শিরোনাম
পরিবেশ দূষণ একটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সমস্যা। প্রতিনিয়তই এটি বাড়ছে। ঝুঁকি তৈরি করছে। এতে প্রকৃতি হারাচ্ছে তার স্বাভাবিক রূপ। তৈরি হচ্ছে নানা শঙ্কা। পরিবেশ দূষণে বাংলাদেশও একটি ঝুঁকিপূর্ণ দেশ। বিশ্বের দূষিত শহরের শীর্ষে রাজধানী ঢাকার নাম প্রায়ই উঠে আসে। বিশেষ করে ঢাকার বস্তিবাসী ভয়াবহ এ দূষণের শিকার হচ্ছে। দূষণরোধে বিশেষজ্ঞরা নানা সময়ে বিভিন্ন সুপারিশ করলেও তা সেভাবে বাস্তবায়ন হয়নি। ফলে এ সমস্যা বেড়েই চলছে। এখনই এর রাশ টেনে ধরতে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে পরামর্শ দেন তারা।
বর্তমান বিশ্ব পরিবেশ ও জলবায়ু নিয়ে বড় ঝুঁকি মোকাবিলা করছে। এ ঝুঁকি প্রতিরোধেই সম্প্রতি মিশরে শেষ হয়েছে কপ-২৭ বা জলবায়ু সম্মেলনের ২৭তম আসর। সেখানে পরিবেশ ও জলবায়ু নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা আলোচনা করেন। বিষয়টি নিয়ে তারা উদ্বেগ প্রকাশ করেন। বেশকিছু বিষয়ে দ্রুত বাস্তবায়নের পরামর্শও দেন তারা। এখানের আলোচনায়ও ঢাকার বস্তিবাসীদের দুর্ভোগের বিষয়টি উঠে আসে।
বাংলাদেশের নানা জায়গায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে অসংখ্য বস্তি। যেখানে একসঙ্গে বাস করেন হাজার হাজার মানুষ। যাদের নেই স্বাস্থ্যসম্মত বাসস্থান, পায়খানা বা সুয়ারেজ ব্যবস্থা। তাদের শিক্ষাব্যবস্থাও নাজুক। বস্তিবাসীর এ দুর্ভোগ পরিবেশের ওপর সরাসরি নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এতে প্রকৃতি স্বাভাবিক রূপ হারাচ্ছে। সৃষ্টি হচ্ছে নানারকম প্রাকৃতিক দুর্যোগ।
বিশেষজ্ঞরা আরো বলছেন, অপরিকল্পিত নগরায়ণের ফলেই বস্তি সৃষ্টি হচ্ছে। দুর্ভোগ বাড়ছে। এর প্রভাব পড়ছে পরিবেশের ওপর।
সরেজমিন রাজধানীর কড়াইল বস্তিতে দেখা যায়, পোলের উপর এক বৃদ্ধ বসে আছেন। ৫০ বছরের বেশি বয়স্ক মানুষটির নাম এয়াকুব। পেশায় রিকশাচালক। ভোলা থেকে এসেছেন। প্রায় ১০ বছর এ বস্তিতেই বসবাস করছেন তিনি।
কেমন আছেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, বস্তিতে যেমন থাকা যায় তেমন আছি। অনেক মানুষ এক সঙ্গে থাকি। পানি পাওয়া যায় না ঠিক মতো। সুপেয় পানির অভাব। ঘিঞ্জি পরিবেশ। এভাবেই চলছে।
কল্যাণপুরের ৭নং পোড়া বস্তিতে কথা হয় সোমা বেগমের সঙ্গে। সকালে মানুষের বাসায় কাজ করলেও ৫ বছর ধরে বিকেলে পিঠা বিক্রি করেন এই নারী। তিনি জানান, তাদের বস্তিতে ১৫-২০টা পরিবার বসবাস করে। পায়খানা মাত্র দুটি। সবাই মিলেই ব্যবহার করেন।
সোমা বেগম বলেন, উপার্জন কম তাই এখানে থাকতে হয়। বাচ্চাদের পড়াতে টাকা লাগে। এখানে তেমন স্কুল নেই। অনেক মানুষ মিলে দুটি পায়খানা ব্যবহার করতে হয়। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিকে সেরকম কারো নজর নেই। অনেক ধরনের রোগ হয়। কিন্তু কিছু করার নেই। আমাদের বস্তিতে প্রাইমারি চিকিৎসার ব্যবস্থাও নেই।
