মালয়েশিয়ায় অভিবাসী দিবস পালিত

ফানাম নিউজ
  ১৯ ডিসেম্বর ২০২১, ১৬:৩৩

মালয়েশিয়ায় যথাযথ মর্যাদায় আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস পালিত হয়েছে। সূত্র: আরটিভি

‘শতবর্ষে জাতির পিতা, সুবর্ণে স্বাধীনতা, অভিবাসনে আনবো মর্যাদা ও নৈতিকতা’ স্লোগানকে সামনে রেখে শনিবার (১৮ ডিসেম্বর) বেলা ১১টায় বাংলাদেশ দূতাবাসে এ দিবসটি পালন করা হয়।

দেশটিতে চলমান বিধিনিষেধের কারণে দূতাবাসের ফেসবুক পেজে লাইভে অংশগ্রহণ করেন প্রবাসীরা। সভার শুরুতে প্রবাসী এবং দেশের উন্নতি কামনা করে মোনাজাত করা হয়।

হাইকমিশনার মো. গোলাম সারোয়ারের সভাপতিত্বে ও শ্রম শাখার দ্বিতীয় সচিব ফরিদ আহমদের অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় সভায় রাষ্ট্রপতির বাণী পাঠ করেন শ্রম কাউন্সিলর মো. জহিরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রীর বাণী পাঠ করেন শ্রম কাউন্সিলর হেদায়েতুল ইসলাম মণ্ডল, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বাণী পাঠ করেন পাসপোর্ট ও ভিসা শাখার প্রথম সচিব মিয়া মোহাম্মদ কিয়ামুদ্দিন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাণী পাঠ করেন দ্বিতীয় সচিব ফরিদ আহমদ, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রীর বাণী পাঠ করেন দ্বিতীয় সচিব (রাজনৈতিক) বেগম রেহেনা পারভীন।

সভার গোলাম সারওয়ার তার বক্তব্যের শুরুতে সশ্রদ্ধ বেদনায় স্মরণ করেন দেশের পরাধীনতার গ্লানি মোচনে প্রাণোৎসর্গ করা বীর সন্তানদের। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সশ্রদ্ধচিত্তে স্মরণ করেন। সেইসঙ্গে জাতীয় চার নেতাসহ মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও সব বীর মুক্তিযোদ্ধাকে শ্রদ্ধা জানান।

হাইকমিশার প্রবাসীদের জন্য বাংলাদেশ সরকারের দেওয়া সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে বলেন, পাসপোর্ট সেবা সহজীকরণ করার প্রক্রিয়া চলছে। প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে আরও দ্রুত পাসপোর্ট দেওয়া হবে, যাতে বৈধকরণ প্রক্রিয়ার সুযোগ নিতে পারেন। শত প্রতিকূলতার মাঝেও দূতাবাস পাসপোর্ট বিতরণ অব্যাহত রেখেছে। দূর-দূরান্তে কর্মরত কর্মীদের, পোস্ট অফিসের মাধ্যমে দুই লাখ ৩০ হাজার পাসপোর্ট বিতরণ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রবাসীদের মেধা, শ্রম ও দক্ষতা বিশ্বে প্রশংসিত। এ ধারা অব্যাহত রাখতে আমরা সচেষ্ট আছি। বাংলাদেশ সরকার করোনাকালে প্রবাসেও কর্মীদের সহযোগিতা করেছে। একই সঙ্গে প্রবাসীরা দেশ এবং নিজ দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। এছাড়া করোনাকালে সম্মুখসারির কর্মী হিসাবে বাংলাদেশি কর্মীরা মালয়েশিয়ায় কাজ করছে।

হাইকমিশনার বলেন, কোনো এজেন্ট, দালাল বা তৃতীয়পক্ষের কিছু করার সুযোগ নেই। ফলে কারও প্রলোভনে প্রতারিত না হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

