তার বিকাশ ও দেশের গণমানুষের আশা-আকাঙ্খা পূরণে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কর্মচারীগণ অগ্রভাগে থেকে অব্যাহতভাবে নেতৃত্ব প্রদান করেছেন।
সূত্র: দেশ রূপান্তর