কল্যাণপুরের ৭নং পোড়া বস্তিতে আরো দেখা যায়, একই রাস্তায় অনেক মানুষ। সেখানে কেউ রান্না করছেন, কেউবা রিকশা ঠিক করছেন। আবার কেউ বিক্রি করছেন পিঠা। এর পাশেই সরু গলিতে বাঁধা একটি বড় মহিষ। অপরদিকের একই রাস্তায় পায়খানা ও গোসলখানা। এমনই পরিবেশ বিরাজ করছে সেখানে।
রাজধানীর মহাখালীর সাততলা, মিরপুরের ভাসানটেক, তেজগাঁয়ের রেলওয়ে, বেগুনবাড়ি, ঝিলপাড়, মোহাম্মদপুরের বাশবাড়ি, চাঁদের হাট বস্তিতেও দেখা গেছে একই চিত্র।
ঢাকায় বস্তি বাড়ার কারণ হিসেবে কোয়ালিশন ফর দ্য আরবানপুর-এর অ্যাডভাইজার এবং হিউম্যান রাটস ডেভেলপমেন্ট সেন্টারের মহাসচিব মাহবুবুল হক বলেন, ঢাকার বস্তিবাসীদের বেশিরভাগই গ্রাম থেকে আসা। জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে গ্রামে মানুষের উপার্জনের ক্ষেত্র নষ্ট হচ্ছে। নদী ভাঙনে ভিটেমাটি হারিয়ে যাচ্ছে। থাকার জায়গা কমছে। এজন্য নিম্নবিত্ত মানুষের বেশিরভাগই ঢাকামুখী হচ্ছেন। এতে রাজধানীতে বস্তির সংখ্যা বাড়ছে। অনেকে বিভিন্ন এনজিও বা মহাজনের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে পরিশোধ করতে না পেরে রাজধানীর বস্তিতে এসে লুকিয়ে থাকছেন। এতেও বস্তির সংখ্যা বাড়ছে।
তিনি আরো বলেন, এরকম নানাভাবে বস্তিবাসীর সংখ্যা বাড়ছে। সে অনুযায়ী থাকার জায়গা বাড়ছে না। আবার বস্তিতে চিকিৎসা ব্যবস্থা নেই। ভালোভাবে জীবনধারণের সুযোগও নেই। তারপরও তারা টিকে থাকার চেষ্টা করছেন। ফলে নানারকম দুর্ভোগও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বস্তিবাসীদের দুর্ভোগের কারণে পরিবেশের ওপর কেমন প্রভাব পড়েছে- এমন প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল বলেন, বস্তিতে যারা থাকেন তারা আসলে সুবিধাবঞ্চিত মানুষ। তাদের নিয়ে সাধারণ কোনো পরিকল্পনা নেই। তারা অল্প জায়গায় এক সঙ্গে অনেক মানুষ বাস করেন। ফলে তারা স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা ব্যবহার করতে পারেন না। যত্রতত্র মল-মূত্র ত্যাগ করায় পরিবেশ নষ্ট হয়। পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা ভালো না থাকায় তাদের বর্জ্য রাজধানীর বিভিন্ন খালের পানিতে যাচ্ছে। এতে পানি দূষিত হচ্ছে। এসব ময়লার কারণে নদী-নালা খাল-বিল তাদের স্বাভাবিকতা হারাচ্ছে। এসব বর্জে্য অনেক খাল ভরাট হওয়ার উপক্রম। চিকিৎসা সচেতনতা না থাকায় তারা সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা নিতে পারছেন না। এছাড়া সুপেয় পানির অভাবে তারা সারা বছরই নানারকম রোগে ভোগেন।
পরিবেশের ওপর এর প্রভাব দূর করার বিষয়ে তিনি বলেন, বস্তিবাসীরা সমাজেরই একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। সঠিক পরিকল্পনার মধ্যে তাদেরকে না আনলে বৃহৎ জনগোষ্ঠীর ওপর প্রভাব পড়বে। তাদের নিয়ে সঠিক পরিকল্পনা না করতে পারলে নগরবাসীও তাদের কাঙিক্ষত সুবিধা পাবেন না। সবার আগে বস্তিবাসীদের আবাস্থলের ব্যবস্থা করতে হবে। এজন্য কর্ম পরিকল্পনা করতে হবে। তাদের জন্য সমন্বিত চেষ্টা করতে হবে। তাহলেই সম্ভব সুন্দর নগরী গড়ে তোলা সম্ভব হবে।
