শিরোনাম
‘কিয়েভের অবস্থা খুব খারাপ। ঠিক এই মুহূর্তেই ঘন ঘন সাইরেন বাজছে। আমরা ভালো নেই। কিন্তু কিয়েভ ছাড়ছি না। সাধারণ ইউক্রেনবাসীর সঙ্গে আছি,’ একনিশ্বাসে কথাগুলো বললেন মাহবুব আলম।
মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় বিকেল পাঁচটার দিকে কথা হয় ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভপ্রবাসী এই বাংলাদেশির সঙ্গে। যুদ্ধে আক্রান্ত এ নগরে তাঁর বসবাস প্রায় ৪০ বছর ধরে। ব্যবসায়ী মাহবুব থাকেন কিয়েভের পোজনিয়াকি এলাকায়। তিনি যে এলাকায় থাকেন, সেখান থেকে অনেকেই নিরাপদ আশ্রয়ে চলে গেছেন। কেউ ইউক্রেনের গ্রামাঞ্চলে চলে গেছেন, কেউবা একেবারে দেশ ছেড়েছেন। এ সুযোগ মাহবুব আলমেরও ছিল। কিন্তু তাঁর কথা, ‘মানুষ প্রতিরোধযুদ্ধ করছেন। তাঁদের ছেড়ে যেতে চাই না এই দুঃসময়ে।’
দুঃসময়ই বটে, প্রতিবেশী দেশ রাশিয়ার আক্রমণ আবার তারই মধ্যে জেঁকে বসেছে শীত। এ সময় ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়ছেন সাধারণ মানুষও। শীতের এ সময়ে প্রয়োজনীয় গরম পোশাকের সংকটে সেনাসদস্য ও নতুন যোদ্ধারা। তাই বাবা ইসলাম গাউছুল শাহীনের দোকান থেকে গতকালই ৫০টি টুপি দিয়েছেন তাঁর মেয়ে শান্তি ইসলাম (২৭)। বাবা বাংলাদেশে আটকা পড়েছেন। প্রতিরোধযোদ্ধাদের গরম পোশাকের সংকটের কথা শুনে বাবাই তাঁকে পোশাক দেওয়ার নির্দেশ দেন বলে জানান শান্তি। এর আগে কয়েক দফায় দস্তানা, মোজা দিয়েছেন গুদাম থেকে।
শান্তি ইসলামের বাড়ি কিয়েভের জাকরেভসকভা এলাকায়। সেই এলাকায় তাঁর সমবয়সী তরুণেরা গড়ে তুলেছেন সশস্ত্র বাহিনী। তাঁদের সহযোগিতা করছেন হাত খুলে।
শান্তি মুঠোফোনে বলেন, ‘রাস্তাঘাট বিপজ্জনক হয়ে গেছে। রুশ বাহিনীর অনুগত অনেকেই ওত পেতে থাকেন ছিনতাইয়ের জন্য। আবার অনেকে ইউক্রেন সেনাবাহিনীর পোশাক পরে ছদ্মবেশ নিয়ে আছেন। তাঁদের সহযোগিতার জন্য দোকানে খুব ভয়ে ভয়ে গেছি বার কয়েক।’
ইউক্রেনের সাধারণ মানুষের লড়াই এবং সেই লড়াইয়ে নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী সহায়তার খবর দেন কিয়েভের বারসিগোভকা এলাকার খালেদ মোশাররফ। এলাকাটি কিয়েভের কেন্দ্রস্থল থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে। খালেদ মোশাররফের গ্রামের বাড়ি চাঁদপুরে। প্রায় ২৫ বছর ধরে ইউক্রেনে আছেন এই ব্যবসায়ী। বিয়ে করেছেন ইউক্রেনের নাগরিককে। যুদ্ধের শুরুতে চলে যেতে চেয়েছিলেন গ্রামে শ্বশুরবাড়ি এলাকায়। কিন্তু এখন সেই পথ মোটেও নিরাপদ নয় বলেও জানান খালেদ। আর স্থানীয় মানুষের প্রতিরোধের স্পৃহা তাঁকে আশ্বস্ত করেছে, জানান খালেদ।
সূত্র: প্রথম আলো