এসময় নতুন করে কর্মী নিয়োগের বিষয়ে, বাংলাদেশ সরকার ও দূতাবাসের পরামর্শ ছাড়া কোনো সিদ্ধান্ত না নিতে আহ্বান জানান তিনি।

সভায় প্রবাসী শফিকুল ইসলাম ও আবির তাদের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন এবং দূতাবাসের সেবার মান বাড়ানোর জন্য তারা অনুরোধ জানান।

শ্রম কাউন্সিলর মো. জহিরুল ইসলাম শ্রম পরিস্থিতি সম্পর্কে তুলে ধরে বলেন, আমরা মালিক পরিবর্তন করার সুযোগ করে দিয়েছি এবং সফল হয়েছি। করোনাভাইরাস সংক্রমণের মাঝে আমরা (দূতাবাস) কয়েক হাজার কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। বেতনহীন কর্মী যেন ছাঁটাই না করে। বিশ্বের অন্যান্য দেশ থেকে করোনাকালে চাকরি হারিয়ে অনেক প্রবাসীকে দেশে ফেরত যেতে হলেও মালয়েশিয়া থেকে একজনকেও কাজ হারাননি।

তিনি জানান, মালয়েশিয়ায় কর্মরত প্রত্যেক কর্মীকে বিমার আওতায় আনার প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি কর্মীদের সামাজিক নিরাপত্তা বৃদ্ধিতে দেশটির সোশ্যাল সিকিউরিটি অর্গানাইজেশন (সকসো) কর্তৃক ২০১৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৫ লাখ ৬ হাজার ১৬৩ জন বাংলাদেশি কর্মী মেম্বারশিপ লাভ করেছেন। ইতোমধ্যে ১৩ কোটি ১২ লাখ টাকার বিমা আদায় করা হয়েছে। এপর্যন্ত অস্থায়ী অক্ষমতাবরণকারী ৩ হাজার ১৭৮ জনকে ৮ কোটি ৮১ লাখ টাকা, স্থায়ী পঙ্গুত্ববরণকারী ৬৮ জনকে ৪ কোটি ২১ লাখ টাকা, ২১৯টি মৃতদেহ প্রেরণ বাবদ ২ কোটি ২ লাখ ৬৪ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে।

চলতি বছরের মার্চ থেকে ৩১ অক্টোবর ২০২১ পর্যন্ত কর্মক্ষেত্রে কোভিড-১৯ ভাইরাসে আক্রান্ত ৮৫০ জনকে ৯৮ লাখ ৯৭ হাজার টাকার সমপরিমাণ অর্থ সুবিধা প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া পাবনার দেলোয়ার মোল্লা দেশে থেকে দুর্ঘটনাজনিত সুবিধা পাচ্ছেন। তিনি এককালীন ৭ লাখ ৭ হাজার টাকা পেয়েছেন এবং আজীবন তিনি ৬৫০ রিঙ্গিত করে পাবেন। সিরাজগঞ্জের প্রামাণিক ৫০ লাখ টাকা ক্ষতি পূরণ পেয়েছেন।

গত এক বছরে ১ হাজার ৩০২ জন বাংলাদেশি মৃত্যুবরণ করেছেন। এরমধ্যে স্বাভাবিক মৃত্যুবরণ করেছেন ৮০২ জন, কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন ৫০০ জন। এরমধ্যে দূতাবাসের পক্ষ থেকে সরকারি খরচে কয়েকটি মৃতদেহ দেশে প্রেরণ করা হয়েছে। গত এক বছরে হাইকমিশন থেকে ৮ হাজার ৩৯১টি সাধারণ ট্রাভেল পাস এবং ক্যাম্পে থাকা ১ হাজার ৭৮৬ জনকে ট্রাভেল পাস প্রদান করা হয়েছে বলেও জানান শ্রম কাউন্সিলর।

আলোচনা সভায় ডেপুটি হাইকমিশনার খোরশেদ আলম খাস্তগীর, প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা কমোডর মোস্তাক আহমেদসহ দূতাবাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।

প্রবাস এর পাঠক প্রিয়