সর্বশেষ ২০১৪ সালে বস্তি শুমারি করে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। ওই শুমারি অনুযায়ী, ঢাকা শহরের দুই সিটি কর্পোরেশনে মোট ৩ হাজার ৩৯৪টি বস্তি রয়েছে। সেখানে মোট ঘরের সংখ্যা প্রায় ১ লাখ ৭৫ হাজার।
সরকারি এ সংস্থার তথ্যানুযায়ী, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) এলাকায় বস্তি রয়েছে ১ হাজার ৬৩৯টি। এসব বস্তিতে খানা বা ঘর বা পরিবার রয়েছে ১ লাখ ৩৫ হাজার ৩৪০টি। সদস্য সংখ্যা ৪ লাখ ৯৯ হাজার ১৯ জন।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি) এলাকায় বস্তি রয়েছে ১ হাজার ৭৫৫টি। এসব বস্তিতে খানা (ঘর বা পরিবার) রয়েছে ৪০ হাজার ৫৯১টি। এসব ঘরে বসবাস করে ১ লাখ ৪৭ হাজার ৫৬ জন।
গ্রামের তুলনায় শহরের বস্তিবাসীদের মধ্যে শিশু মৃত্যুহার বেশি। যেখানে বস্তিতে প্রতি হাজারে ৫৭ শিশুর মৃত্যু হয়, সেখানে গ্রামে হাজারে মারা যায় ৪৯ জন। এসব রোগ-শোকে শারীরিক ও বুদ্ধি প্রতিবন্ধীরা সবচেয়ে বেশি অবহেলিত। পরিবারে তাদের বোঝা বলে মনে করা হয়। ফলে অনেকেই তাদের ভিক্ষাবৃত্তির সঙ্গে যুক্ত করে।
শহরের বস্তিবাসীদের মধ্যে শিশু মৃত্যুহার বেশি থাকার কারণ হিসেবে ডিস্ট্রিক্ট সার্ভিলেন্স মেডিকেল অফিসার ডা. শুভ কুমার ভৌমিক বলেন, শহরের বস্তিতে শিশু মৃত্যুহার বেশি হওয়ার বড় কারণ অপুষ্টি এবং গর্ভকালীন সময়ে মায়েদের চিকিৎসার অভাব।
এক জরিপে দেখা গেছে, বস্তিতে জন্ম নেয়া বেশিরভাগ শিশুই অপুষ্টিতে আক্রান্ত এবং তাদের মধ্যে বেশিরভাগই চিকিৎসাবঞ্চিত। আবার বেশিরভাগ প্রসূতিই হাসপাতালে বাচ্চা প্রসবে আগ্রহী নন। এতে দেখা যায়, অনেক শিশু জন্মের সময়ই মারা যায়। অথবা বিভিন্ন ধরনের বিকলাঙ্গতা নিয়ে ওইসব শিশুর জন্ম হয়।
অন্য আরেকটি জরিপে দেখা গেছে, গর্ভকালীন সময়ে মায়েদের যে কয়েকটি চেকআপের প্রয়োজন, তার বেশিরভাগই তারা করেন না। ফলে গর্ভের সন্তান বিভিন্ন ধরনের সমস্যায় আক্রান্ত হয় এবং কিছু কিছু শিশু মারাও যায়। বর্তমান সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এগুলো নিয়ে কাজ শুরু করেছে এবং সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সমাধানের উপায় বের করছে। এছাড়া বিভিন্ন এনজিও এবং সরকারি কিছু প্রতিষ্ঠান মাঠপর্যায়ে কাজ করছে।
বস্তির শিশুদের মানসিক বিকাশে থাকা বাধার বিষয়ে সাইকোলজি অ্যান্ড মাইন্ড-এর উপদেষ্টা ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট জিয়ানুর কবির বলেন, বস্তিতে ঘিঞ্জি পরিবেশে শিশুরা বেড়ে ওঠে। খেলাধুলা করার পরিবেশ নেই। এগুলো তাদের পরিপূর্ণ মানসিক বিকাশে বাধা দেয়। শিশুরা বিভিন্ন অপরাধ দেখতে দেখতে বড় হয়, যা তাদের অপরাধী করতে উৎসাহিত করে। আবার বাবা-মায়ের সঙ্গে কোয়ালিটি সময় কাটানোর সুযোগ না পাওয়ার কারণে তাদের এটাচমেন্ট সমস্যা হয় এবং পরবর্তী জীবনে অন্য মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা করতে পারে না। অনেক শিশু বাবা-মায়ের পর্যাপ্ত মনিটরিংয়ের অভাবে শারীরিক, মানসিক এমনকি যৌন নির্যাতনের শিকারও হয়।
