শিরোনাম
জাল ও ভুয়া গ্রেপ্তারি পরোয়ানায় ২২ দিন হাজতবাসের পর মুক্তি পেয়েছেন মঞ্জুরুল ইসলাম (৩২) ও শফিউল ইসলাম (৫৮) নামের দুই কৃষক। জামাই ও শ্বশুর সম্পর্কের এই দুই নিরপরাধ কৃষকের বাড়ি জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার মহব্বতপুর সাখিদারপাড়া গ্রামে। সূত্র: আরটিভি
ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২-এর আদালতে দায়ের হওয়া একটি নারী নির্যাতন মামলার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা মূলে গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর ক্ষেতলাল থানার পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করে। আদালতের নির্দেশে ১৮ জানুয়ারি হাজতবাস থেকে তারা মুক্তি পান।
একই সঙ্গে জাল ও ভুয়া গ্রেপ্তারি পরোয়ানা প্রস্তুত করার অপরাধ এবং এ অপরাধে সহযোগিতায় জড়িতদের বিষয়ে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করে আগামী ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য গোয়েন্দা বিভাগের অফিসার ইনচার্জকে (ওসি) আদালত নির্দেশ দিয়েছেন। নির্দেশ অনুযায়ী তদন্ত চলছে।
জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার মহব্বতপুর সাখিদারপাড়ায় বাড়ি কৃষক শফিউল ইসলামের। তার জামাই মঞ্জুরুল ইসলামের বাড়িও একই গ্রামে। পেশায় তারা দুজনেই কৃষক। নারী নির্যাতনের অভিযোগে ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ আদালতে ৯৯/২ আগারগাঁও তালতলা, শেরেবাংলা নগর, ঢাকার তাহমিনা রহমান নামের এক নারী মামলা করেন। যার পিটিশন মামলা নম্বর ৭২/২০২০।
মামলার এজাহারে আসামি করা হয় পাবনা সদরের চর প্রতাপপুর গ্রামের জনৈক এম এ সামাদ বকুলকে। ওই মামলার বরাত দিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে মঞ্জুরুল ও শফিউলের নাম-ঠিকানা সম্বলিত আদালতের জাল সিল ও বিচারকের জাল স্বাক্ষরযুক্ত ভুয়া গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ক্ষেতলাল থানায় আসে। সেই পরোয়ানা মূলে গত ২৮ ডিসেম্বর রাতে মঞ্জুরুল ও শফিউলকে ক্ষেতলাল থানার পুলিশ তাদের বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে। জামাই-শ্বশুরের বিরুদ্ধে নারী নির্যাতনের অভিযোগের কথা শুনে চমকে ওঠেন তারা।
পুলিশকে জানান, এ ঘটনায় কোনোভাবেই তারা সম্পৃক্ত নন। কিন্তু পুলিশ তাদের কোনো কথা না শুনে রাতে থানায় নেওয়ার পরের দিন ২৯ ডিসেম্বর আদালতে উপস্থাপন করলে আদালতের বিচারক আতিকুর রহমান পরোয়ানা মূলে তাদের জয়পুরহাট জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। পরবর্তী সময়ে জয়পুরহাট হাজত থেকে এ মাসের ৭ তারিখে তাদের ঢাকার কেরানীগঞ্জ জেলহাজতে পাঠানো হয়।
জয়পুরহাট চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে ঢাকা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল বিচারকের কাছে খণ্ড নথি পাঠানো হয়। ঢাকা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালত-২-এর বিচারক ৭২/২০২০ পিটিশন মামলার নথি পর্যালোচনা করে শফিউল ইসলাম ও মঞ্জুরুল ইসলাম নামে কেউ এ মামলার আসামি নেই এবং তাদের নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জাল ও ভুয়া বলে আদেশের অনুলিপি জয়পুরহাট চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পাঠান। চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. জাহাঙ্গীর আলম ভুয়া গ্রেপ্তারি পরোনায়ায় জেলহাজতে আটক থাকা শফিউল ইসলাম ও মঞ্জুরুল ইসলামকে অব্যাহতি দেন। শফিউল ইসলাম ও তার জামাই মঞ্জুরুল ইসলাম ভুয়া পরোয়ানায় জেলহাজতে ছিলেন।
শফিউল ইসলাম বলেন, আমি ঢাকা যাইনি। অথচ জাল ও ভুয়া পরোয়ানায় আমাকে ঢাকায় জেলখানায় থাকতে হলো। সম্পর্কে আমরা জামাই-শ্বশুর। আমাদের বিরুদ্ধে নারী নির্যাতনের অভিযোগ কী করে হয়। আমাদের পায়ে ডাণ্ডাবেড়ি পর্যন্ত লাগানো হয়েছিল। আমার মান-সম্মান সব শেষ হয়ে গেছে। আমাদের মতো আর যেন কোনো নির্দোষ ব্যক্তি ভুয়া গ্রেপ্তারি পরোয়ানায় হয়রানির শিকার না হয়।
মঞ্জুরুলের স্ত্রী সুমাইয়া আক্তার বলেন, সামাজিকভাবে আমরা খুব হেয়প্রতিপন্ন হয়েছি। শ্বশুর-জামাই নারী নির্যাতন মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছে শুনে হতবাক হয়েছি আমরা। যে ভুলে আমাদের মান-সম্মান গেল, তার দায় কে নেবে। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই।
মহব্বতপুর গ্রামের আতাহার আলী বলেন, শফিউল এবং মঞ্জুরুল দুজনেই কৃষক। মাঠে কাজ করে তাদের দিন চলে। ঢাকার আদালতে কিভাবে তাদের নাম গেল। আমরা জানতে চাই।
ক্ষেতলাল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নীরেন্দ্রনাথ মণ্ডল বলেন, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা মূলে শফিউল ইসলাম ও মঞ্জুরুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে আদালতে উপস্থাপন করা হয়। যেভাবে গ্রেপ্তারি পরোনায়ানা থানায় আসার কথা সেভাবেই এসেছে।
জয়পুরহাটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, পুলিশ গ্রেপ্তারি পরোয়ানাপ্রাপ্ত দুজনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠিয়েছিল। পরবর্তী সময়ে তাদের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জাল ও ভুয়া বলে নিশ্চিত হয়ে আদালত তাদের মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন। এই অপরাধের সঙ্গে কারা জড়িত সে বিষয়ে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী ডিবি পুলিশ তদন্ত করছে।