শিরোনাম
আসছে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হতে পারে। তবে এক্ষেত্রে আগের তুলনায় বাড়বে কর। নতুন বাজেটে কোনো প্রশ্ন ছাড়াই ১৫ শতাংশ কর দিয়ে কালোটাকা বা অপ্রদর্শিত আয় বৈধ করার সুযোগ রাখা হতে পারে।
অপ্রদর্শিত অর্থকে অর্থনীতির মূলধারায় আনতে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে পুরোনো আয়কর আইনের ১৯এ ধারা বর্তমান আইনে অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনা করছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এ পদ্ধতিতে কর দিয়ে টাকা বৈধ করলে সরকারের অন্য কোনো সংস্থা আয়ের উৎস নিয়ে প্রশ্ন করতে পারবে না।
এর আগে ২০২০-২১ অর্থবছরে মাত্র ১০ শতাংশ কর পরিশোধ করে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দিয়েছিল সরকার। ২০২১-২২ অর্থবছরে মাত্র সাড়ে ৭ শতাংশ কর দিয়ে বিদেশ থেকে অঘোষিত অর্থ দেশে আনার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। যদিও বিদেশ থেকে অঘোষিত অর্থ দেশে আনার সুযোগ কেউ কাজে লাগায়নি।
এনবিআর সূত্র জানায়, ২০২০-২১ অর্থবছরে ১১ হাজার ৮৩৯ জন ২০ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বৈধ করেন। এতে আদায় হয় ২ হাজার ৬৪ কোটি টাকার রাজস্ব। এর মধ্যে ৭ হাজার ৫৫ জন এনবিআরের অস্থায়ী বিধানের আওতায় ব্যাংকে জমা বা নগদ ১৬ হাজার ৮৩০ কোটি টাকা বৈধ করেন। বাকি টাকা জমি, ফ্ল্যাট বা শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করা হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনবিআরের এক কর্মকর্তা বলেন, চার বছর বিরতির পর সাধারণ ক্ষমার আওতায় আগামী অর্থবছরে ফেরত আসতে পারে অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করার সুযোগ। অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলা করতে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, ২০২০-২১ অর্থবছরে রেকর্ড পরিমাণ রাজস্ব আদায় হয়েছিল। এসব দিক বিবেচনা করে নতুন সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে।
আয়কর আইন অনুযায়ী, যে কোনো করদাতা সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ কর দিয়ে এরসঙ্গে ওই করের ১০ শতাংশ জরিমানা দিয়ে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ পান। তবে এর বাইরে প্লট বা ফ্ল্যাট কেনার ক্ষেত্রে এলাকাভেদে নির্দিষ্ট আয়তনের ওপর ভিত্তি করে নির্ধারিত কর পরিশোধ করেও টাকা সাদা করার সুযোগ আছে। যদিও এক্ষেত্রে সরকারের সংশ্লিষ্ট যে কোনো সংস্থা চাইলে পরবর্তীতে ওই টাকার উৎস সম্পর্কে প্রশ্ন করতে পারবে। অবশ্য তাতে খুব একটা অর্থ সাদা হচ্ছে না বা মূলধারার অর্থনীতিতে যুক্ত হচ্ছে না।
এছাড়া অর্থনৈতিক অঞ্চল বা হাইটেক পার্কে মাত্র ১০ শতাংশ কর দিয়ে অপ্রদর্শিত আয় বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে। এই বিনিয়োগে অ্যামনেস্টি (দায়মুক্তি) পান বিনিয়োগকারীরা।
আসন্ন বাজেটে দেশের অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাইটেক পার্কে প্রশ্নহীনভাবে কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ বন্ধ হতে পারে। এনবিআর সংশ্লিষ্টরা জানান, অনেকদিন ধরে এই সুযোগ দেওয়ার পরও বিনিয়োগ বাড়েনি। এছাড়া নতুন বাজেটে এনবিআরকে কর আদায় বাড়াতে হবে। এজন্য তারা নতুন নতুন ক্ষেত্র খুঁজছে। আর যারা এখানে বিনিয়োগ করবেন, তাদের অর্থনৈতিক অবস্থা অনেক ভালো। কর দিতে হলেও তাদের কোনো সমস্যা হওয়ার কথা না।
তবে কালোটাকা সাদা করার উদ্যোগকে বৈষম্যমূলক ও অযৌক্তিক বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
এ বিষয়ে গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘নতুন করে এমন সুযোগ দেওয়া উচিত হবে না। কারণ সাধারণ করদাতাদের ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ হারে কর দিতে হচ্ছে। আর যারা কর ফাঁকি দিয়েছে কিংবা চুরি করা অর্থ নিয়ে আসবে, তাদের যদি মাত্র ১৫ শতাংশ কর দিতে হয়- তাহলে নিয়মিত করদাতাদের ওপর অন্যায্য সিদ্ধান্ত হবে।’
স্বাধীনতার পর অনেকবারই কালোটাকা বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। ১৯৭১-৭৫ সাল পর্যন্ত দুই কোটি ২৫ লাখ টাকা সাদা করা হয়। সেখান থেকে তৎকালীন সময়ে সরকার মাত্র ১৯ লাখ টাকা আয়কর পায়।