এদিকে ঢাকায় প্রতিদিন ৬ হাজার মেট্রিক টনেরও বেশি বর্জ্য উৎপাদিত হয়। যার এক তৃতীয়াংশই সংগ্রহ করা হয় না। সাধারণত বস্তি এলাকার বর্জ্য সংগ্রহ করা হয় না। উল্টো তারা যেখানে বসবাস করে সেখানে যেমন খাল-বিল, নদী ও ডোবার আশেপাশে অন্য জায়গা থেকে ময়লা এনে স্তূপ করা হয়। নগরে যে বর্জ্য উৎপাদিত হয়, তার ৭০ ভাগ পচনশীল। বর্জ্য পচে যাওয়ার পর যে পরিবেশ দূষণ ও স্বাস্থ্যগত ক্ষতি হয়, তার সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ে বস্তিবাসীর ওপর।
নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আশীষ কুমার দে বলেন, বস্তি এলাকার বর্জ্য সংগ্রহ করা হয় না। সেসব বর্জ্য তারা পানিতে বা ড্রেনে ফেলে দেয়। যা পরে খালে যায়, তারপর নদীতে। এতে খালের পানি নষ্ট হয়। নদীর পানিও নষ্ট হয়। অনেক নদী এসব কারণে মরে যাচ্ছে। স্বাভাবিক স্রোতধারা হারাচ্ছে। যা পরিবেশ ও জলবায়ুর জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ।
বর্জ্য অব্যবস্থাপনার ফলে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য স্বল্প এবং দীর্ঘমেয়াদে ঝুঁকির মধ্যে থাকে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, বস্তির ২৭ শতাংশ মানুষ ময়লা পানির জন্য এবং ১৯ শতাংশ জলাবদ্ধতার কারণে জটিল রোগে আক্রান্ত।
বর্জ্য অব্যস্থাপনার কারণে বস্তির মানুষ জন্মের সময় প্রতিবন্ধকতা ও প্রজনন স্বাস্থ্য ঝুঁকি ও ক্রনিক ডিজঅর্ডারে ভোগেন। সর্দি, জ্বর, কাশি, জন্ডিস, ফ্লু, ইউরিন ইনফেকশন ও হেপাটাইটিস ‘বি’ এখন সাধারণ সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বস্তির বর্জ্য অব্যস্থাপনার কারণে পরিবেশের ওপর প্রভাব পড়ার বিষয়ে স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান অধ্যাপক আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, বস্তির বর্জ্যগুলো আমাদের পরিবেশ নষ্ট করে। যত্রতত্র বর্জ্য ফেলার কারণে বস্তির স্বাভাবিক পরিবেশ ব্যাহত হয়। এসব বর্জ্য ড্রেনেজ সিস্টেমের মাধ্যমে নালা-নর্দমায় গিয়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করে। এসব বর্জ্য পচে-গলে প্যাথেজনিক পলিউশন হয়। বিভিন্নরকম জীবাণু বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে। বস্তির এই বর্জ্যে প্রায় আগুন দিতে দেখা যায়। আগুন দিয়ে পোড়ানোয় ধোঁয়া ও বায়ুদূষণ সৃষ্টি হয়। আর বর্জে্য প্লাস্টিক থাকলে বিষাক্ত গ্যাস সৃষ্টি হয়ে বায়ুদূষণ করে। পুড়ে যাওয়া প্লাস্টিক মাটিতে মিশে মাটির উর্বরতা নষ্ট করে। বস্তির এ বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অভাবের কারণে শুধু বস্তির মানুষই রোগাক্রান্ত হয় তা নয়, যেহেতু এগুলো বাতাসের সঙ্গে মিশে যায়। সেহেতু বস্তির আশেপাশে লোকালয়ে জীবাণু ছড়িয়ে যায়। ফলে নগরবাসী রোগাক্রান্ত হন।
