‘আন্তর্জাতিক রাজনীতি বুঝি না, শুধু বুঝি যুদ্ধ শান্তি বয়ে আনে না’

ফানাম নিউজ
  ০৪ মার্চ ২০২২, ০৫:৫৫

‘আন্তর্জাতিক রাজনীতি বুঝি না, শুধু বুঝি যুদ্ধ শান্তি বয়ে আনে না। সবসময় যুদ্ধের বিপক্ষে থাকি। যুদ্ধ কখনো শান্তি আনতে পারে না। যুদ্ধে সাধারণ মানুষের ব্যাপক ক্ষতি হয়। নারী ও শিশুরা অসহায় হয়ে পড়েন। যে কোনো যুদ্ধের বিরুদ্ধেই সবার অবস্থান নেওয়া উচিত।’

শুক্রবার এভাবেই ইউক্রেনের যুদ্ধ নিয়ে নিজের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন ইউক্রেনের নাগরিক বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মাহবুব হাসান শাকিল।

তিনি দীর্ঘ ২৭ বছর ইউক্রেনে ছিলেন। বছর দুয়েক আগে ১৬ বছর বয়সী একমাত্র ছেলেকে নিয়ে কানাডা যান। তার ইউক্রেনীয় স্ত্রী বর্তমানে কিয়েভে অবস্থান করছেন। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন শুরুর পর থেকে সুদূর কানাডায় অবস্থানরত শাকিল তার স্ত্রীর নিরাপত্তাহীনতায় ভীষণ উদ্বিগ্ন হয়ে দিন কাটাচ্ছেন।

শুরুর দিকে স্ত্রীকে বার বার পোল্যান্ড কিংবা অন্য কোনো দেশে চলে যাওয়ার জন্য বললেও তিনি রাজি হননি। কিন্তু দিন দিন রাশিয়ার মিসাইল ও বোমা হামলায় পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় প্রাণ বাঁচাতে কিয়েভ ছাড়ার চেষ্টা করেও পারছেন না। কারণ তার স্ত্রী কিয়েভের পার্লামেন্টের কয়েক কিলোমিটারের মধ্যে বাস করেন। রাশিয়া পার্লামেন্টসহ আশপাশের এলাকায় আক্রমণ চালাতে পারে, সেজন্য ইউক্রেন সরকার কয়েক কিলোমিটার এলাকা সিল করে দিয়েছে। এখন চাইলেও সেখানকার কেউ বাইরে যেতে পারছেন না। শাকিল ও তার স্ত্রীর কেউ ঘূণাক্ষরেও ভাবতে পারেননি যুদ্ধ পরিস্থিতি এতটা ভয়াবহ হবে।

২৭ বছর ইউক্রেনে বসবাসের অভিজ্ঞতার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বলেন, ইউক্রেনীয়দের মধ্যে দেশপ্রেম প্রবল। তার ১৬ বছর বয়সী ছেলের ছোটবেলা সেখানে কাটানোর পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমান যুদ্ধ পরিস্থিতিতে সে দেশে ফিরে যেতে চাইছে।

ইউক্রেনে ১৮ বছর থেকে ৬০ বছর বয়সীদের দেশের প্রয়োজনে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে বলে তিনি জানান। তার ছেলের বয়স কম হলেও দেশপ্রেমের কারণে আবেগতাড়িত হয়ে পড়ছে বলে শাকিল জানান।

গাজীপুরের বাসিন্দা হাবিবুর রহমান হাবিব ৩০ বছর যাবৎ ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে বসবাস করছেন। তার বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া ছেলে তায়িব এরই মধ্যে রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করতে যুদ্ধে চলে গেছেন।

তিনি জানান, ইউক্রেনের নাগরিকরা স্বপ্রণোদিত হয়ে যুদ্ধে নাম লেখাচ্ছেন। ইউক্রেনে ৪০ মিলিয়ন লোকের বসবাস। তাদের মধ্যে বিভিন্ন দেশ থেকে আসা দুই মিলিয়ন মানুষ মুসলিম। ইউক্রেন সরকার মুসলিমদের বিভিন্ন সুযোগসুবিধা দেয়। রাজধানী কিয়েভে পাদল নামে একটি বিশাল পাহাড় মুসলিমদের নামে করে দিয়েছে। সেখানে সেন্টার মসজিদ রয়েছে এবং সরকার অনুমোদিত ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদরাসা রয়েছে। ইউক্রেন সরকার সবসময় মুসলিমদের প্রতি সহানুভূতিশীল বলে তিনি জানান।

তিনি দুঃখ করে বলেন, দেশের কিছু মানুষ না বুঝেই তার ছেলে ইহুদিদের পক্ষে যুদ্ধে গেছে বলে নানা কটূক্তি করছে, যা মোটেই সত্যি নয়। ইউক্রেন বিভিন্ন ধর্মের মানুষের বসবাস। তার ছেলে দেশের জন্য যুদ্ধে গেছে। এজন্য তিনি নিজেও গর্বিত। তিনি দেশের মানুষের কাছে ছেলের জন্য দোয়া চেয়েছেন।

প্রবাস এর পাঠক প্রিয়