এ সমস্যা কীভাবে সমাধান করা যায়- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বস্তির বর্জ্য সিটি কর্পোরেশনের কালেক্টিং সিস্টেমের সঙ্গে যুক্ত করতে হবে। বস্তিবাসীর ওপর অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টি না করেই এসব বর্জ্য অপসারণের ব্যবস্থা প্রয়োজন। যদি এগুলো আলাদা কোনো এক জায়গায় জড়ো করে কম্প্রেসার তৈরি করা যায়, তাহলে উপকার হবে। বস্তির আশেপাশেই বায়ো-কম্প্রেসার তৈরি করতে পারলে সমস্যা ধীরে ধীরে সমাধান করা যাবে।
অধ্যাপক আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার আরো বলেন, বস্তিবাসীর দুর্ভোগের সঙ্গে পরিবেশ দূষণের গভীর সম্পর্ক রয়েছে। তাই বস্তিবাসীদের দুর্ভোগ কমলে পরিবেশ দূষণও কমবে।
নগর পরিকল্পনাবিদ, গবেষক, উন্নয়নকর্মী, আইনবিদ, মানবাধিকারকর্মীরা মনে করছেন, বস্তিবাসীর জন্য সঠিক বাসস্থান ও জীবনধারণের অধিকার নিশ্চিত করতে সুনির্দিষ্ট আইন প্রণয়ণের বিকল্প নেই। বস্তিবাসী ও স্বল্প আয়ের মানুষের বিষয়টি মাথায় রেখে অন্তর্ভুক্তিমূলক নগর-পরিকল্পনা প্রণয়নের পাশাপাশি তাদের বাসস্থানের জন্য ভূমি বরাদ্দ প্রক্রিয়া সহজ করা ও জাতীয় গৃহায়ণ নীতিমালা বাস্তবায়ন করতে হবে।
তারা আরো যোগ করেন- বস্তিবাসীদের পুনর্বাসন না করে তাদের উচ্ছেদ করা যাবে না।
এ বিষয়ে ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু বলেন, পুনর্বাসন ছাড়া বস্তি উচ্ছেদ করবে না শেখ হাসিনা সরকার। পরিকল্পিত নগরায়ণের জন্য উচ্ছেদ কার্যক্রম চালাতে হয়। তবে তা নিয়মতান্ত্রিক উপায়েই করা হবে।
তিনি আরো বলেন, বর্তমান সরকারপ্রধান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বস্তিবাসীদের জীবনমান উন্নয়ন নিয়ে সার্বক্ষণিক চিন্তা করেন। কিন্তু সামাজিক অবক্ষয়ের কারণে তা বাস্তবায়নে বিলম্ব হচ্ছে। গৃহহীন ও ছিন্নমূল মানুষের জন্য আশ্রয়ণ, ঘরে ফেরা, একটি বাড়ি, একটি খামার, বয়স্ক ভাতা ও বিধবা ভাতার মতো কর্মসূচিগুলো চালু করেছে সরকার। আরো পদক্ষেপ নেয়া হবে।
পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) চেয়ারম্যান আবু নাসের খান বলেছেন, বস্তিবাসীদের মৌলিক অধিকার হচ্ছে পরিচ্ছন্ন ও সুস্থ জীবন। তাদের স্বাস্থ্য ও শিক্ষার অধিকারকে সবার আগে তুলে ধরতে হবে।
তিনি বলেন, বস্তির পরিবেশ ও স্বাস্থ্যগত যে সংকট তৈরি হয়েছে, তার প্রধান কারণ সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অভাব। অথচ দেশে পরিবেশ আইন, কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আইনসহ কত আইন রয়েছে। বস্তিবাসীদের সন্তানদের শিক্ষার জন্য সরকারি স্কুল স্থাপন দরকার। এসব বিষয়ে সরকারের কাছে ৩ দফা সুপারিশও তুলে ধরেন আবু নাসের খান।
সুপারিশগুলো হলো-১. পরিচ্ছন্ন পরিবেশের জন্য ডাস্টবিন/সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করা। ২. জনকল্যাণে স্থানীয় পর্যায়ে কমিউনিটির জন্য স্বাস্থ্যকেন্দ্র করা এবং ৩. পরিবেশসম্মত সরকারি স্কুল তৈরি করা।
দরিদ্রতা নিয়ে কাজ করা গবেষকরা বলছেন, সামগ্রিক পরিকল্পনায় বস্তিবাসীর উন্নয়ন করা সম্ভব নয়। তাদের জন্য দরকার বস্তিকেন্দ্রিক কৌশলপত্র নির্ধারণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়ন।